35 C
আবহাওয়া
১:৪৪ অপরাহ্ণ - মে ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৬ (গোপালগঞ্জ-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৬ (গোপালগঞ্জ-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৬ (গোপালগঞ্জ-২

বিএনএ,ঢাকা:  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে গোপালগঞ্জ-২ আসনের হালচাল।

YouTube player

গোপালগঞ্জ-২ আসন 

গোপালগঞ্জ-২ সংসদীয় আসনটি গোপালগঞ্জ সদর এবং কাশিয়ানী উপজেলার সিঙ্গা, হাতিয়াড়া, পুইশুর, বেথুড়ী, নিজামকান্দি, ওড়াকান্দি ও ফুকরা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২১৬ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫ শত ৯৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২২ হাজার ৭ শত ৩১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৩ হাজার ১৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯ হাজার ৬ শত ৬১ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: কাউকে নির্বাচিত ঘোষনা করেনি নির্বাচন কমিশন

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচন পন্ড হয়ে যাওয়ায় ফলে এ আসনে কাউকে নির্বাচিত ঘোষনা করেনি নির্বাচন কমিশন। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫ শত ৪৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ২ শত ৭৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১লাখ ১৫ হাজার ৩২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭ হাজার ৮ শত ২৫ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৩ শত ২০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪ শত ৮৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮ শত ২১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শেখ সাইফুর রহমান । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮ হাজার ১ শত ৬৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৬ শত ৮০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ২৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪ শত ৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭ হাজার ৬ শত ৮০ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৯ হাজার ৩ শত ৭০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩ শত ৯৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫ শত ৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির কাজী শাহিন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৪ হাজার ৮৪ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন:  আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৮ শত ৬৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭ শত ৪৯ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম , ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের তসলিম শিকদার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৮১ হাজার ৯ শত ৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এর তসলিম শিকদার। হাতপাখা প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৬ শত ৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন পন্ড হয়ে যায় এবং পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ,নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর গোপালগঞ্জ-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গোপালগঞ্জ-২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৮.২১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৭৫.৭৯%, বিএনপি ৭.৮৭%, জাতীয় পার্টি ০.৪৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৫.৮৬% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৫.০৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৮৬.৩১%, বিএনপি ৫.৮৭% জাতীয় পাটি ২.৯৮%, জামায়াত ইসলামী ১.৮৩% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.০১% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.১৭ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৯৪.০৯%, ৪ দলীয় জোট ৪.১৩%, জাতীয় পার্টি ০.৪৬ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৩২% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.৩৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৯৪.৫৮%, ৪ দলীয় জোট ৩.৮৭% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৫৫% ভোট পায়।

গোপালগঞ্জ-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এই হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রাফিকুজ্জামান এবং বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. কে এম বাবর।

এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তসলিম হুসাইন শিকদার, গোপালগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী শাহিন এবং জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা জাসদের সভাপতি শেখ মাসুদুর রহমান স্ব স্ব দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গোপালগঞ্জ-২ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এই আসন থেকে সর্বোচ্চ আটবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড গড়েন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগনে। আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই সেলিমের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে রয়েছে গভীর যোগাযোগ ও সম্পর্ক। এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। প্রধান প্রতিদ্বন্ধী  বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতা কাগজে কলমে। দলীয় কোন অফিসও নেই!

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২১৬তম সংসদীয় আসন (গোপালগঞ্জ-২) আসনটিতে আওয়ামী লীগ হেসে-খেলে বিজয়ী হবেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৫ (গোপালগঞ্জ-১)

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ