আদালত প্রতিবেদক : ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা না নিতে পুলিশকে রায়ের পর্যবেক্ষনে পরামর্শ দেয়া ‘ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৭-এর বিচারক বেগম মোসা. কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা রোববার(১৪নভেম্বর) সকালে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’ সেই সঙ্গে এই বিচারককে রোববার সকাল থেকে আর আদালতে না বসার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
সুপ্রিমকোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান রোববার(১৪নভেম্বর) সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
এতে বলা হয়, সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারকদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
‘তার ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে তাকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট হতে অদ্য ৯:৩০ ঘটিকায় আইন মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।’
এরআগে রাজধানীর বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলার বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেয়া হবে বলে শনিবার(১৩নভেম্বর) জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।তিনি বলেন, সে রায়ে বিচারকের পর্যবেক্ষণ ছিল বেআইনি ও অসাংবিধানিক।
গত ১১ নভেম্বর দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের মামলার রায় ঘোষণার পর রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, মামলার দুই ভিকটিম আগে থেকেই সেক্সুয়াল কাজে অভ্যস্ত। তারা স্বেচ্ছায় হোটেলে গিয়েছেন। সেখানে গিয়ে সুইমিং করেছেন। ঘটনার ৩৮ দিন পর তারা বললেন, ‘আমরা ধর্ষণের শিকার হয়েছি’। অহেতুক তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন। এতে আদালতের ৯৪ কার্যদিবস নষ্ট হয়েছে। এরপর থেকে পুলিশকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এ ছাড়া এরপর থেকে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর যদি কেউ মামলা করতে যায়- তা না নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশকে মামলা না নিতে বিচারিক আদালতের রায়ের সুপারিশের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর মতামত জানতে চাওয়া হলে শনিবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমি উনার রায়ের বিষয়বস্তু নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। অবজারভেশনে (৭২ ঘণ্টা পরে পুলিশ যেন কোনো ধর্ষণ মামলার এজাহার না নেয়) উনি যে বক্তব্য দিয়েছেন এ সম্পর্কে আমি বলতে পারি, এটা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অসাংবিধানিক। এই কারণে প্রধান বিচারপতির কাছে বিচারক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন নিয়ে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেজন্য একটা চিঠি লিখছি। এ বিষয়ে ওই বিচারককে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
আরও পড়ুন :
বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলার রায়ে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার(১১ নভেম্বর) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম কামরুন্নাহার এ রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেয়া হয়।
মামলার অপর আসামিরা হলেন— সাফাতের দুই বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম ও সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী।
২০১৭ সালের ৭ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। ওই বছরের ১৯ জুন একই ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
অভিযোগপত্রে, আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া মামলার অন্য তিন আসামি সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ওই আইনের ৩০ ধারায় ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত অভিযুক্তরা মামলার বাদী, তার বান্ধবী ও বন্ধুকে আটকে রাখে। অস্ত্র দেখিয়ে ভয় প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাদী ও তার বান্ধবীকে জোর করে একটি কক্ষে নিয়ে যায় আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ ও তার বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সাদমান সাকিফকে দুই বছর ধরে চেনেন মামলার বাদী। তার মাধ্যমেই ঘটনার ১০ থেকে ১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে দুই শিক্ষার্থীর পরিচয় হয়। ওই দুই শিক্ষার্থী সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যান। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী তাদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডে রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যান। হোটেলে যাওয়ার আগে বাদী ও তার বান্ধবী জানতেন না যে, সেখানে পার্টি হবে। তাদের বলা হয়েছিল,এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। অনুষ্ঠান হবে হোটেলের ছাদে।
সেখানে যাওয়ার পর তারা কাউকে দেখেননি। সেখানে আরও দুই তরুণী ছিলেন। বাদী ও তার বান্ধবী সাফাত ও নাঈমকে ওই দুই তরুণীকে ছাদ থেকে নিচে নিয়ে যেতে দেখেন। এ সময় বাদীর বন্ধু ও আরেক বান্ধবী ছাদে আসেন। পরিবেশ ভালো না লাগায় তারা চলে যেতে চান। এ সময় অভিযুক্তরা তাদের গাড়ির চাবি শাহরিয়ারের কাছ থেকে নিয়ে নেয় এবং তাকে মারধর করেন। ধর্ষণের সময় গাড়িচালককে ভিডিও করতে বলেন সাফাত। বাদীকে নাঈম আশরাফ মারধর করেন।
বিএনএনিউজ২৪,জিএন