মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ১ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার আগে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে পদত্যাগ করতে হুমকি দিয়েছিল। দুজন জেনারেল তার সরকারি বাসভবনে গিয়ে স্বাস্থ্যগত কারণে ৬৯বছর বয়সী মিন্টকে পদত্যাগ করার চাপ দেন। সে সময় বর্তমানে কারাবন্দী ও বিচারের মুখোমুখি দেশটির সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, জেনারেলদের স্পষ্ট জানিয়েদেন যে, তিনি মরতে রাজি আছেন, তবুও পদত্যাগ করবেন না।
প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট
বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, গত মঙ্গলবার(১২ অক্টোবর) মিয়ানমারের রাজধানী নেপি দয়ের একটি আদালতে বিচারকের সামনে সাবেক প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট উপরোক্ত তথ্য প্রকা|শ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক প্রেসিডেন্ট এর একজন আইনজীবী বলেন, “প্রেসিডেন্ট তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তিনি সুস্থ আছেন। “অফিসাররা তাকে সতর্ক করেছিল যে অস্বীকার করলে তার অনেক ক্ষতি হবে কিন্তু তিনি তাদের বলেছিলেন তিনি মরতে রাজি আছেন, তবুও পদত্যাগ করবেন না।”
সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেলদের বলেছিলেন যে তাদের আইন অনুসারে বিষয়গুলি পরিচালনা করা উচিত এবং অভ্যুত্থান করা উচিত নয়।
জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনের উস্কানিমূলক অভিযোগের বিরুদ্ধে আদালতে আত্মরক্ষার পক্ষে অবস্থান নেয়ার সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট এই সব কথা বলেন।
এক মামলায় তিন নেতাকে আসামি
যে মামলায় সাবেক প্রেসিডেন্টকে আদালতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, সে একই মামলায় মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চিকে এবং রাজধানীর মেয়র মায়ো অংকেও আসামী করা হয়েছে।
গত ৭ফেব্রুয়ারি ও ১৩ ফেব্রুয়ারি অংসান সুচির দল দুটি বিবৃতির মাধ্যমে জান্তার বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনের ডাক দেয়ার অপরাধে ওই সব নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
সাবেক প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এর আইনজীবী আদালতে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট মিন্ট এবং স্টেট কাউন্সিলর সুচি ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কারা বন্দী। দলের বিবৃতির সঙ্গে তাদের নূন্যতম সম্পর্ক নেই। তাদেরকে সে সব বিষয়ে কোন কিছু অবহিত করারও হয় নি।
নির্বাচিত সরকারের প্রেসিডেন্ট ও স্টেট কাউন্সিলরকে সেনাবাহিনী ৩১ জানুয়ারি রাতের অন্ধকারে আটক করে এবং প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট লে.জে.মিন্ট সহইকে অস্থায়ী নিযুক্ত করে। ১ ফেব্রুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। পরে লে.জে.মিন্ট সহই দেশটির সেনা প্রধান মিন অং হ্লাংয়ের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
আরও পড়ুন : জান্তা নেতাদের বয়কট করছে আসিয়ান
পরে জান্তা সরকার ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রোসি(এনএলডি) নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের শুরু করে।
মঙ্গলবার আদালতে সরকারের কৌশুলী মিয়ানমারের সাবেক প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে পাল্টা সরকার গঠনের (এনইউজি) এবং সরকারের সৈন্যদের মোকাবেলায় পিপলস ডিফেন্স ফোর্স(পিডিএফ) গঠন করার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এর আইনজীবী সে সব বিষয়ে সাবেক প্রেসিডেন্টের সম্পৃক্ততার বিষয় আদালতে অস্বীকার করেন।
আরও পড়ুন : মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষ, ৩০ সেনা নিহত
মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেট ও মোবাইল নেট, নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় এবং সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারায় যে কোন সংবাদ দ্রুত পাওয়া এবং তা ভেরিফাই করা খুবই দুরুহ ব্যাপার। তারপরও মিয়ানমার নাও গণমাধ্যমটি অনেক সতর্কতা অবলম্বন করে খবর ও তথ্য সংগ্রহ এবং যাচাই করার চেষ্টা করছে। মিয়ানমারের অসংখ্য অনলাইন মিডিয়া জান্তা সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। জান্তা বিরো|ধী তীব্র গণ আন্দোলন এখন অনেকটা সশস্ত্র আন্দোলনে রুপ নিয়েছে। প্রতিদিনই সরকারী সৈন্য ও বিরোধী দলীয় বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কোথাও কোথাও ব্যাপক সংঘর্ষ হচ্ছে। সরকার বিরোধী আন্দোলনে উপজাতি সশস্ত্র গ্রুপগুলো যোগ দেয়ায় দেশটিতে সংঘর্ষে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি সৈন্যরা বিভিন্ন প্রদেশে তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হচ্ছে।
বিএনএ নিউজ ২৪, এসজিএন