27 C
আবহাওয়া
৬:০৪ অপরাহ্ণ - জানুয়ারি ১৬, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » ১৭ বছর পর মুক্ত আকাশে বাবর!

১৭ বছর পর মুক্ত আকাশে বাবর!


বিএনএ ডেস্ক :১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় ২০০৪ সালের ৩ এপ্রিল কর্ণফুলী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহাদুর রহমান বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন। তবে এজাহারে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। পরবর্তীতে দুই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডি পুলিশকে। ২০০৪ সালের ১১ জুন প্রথম দফা ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলার অধিকতর তদন্তের আবেদন করে।

YouTube player

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করে। ওই  আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছর ২০০৭ এর ২৫শে আগস্ট সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ মামলা দুটির অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২৬  জুন নতুন করে বাবর, নিজামীসহ ১১ জনকে জড়িত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অস্ত্র আটক মামলায় ৫০ জন এবং চোরাচালান আইনে ৫২ জনকে আসামি করা হয়।

২০০৫ সালের ৬ জুলাই এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এস. এম. মজিবুর রহমান মামলার রায় ঘোষণা করেন। আদালত সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করে।

দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মানবতা বিরোধী অপরাধে মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। শ্রমিক সরবরাহকারী দীন মুহাম্মদ এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের -এনএসআই সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। পলাতক উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া মিয়ানমার -চীন সীমান্তের কাছে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করছেন।

অভিযোগ আছে, ভারতের ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম যা সংক্ষেপে ‘উলফা’ নামে পরিচিত বিচ্ছন্নতাবাদী সংগঠন চোরাচালানের মাধ্যমে এই অস্ত্র আনে। এই অস্ত্র সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের আসামে যাওয়ার কথা ছিল। তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ ও সরকারী গোয়েন্দাগণ এই চোরাচালানের বিষয়ে অবহিত ছিলেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ধরা পড়া অস্ত্র চোরাচালানের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ পরিমাণ। আটককালে চোরাচালনের মোট ৪৬৩টি বাক্স অস্ত্রসহ উদ্ধার করা হয় যেগুলির মধ্যে ছিল এমটিটি, এসএমজি, টমিগান ৭৯০টি, গ্রেনেড ২৭ হাজার, রকেট লঞ্চার ১৫০, ম্যাগজিন ৬২০ এবং ১১ লাখ ৪৩ হাজার ৫২০টি গুলি। এগুলির আনুমানিক মূল্য ২৭ হাজার কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন  হওয়ার পর থেকে কারাগারে আটক ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর ।২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  বিএনপি তাকে মনোনয়ন দেননি। বাবর কারাগারে থাকা অবস্থায় নেত্রকোণা-৪ আসন থেকে আনারস প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে হেরে যান।

গত ১৪ জানুয়ারি বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরীন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদন্ডের সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর খালাস পেয়েছেন , ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, সিইউএফএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক প্রশাসন কে এম এনামুল হক, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নুরুল আমিন,। তবে পরেশ বড়ুয়া ১৪ বছর ও ১০ বছর করে আকবর হোসেন, লিয়াকত হোসেন, হাফিজুর রহমান, শাহাবুদ্দিনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে

২০০৪ সালে ২রা এপ্রিল সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের পর চট্টগ্রামে এসে কে বা কারা এই অস্ত্র এনেছেন তা খুঁজে বের করার জন্য নির্দেশনা দিয়ে হেলিকাপ্টারে উড়ে  ঢাকা চলে যান । কিন্তু  নিয়তির নির্মম পরিহাস পরবর্তীতে ওই অস্ত্র মামলায় তিনিই আসামী হন এবং তার ফাঁসির আদেশ হয়। ২০১৪ সালের ৩০  জানুয়ারি রাত থেকে তার বসত হয় কনডেম সেল। গত বছরের ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর লুৎফুজ্জামান বাবরের মুক্তি পাওয়ার পথ সুগম হয়। অবশেষে দীর্ঘ ১৭ বছর পর  বৃহস্পতিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে  মুক্তি পেয়েছেন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত-সমালোচিত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব

Loading


শিরোনাম বিএনএ