26 C
আবহাওয়া
১১:২১ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৫ (গোপালগঞ্জ-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৫ (গোপালগঞ্জ-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল সংসদীয় আসন-২১৫ (গোপালগঞ্জ-১)

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে গোপালগঞ্জ-১ আসনের হালচাল।

গোপালগঞ্জ-১ আসন

গোপালগঞ্জ- ১ সংসদীয় আসনটি মুকসুদপুর উপজেলা এবং কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর, পারুলিয়া, মাহমুদপুর, সাজাইল, রাতাইল ও রাজপাট ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২১৫তম আসন।

YouTube player

 

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের কাজী আবদুর রশিদ বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৮ শত ৪০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২১ হাজার ৭ শত ৫৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাজী আবদুর রশিদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৯ হাজার ২ শত ১৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বাকশালের মুকুল চন্দ্র বসু। তিনি পান ১৪ হাজার ৬ শত ২ ভোট।

ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীরকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীরকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩ শত ৫০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫ শত ৫৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৯ হাজার ৫ শত ৩৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর একে ইমদাদুল হক। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৫ হাজার ২ শত ৩৬ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৬ হাজার ৮ শত ৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ১ শত ৮৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩ শত ৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির খন্দকার মহাব্বত জান চৌধুরী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২০ হাজার ১ শত ৩৬ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪২ হাজার ১ শত ৫২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩ হাজার ৯ শত ৮২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮৩ হাজার ২শত ৩৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মো. সলিমুজ্জামান মোল্লা। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯ হাজার ৯ শত ৮৬ ভোট।

দশম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫ শত ৭৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৮ হাজার ১ শত ৯৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৪০ হাজার ৩ শত ৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির দীপা মজুমদার। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫ হাজার ৮ শত ৬৩ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে র্নিবাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ৪ শত ৫২ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৫ হাজার ১ শত ১২ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মুহাম্মদ ফারুক খান, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির এফ ই শরফুজ্জামান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং মই প্রতীকে সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের ইছাহাক মোল্যা প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান ফারুক খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ৩ হাজার ১ শত ৭০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এফ ই শরফুজ্জামান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৫৭ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর গোপালগঞ্জ-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গোপালগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫২.৭৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৬৫.০৬%, বিএনপি ৯.১৫%, জাতীয় পার্টি ০.৫৪%, জামায়াতে ইসলামী ১১.৪৯% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৩.৭৬% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৩.৪২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৮৬.৯০%, বিএনপি ৩.৫৭% জাতীয় পার্টি ২.৫৫%, জামায়াতে ইসলামী ৩.৮১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.১৭% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭২.১১ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৭৮.৫১%, ৪ দলীয় জোট ১০.৮৭%, জাতীয় পার্টি ০.৪৫ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১০.১৭% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.০৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৮৯.৪৫%, ৪ দলীয় জোট ৪.৮৭% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৬৮% ভোট পায়।

গোপালগঞ্জ-১ (কাশিয়ানী-মুকসুদপুর) এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। ফারুক খান ছাড়াও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য উম্মে রাজিয়া কাজল, উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফা রহমান রুমা, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা আতিয়ার রহমান দিপু, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সহসম্পাদক ও গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খন্দকার মনজুরুল হক লাবলু।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা সেলিমুজ্জামান সেলিম, সাবেক সংসদ সদস্য এফ ই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর ও গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জু।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন কাশিয়ানী উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল মান্নান শেখ মুন্নু।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে আছেন ইসলামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা মিজান মুন্সী। এ ছাড়া মুকসুদপুর উপজেলা জাসদ-ইনু সভাপতি ফায়েকুজ্জামান দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর জন্ম গোপালগঞ্জ জেলায়। সেকারণে পুরো জেলায় রয়েছে আওয়ামী লীগের একক রাজত্ব। গোপালগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনটি তার ব্যতিক্রম নয়। আওয়ামী লীগ এই আসনে সুসংগঠিত। তা ছাড়া ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে ভোটারদের আস্থায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। সেই তুলনায় বিএনপির অবস্থা উল্টো। বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। দলীয় কর্মসূচীগুলোও যথাযথভাবে পালিত হয় না। তবে প্রচুর নিরব ভোট রয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২১৫ তম সংসদীয় আসন (গোপালগঞ্জ-৩) আসনটিতে আওয়ামী লীগ আবারও বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। অন্যদের জানার সুযোগ দিন। প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে প্রচারিত আসনভিত্তিক গবেষণামূলক প্রতিবেদনগুলো দেখুন এবং নিজের রাজনৈতিক জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করুন। লাইক, কমেন্ট, ও সাবস্ক্রাইব করে ‘বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর’ এর সঙ্গে থাকুন।

আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৪ (ফরিদপুর-৪)

বিএনএনিউজ/ শাম্মী, রেহানা, বিএম, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ