26 C
আবহাওয়া
১১:৩২ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হালচাল: পঞ্চগড়-২

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হালচাল: পঞ্চগড়-২


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী হালচাল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। আজ থাকছে পঞ্চগড়- ২ আসনের হালচাল।

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শেষ প্রান্তের জেলা পঞ্চগড়। এ জেলার দেবীগঞ্জ ও বোদা উপজেলা নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়-২ সংসদীয় আসনটি জাতীয় সংসদেরও ২ নম্বর আসন ।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি ছিল রংপুর-২ নামে চিহ্নিত। নির্বাচনে ভোটার ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৪ শত ৫৬ জন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আফসার আলী আহমেদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৫ হাজার ২ শত ২৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ ভাসানীর আহসান আহমেদ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১৮ হাজার ৪ শত ৭২ ভোট।

১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি দিনাজপুর -২ নামে পরিচিত ছিল। ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৩ ভোটারের মধ্যে ৬৬ হাজার ২ শত ৭০ জন ভোটাধিকার প্রদান করেন। আওয়ামী লীগের এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৫ হাজার ৮ শত ৯৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সিরাজুল করিম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৪ হাজার ৭ শত ৮৯ ভোট।

১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর ২ আসনটি পঞ্চগড় ২ আসন হিসেবে নির্বাচন কমিশন চিহ্নিত করে। নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ বিজয়ী হন। কাস্তে প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৯ শত ৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম। তিনি পান ১১ হাজার ১ শত ৬ ভোট।

১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি, জামায়াত ইসলামীসহ প্রধান বিরোধীদল গুলো অংশ নেয়নি। জাতীয় পার্টি, ফ্রিডম পার্টিসহ কিছু অখ্যাত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। জাতীয় পার্টির কামিজ উদ্দিন প্রধান বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১৯ হাজার ১ শত ১৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এম. হাফিজুর রহমান। তিনি পান ৭ হাজার ৪ শত ৬৩ ভোট।

তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে পঞ্চগড় দুই আসন থেকে বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির মোজাহের হোসেন বিজয়ী হন। ‘তারা’ প্রতীক নিয়ে তিনি পান ৪২ হাজার ৩শত ৩৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির কামিজ উদ্দিন প্রধান। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২৫ হাজার ৬ শত ৬০ ভোট।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র মোজাহার হোসেন বিজয়ী হন। ‘ধানের শীর্ষ’ প্রতীকে তিনি পান ৪৮ হাজার ৫শত ৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সিরাজুল ইসলাম। ‘নৌকা’ প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ৮ শত ১৫ ভোট।

২০০১ সালে ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র মোজাহার হোসেন বিজয়ী হন। ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে তিনি পান ৮৩ হাজার ৬ শত ৫৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম সুজন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৯ হাজার ৬ শত ২ ভোট।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম সুজন বিজয়ী হন। ‘নৌকা’ প্রতীকে তিন পান ১ লাখ ৪২ হাজার ৪ শত ৮৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন বিএনপি’র মোজাহের হোসেন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯১ হাজার ৭ শত ভোট।

২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম সুজন বিজয়ী হন। ‘নৌকা’ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাসদের এমরান আল আমীন। ‘মশাল’ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৭ হাজার ২ শত ৯২ ভোট। এ নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াতসহ ২০ দলীয় ঐক্যজোটের শরিক দলগুলো অংশ নেয়নি।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড় ২ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ, ৩৪ হাজার ৮ শত ৬৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৬৭ হাজার ৬ শত ৪৪ জন। নারী ১লাখ ৬৭ হাজার ২শত ২১ জন।আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম সুজন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫ শত ১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি’র ফরহাদ হোসেন আজাদ। ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১১ হাজার ৯৫ ভোট।

এ ছাড়া ‘কাস্তে’ প্রতীকে সিপিবি’র আশরাফুল আলম, ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে জাতীয় পার্টির লুৎফর রহমান রিপন, ‘হুক্কা’ প্রতীকে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির তাসমিমা প্রধান, ‘আম’ প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফয়জুর রহমান মিঠু, ‘হাতপাখা’ প্রতীকে কামরুল হাসান প্রধান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করেন। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট কারচুপির অভিযোগে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চগড়-২ আসনে ১৯৭৩ সালের প্রথম, ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে সিপিবি, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী বিজয়ী হয়।
১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিপিবি প্রার্থী বিজয়ী হয়।২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয় বিএনপি প্রার্থী। কিন্তু বিএনপি তার অবস্থান ধরে রাখে পারেনি। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ প্রার্থী। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের দশম, ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি ধরে রেখেছে। এ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজন বর্তমানে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

মাঠ পর্যায়ের জরিপে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-২ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে সরাসরি ভোটের লড়াই হবে। হিমালয়ের পাদদেশের এ আসন থেকে দ্বাদশ সংসদে ‘কে’ প্রতিনিধিত্ব করবেন তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে নানা হিসেব-নিকেশ চলছে।

বিএনএনিউজ/ শিরীন  সুলতানা , রেহেনা ইয়াসমিন, ওয়াইএইচ 

Loading


শিরোনাম বিএনএ