বিএনএ, ঢাকা : ঢাকা টেস্টে তৃতীয় দিন শেষে ১৫৪ রানে এগিয়ে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ইনিংসে ৪০৯ রান করে ক্যারিবীয়রা। জবাবে ২৯৬ রান করে অলআউট হয় স্বাগতিকরা। এতে প্রথম ইনিংসে ১১৩ রানে এগিয়ে থাকে সফরকারীরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৪১ রানে ৩ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে ১৫৪ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
তৃতীয় দিন : ১১৩ রানে পিছিয়ে থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে পাঠাল টাইগাররা। তৃতীয় দিন তৃতীয় সেশনে ৩.৩ ওভারে নাঈম হাসানের বলে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত হন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েইট। ১৩ বলে ১ চারে ৬ রান করেন তিনি। তার বিদায়ে দলের স্কোর ১১/১।
৪.৩ ওভারে মেহেদী হাসানের বলে মিঠুনের তালু বন্দি হনশায়নে মোসলে। ২০ বলে ৭ রান নেয় তিনি। ২ উইকেটে রান ২০। ৬ . ৪ ওভারে তাইজুল ইসলামের বোল্ড আউট হন ক্যাম্ববেল। ৪৮ বলে ১৮ রান করেন ক্যাম্ববেল। ৩ উইকেটে দলের স্কোর ৩৯/৩। ৮ রানে বোনার ও ২ রানে ওয়ারিক্যান অপরাজিত আছেন । দিন শেষে ৩ উইকেটে ২১ ওভারে ৪১ রান করেছে সফরকারীরা।
এর আগে তৃতীয় দিনে ২৯৬ রানে থামল স্বাগতিকদের ব্যাটিং ইনিংস। শনিবার ( ১৩ ফেব্রুয়ারি) মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগের দিনের অপরাজিত মোহাম্মদ মিথুন রাহকিম কর্নওয়েলের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরলেও হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। এরপর অর্ধশতক আদায় করেন মেহেদি আর লিটন জুটি।
মুশফিক ৫৪ রানে ফিরে যাওয়ার পর লিটনের ৭১ আর মেহেদির ৫৭ রানে ভর করে দলীয় তিন শতকের আগেই গুটিয়ে যায় ব্যাটিং অর্ডার। তাইজুল ১৩ রানে অপরাজিত থাকলেও বাকি দুই টেইন এন্ডার ক্যারিবীয়দের সামনে কোন প্রতিরোধই গড়তে পারেননি।
দ্বিতীয় দিন : ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনে সমানে সমান ছিল দু-দলই। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেই পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছে ৪০৯ রানের বড় স্কোর। বাংলাদেশ ব্যাট করতে নেমে ১০৫ রান তুলতে হারিয়েছে ৪ উইকেট। দ্বিতীয় দিন শেষে ৩০৪ রানে পিছিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সব মিলিয়ে ঢাকা টেস্টে দ্বিতীয় দিনেই পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম দিন শেষে ৫ উইকেটে ২২৩ রান করেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এনক্রুমার বোনার ৭৪ ও উইকেটরক্ষক জসুয়া ডা সিলভা ২২ রানে অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের টার্গেট ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কম রানে আটকে ফেলা। কিন্তু সেটা পারেনি টাইগার বোলাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের স্কোরটা নিয়ে গেছে চারশত রানের উপরে। অনেকটা নিরাপদ স্কোরে। আবার ব্যাট করতে নেমেও ভালো করতে পারেনি টাইগার ব্যাটসম্যানরা। ১০৫ রান তুলতেই হারিয়েছে ৪ উইকেট। ব্যাট-বলে ভালো করতে না পারায় দ্বিতীয় দিনেই পিছিয়ে গড়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিনে ৭৪ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা বোনার আউট হয়েছেন ৯০ রানে। মেহেদি হাসান মিরাজের ডেলিভারি ফ্লিক করে স্লিপে মোহাম্মদ মিঠুনকে ক্যাচ দেন বোনার।
আউট হওয়ার আগে ২০৯ বলে ৭ চারে ৯০ রান করেন বোনার। সিলভার সাথে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৮৮ রান যোগ করেন বোনার। বোনার আউট হলেও আলজারি জোসেফকে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন সিলভা। দলের স্কোর সাড়ে তিনশও পার করেন তারা। তবে বোনারের মত হতাশায় পড়তে হয় তাকে। তাইজুলের ডেলিভারিতে বোল্ড হন সিলভা। ১৮৭ বলে ১০টি চারে ৯২ রান করেন তিনি। দলীয় ৩৮৪ রানে সিলভার আউটের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪০৯ রানে গুটিয়ে যায় তারা।
৮২ রান করা জোসেফ ও জোমেল ওয়ারিকানকে ২ রানে আউট করেন বাংলাদেশের পেসার আবু জায়েদ। আর শেষ ব্যাটসম্যান শ্যানন গাব্রিয়েলকে শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪০৯ রানে থামান তাইজুল। বাংলাদেশের পক্ষে আবু জায়েদ রাহি ও তাইজুল ৪টি করে উইকেট নেন। এছাড়া মিরাজ-সৌম্য সরকার ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪০৯ রানে অলআউট করে দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের টার্গেট ছিল উইকেট বাঁচিয়ে দ্বিতীয় দিনটি পার করে দেয়া। কিন্তু সেটা করতে পারেনি টাইগাররা। ওয়ানডে স্টাইলে খেলতে গিয়ে দ্বিতীয় দিনে ৭১ রানে প্রথম ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
শেষ পর্যন্ত মুশফিক আর মিঠুনের উপর ভর করে শতরান পার করে টাইগাররা। তামিমের সাথে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নেমে মোটেই ভালো করতে পারেননি সৌম্য সরকার। প্রায় দেড় বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম ওভারের শেষ বলে খালি হাতে উইকেট ছাড়েন সৌম্য। দলীয় ১ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার গাব্রিয়েলের শিকার হন তিনি। ওয়ান ডাউনে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খুলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু পরের বলে শান্তকে বিদায় দেন গাব্রিয়েলই। ফলে মাত্র ১১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে মোমিনুল হককে নিয়ে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং শুরু করেন ওপেনার তামিম ইকবাল। তামিম-মোমিনুলের ব্যাটে ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেস্টা করে বাংলাদেশ।
এই জুটির উপর ভর করে ফিফটি রান পার করে টাইগাররা। তবে দলীয় ৬৯ রানে মোমিনুলের বিদায়ে ভাংগে এই জুটি। ৪টি চারে ২১ রান করা মোমিনুলকে আউট করেন কর্নওয়াল। আর ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫২ বলে ৪৪ রান করে জোসেফের প্রথম শিকার হন তামিম। ফলে ৭১ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। তবে মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুনের উপর ভর করে ১০৪ রান করে দ্বিতীয় দিন পার করে বাংলাদেশ। মুশফিক ২৭ ও মিঠুন ৬ রানে অপরাজিত আছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের গাব্রিয়েল ২টি, কর্নওয়াল-জোসেফ ১টি করে উইকেট নেন। দ্বিতীয় মুশফিক-মিঠুনের উপর নির্ভর করতে বাংরাদেশ ইনিংসটি কতদুর নিতে পারবে।
প্রথম দিন : বৃহস্পতিবার ( ১১ ফেব্রূয়ারি) মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে করেছে ২২৩ রান। দলের পক্ষে ৭৪ রানে এনক্রুমা বোনার আর ২২ রানে জেসুয়া ডি সিলভা অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের জায়েদ-তাইজুল ২টি করে উইকেট নেন। পেসার সৌম্য ১টি উইকেট নেন। টেস্টের দ্বিতীয় দিনে হাতে ৫ উইকেট নিয়ে ব্যাট করতে নামে সফরকারীরা।
ঢাকা টেস্টে প্রথম দিনে তিন সেশনের দুটি সেশনে ভালো করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একটি সেশনে ভালো করেছে বাংলাদেশ। প্রথম সেশন আর শেষ সেশন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে দখলে। মাঝের সেশনটি ছিল বাংলাদেশের। মাঝের সেশনে ৬২ রান খরচায় তিনটি উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ দল। তবে প্রথম সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলেছে ৮৪ রান, বাংলাদেশ পেয়েছে ১ উইকেট। শেষ সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলেছে ৭৭ রান, বাংলাদেশ নিতে পেরেছে ১ মাত্র উইকেট। আগে ব্যাট করতে নেমে জন ক্যাম্ববেলকে নিয়ে দলকে দারুন সূচনা এনে দেন অধিনায়ক ক্রেইগ ব্যাথওয়েট। ১৫তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে দলের স্কোর হাফ-সেঞ্চুরিতে পৌছে দেন ব্র্য্যাথওয়েট। তবে ২১তম ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন বাঁ-স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তাইজুলের বলে এলবি আউট হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ক্যাম্পবেল ৬৮ বল খেলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৬ রান করেন। ক্যাম্ববেলের বিদায়ে তিন নম্বরে নামা শায়নে মোসলেকে নিয়ে দলের হাল ধরেন ব্র্যাথওয়েট।
তবে, বিরতির পর মোসলেকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পেসার জায়েদের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৩৮ বলে ৭ রান করেন মোসেলে। এরপর ক্রিজে ওপেনার ব্যাথওয়েটের সঙ্গী হন এনক্রুমার বোনার। বোনারকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেস্টা করেছিলেন ব্র্য্যাথওয়েট। সেই সাথে ব্যাথওয়েট হাফ- সেঞ্চুরির খুব কাছে পৌছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে হাফ সেঞ্চুরি করতে দেননি সৌম্য সরকার। নিজের তৃতীয় ওভারেই ব্র্যাথওয়েটের মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানকে শিকার করেন সৌম্য। নাজমুল হোসেন শান্তকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৪৭ রান করেন ব্র্যাথওয়েট।
তার ১২২ বলের ইনিংসে ৪টি চার ছিলো। এখানেই শেষ নয়। প্রথম টেস্টে ২১০ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ম্যাচ জেতানো কাইল মায়ার্সকে দাড়াতেই দেননি টাইগাররা। তাকে মাত্র ৫ রানের বেশি করতে দেননি আবু জায়েদ রাহি। ফলে ১১৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়ে ভালোই চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের এই চাপ কমাতে এনক্রুমার বোনার-জার্মেই ব্লাকউড জুটি করে দলকে চা-বিরতিতে নিয়ে যায়। চা বিরতি থেকে ফিরে ভালো অবস্থায় পৌঁছাতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে এই জুটিং ভাংগন ধরান তাইজুল ইসলাম। নিজের ডেলিভারিতে নিজেই ক্যাচ নিয়ে ব্ল্যাকউডকে থামান তাইজুল। আউট হওয়ার আগে ৫টি চারে ২৮ রান করেন ব্লাকউড।
দলীয় ১৭৮ রানে পঞ্চম উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন বোনার-উইকেটরক্ষক জসুয়া ডা সিলভা। দিন শেষে ৪৫ রানে অবিচ্ছিন্ন থাকে এই জুটি। ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন বোনার। ২০ রানে অপরাজিত থাকেন সিলভা। অবশ্য ১৪৬/৪ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় সেশন শেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ সেশনে এই ধারাটা অব্যাহত থাকলে দিনটা বাংলাদেশেরই হতে পারত। কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অসাধারণ এক ইনিংস খেলা এনক্রুমা বোনার ও উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জেসুয়া ডি সিলভা সেই সুযোগটা দেননি বাংলাদেশকে।
বিএনএ/আমিন