24 C
আবহাওয়া
৯:০৬ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » রাজশাহীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় শাহ মখদুম রূপোস(রহ)’র অবদান

রাজশাহীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় শাহ মখদুম রূপোস(রহ)’র অবদান

শাহ মখদুম রূপোস(রহ.)

।।সিরাজুল আরেফীন চৌধুরী।।

ত্রয়োদশ শতকের কথা। মহাকালগড় অঞ্চলের (বর্তমান রাজশাহী) মানুষ কুসংস্কার ও অপপ্রথার মধ্যে ডুবে ছিল। দেব-দেবীর নামে দেয়া হতো নরবলি! মানুষে মানুষে বিরাজমান ছিল চরম বৈষম্য! অমাবস্যার রাতে মহা ধুমধামে আয়োজন হত নরবলির। তালে তালে গান আর ধূপ-ধুনোর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে উঠতো পরিবেশ। গভীর রাতে চোখ বেঁধে নিয়ে আসা হতো হতভাগাদের। হাত বাধা থাকতো পেছনে। ঢোল বেজে উঠতো আরো তীব্র গতিতে। লাল গাঁদা ফুল দিয়ে সাজানো বেদীতে টেনে ফেলা হতো হতভাগাকে। মাথা দুই স্তম্ভের মাঝে। পেছন থেকে হাত চেপে ধরত দুইজন। বাজনার শব্দ চরমে। মশাল জ্বলতে থাকে দাও দাও। জল্লাদ উপস্থিত। হাতে চকচকে ধারালো খড়গ। তন্ত্রসাধকের কন্ঠে উচ্চস্বরে চলত মন্ত্র পাঠ। জল্লাদ উঁচুতে তুলতো খড়গ। নামিয়ে দিত ক্ষীপ্রভাবে। চোখের পলকে মাথা থেকে ধর আলাদা। তেজোদ্দীপ্ত রক্তের ধারা বয়ে চলত। জীবন্ত নরগুলো উল্লাসে ফেটে পড়তো!

৭৩৫ বছর পূর্বে রাজশাহী অঞ্চলে ইসলামের বাণী প্রতিষ্ঠা করেন শাহ মখদুম রূপোস রহ. (১২১৬-১৩১৩ খ্রি.)।

১২৮৯ সালের দিকে। শাহ মখদুম রূপোস (রহ.) নোয়াখালীতে ব্যস্ত ছিলেন ইসলাম প্রচারে। ইতিপূর্বে হযরত তুরকান শাহ এবং অন্যান্য দরবেশগণ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এসেছিলেন মহাকালগড়ে। বর্মাভোজ ও খেরজুর চাঁদের বাহিনীর হাতে শহীদ হলেন তুরকান শাহ। খবর পেয়ে মখদুম শাহ গেলেন রাজশাহীতে। টানা চারবার যুদ্ধ করে বর্তমান ঘোড়ামারা জয় লাভ করেন। মারা গিয়েছিল শত শত ঘোড়া। ঘোড়ামারা নামটি এসেছিল এভাবে। প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলাম। শেষ হয় নরবলি প্রথা। প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তি। বদলাতে থাকে মহাকালগড়। নাম বদলে হয় বোয়ালিয়া। ১৯২৯ সালে স্থাপিত হয় রেলপথ। পরবর্তীতে নাম দেয়া হয় রাজশাহী।

বাংলাদেশের জমিনে কোন নবী-রাসুল আসেননি। আউলিয়া সুফিদের মাধ্যমে এদেশে ইসলাম প্রচারিত হয়। তাদের উদারতা, মহত্ত্ব, চারিত্রিক মাধুর্য দেখে দলে দলে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। হযরত শাহ মখদুম রূপোস (রহ.) ছিলেন এমন একজন আল্লাহর অলি। শাহ মখদুমের প্রকৃত নাম আব্দুল কুদ্দুস।

শাহ মখদুম রূপোস ৬১৫ হিজরির ০২ রজব বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম হযরত সৈয়দ আব্দুল কুদ্দুস। রূপোস তার উপাধি। তিনি ছিলেন বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-র পুত্র হযরত আজাল্লাহ শাহে (রহ.)-র দ্বিতীয় পুত্র। বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) ছিলেন অলিকুল সম্রাট, শরীয়ত ও তরিকতের মহান পথপ্রদর্শক, কাদেরিয়া তরিকার প্রবর্তক। পিতা-মাতা উভয়ের দিক থেকে তিনি নবী মুহাম্মদ (দ.)-র বংশধর।

তিনি এমন একজন ব্যক্তিত্ব যার শিক্ষা ও আদর্শ যুগে যগে ইসলাম ও মুসলমানদের সঠিক পথের দিশা দিয়ে আসছে। ১২৫৯ খ্রিস্টাব্দে হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ করলে শাহ মখদুম রূপোস (রহ.) পিতা আযাল্লাহ শাহ-র সাথে দিল্লি আগমন করেন।

হযরত আযাল্লাহ শাহ-র চরিত্র ও গুণাবলীতে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন দিল্লির সম্রাট ফিরোজ শাহ তাঁর কাছে বায়াত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আজাল্লাহ শাহ (রহ.) বাগদাদে ফিরে গেলেও ১২৮৯ খ্রিস্টাব্দে শাহ মখদুম রূপোস (রহ.) ইসলাম প্রচারের জন্য বাংলার জমিনে আগমন করেন।

কথিত আছে কুমির, বাঘ, সিংহ এবং আকাশ পথে বসার পিঁড়ি ওনার চলাফেরার বাহন ছিল। কুমিরের নাম ছিল বোচা ও বুচি। এই কুমিরে চড়ে তিনি জলপথে যাতায়াত করতেন। কুমির দুটি মহাকাল দিঘিতে থাকতো। নাম ধরে ডাকলে তারা উঠে আসতো। মানুষের মধ্যে থাকতে থাকতে এগুলো গৃহপালিত পশুর ন্যায় হয়ে গিয়েছিল। বাচ্চারা এদের পিঠে বসে খেলা করত। তাঁর মাজার প্রাঙ্গনে এ কুমিরের কবর আছে। শাহ মখদুম রূপোস (রহ.)-র চারিত্রিক সৌন্দর্য ও অলৌকিক কারামত দেখে দলে দলে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিল।

তিনি ৭৩১ হিজরীতে ২৭শে রজব ১৩১৩ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। রাজশাহী কলেজের পশ্চিম পার্শ্বে, পদ্মার তীরে তাঁর মাজার অবস্থিত। ইন্তেকালের পরেও তার মাজারকে কেন্দ্র করে তাঁর অনুসারীদের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার অব্যাহত ছিল। মকদুম শাহ (রহ.) এর জীবনী নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেন লেখক বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া। গ্রন্থের নাম- হযরত মকদুম শাহ (রহ.) এর জীবনী, কবর জিয়ারত ও ইসলামী জিন্দেগীর রূপরেখা।

সিরাজুল আরেফীন চৌধুরী
সিরাজুল আরেফীন চৌধুরী

লেখক : সহকারী অধ্যাপক (দর্শন), বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)

Loading


শিরোনাম বিএনএ