28 C
আবহাওয়া
৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ - জুলাই ২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কক্সবাজারে সুপেয় পানির তীব্র সংকট

কক্সবাজারে সুপেয় পানির তীব্র সংকট


।। এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন।।

বিএনএ, কক্সবাজার : খরা মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্বেই কক্সবাজারে পানীয় জলের তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। শুকিয়ে গেছে জেলার ১ লাখ ৩০ হাজার অগভীর নলকূপের পানি।

আর তীব্র গরমে পানি সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সংকট উত্তরণে সামুদ্রিক লোনাজলকে পরিশোধন করে স্বচ্ছ পানি সরবরাহের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর প্রকল্প গ্রহণের জন্য গবেষণা কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কক্সবাজারের সহকারী প্রকৌশলী মনজুর আলম। তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের পাশাপাশি অতিমাত্রায় ভূ-গর্ভের পানি উত্তোলনে জেলার বিভিন্ন স্থানে দিন দিন পানির স্তর ক্রমাগতভাবে নিচে নামছে।

জেলার অনেক এলাকায় নলকূপগুলোতে পানি ওঠা বন্ধ রয়েছে। পানি উঠছে না বৈদ্যুতিক মোটরেও। পানির জন্য গ্রামের পর গ্রামে লোকজনের মধ্যে হাহাকার চলছে। যে পাড়ার নলকূপে পানি উঠছে, সেখানে দূর-দূরান্ত থেকে এসে লাইন ধরে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন ভুক্তভোগীরা।

কক্সবাজার শহরে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে লবণাক্ততা। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব পড়ছে চরমভাবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পানিতে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া বেড়ে গিয়ে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন ডা, আবদুর রহমান।
সুপেয় পানি সংকট উদ্বেগজনক জানিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, কক্সবাজারে এই সংকট মোকাবিলায় তারা কাজ করছেন।

কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান জানান, বর্তমানে কক্সবাজারে তাপমাত্রা উঠানামা করছে ৩৯ দশমিক ৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয় সূত্রমতে, ২০১৭ সালে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জরুরি ভিত্তিতে পানি সরবরাহ করতে তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে তিন হাজার অগভীর, ৮০টি গভীর এবং এনজিও সংস্থা আরও ২০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করে। প্রতিদিন রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য ৩০ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। অতিমাত্রায় পানি উত্তোলন ও তীব্র গরমের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসানো ৯০ শতাংশ অগভীর নলকূপ থেকে এখন পানি উঠছে না।

টেকনাফের হ্নীলা, টেকনাফ সদর, বাহারছড়া, সাবরাং, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লেদা, দমদমিয়া এলাকায় সবচেয়ে বেশি সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে লবণাক্ততা।

উখিয়ায় দিন দিন পানির স্তর নিচে নামছে। কক্সবাজারের ঈদগাঁও সদর, পোকখালী, গোমাতলী, ইসলামপুরের অনেক নলকূপে পানি উঠছে না। অকেজো হয়ে গেছে অনেক বৈদ্যুতিক মোটরও।

কক্সবাজার শহরের নুরপাড়া, মাঝিরঘট, টেকপাড়া, নতুন বাহারছড়া, বদরমোকামসহ বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানের পানি পান তো দূরের কথা, গৃহস্থালি কাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা, ধরা কক্সবাজারের আহবায়ক ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে ধ্বংস করা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার একর বনভূমি। একইসঙ্গে প্রতিদিন ভূগর্ভ থেকে যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে মাটির নিচে সুপেয় পানি পাওয়া যাবে না। শুধু তাই নয়, বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি হওয়ায় বাড়ছে পানির লবণাক্ততা। এখান থেকে রক্ষা পেতে হলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

উখিয়া উপজেলা সদর রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকা এবং পাহাড়বেষ্টিত গ্রামগুলোতে সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। নলকূপ অকেজো হওয়ার পাশাপাশি অকেজো হয়ে গেছে অনেক বৈদ্যুতিক মোটরও।
একইভাবে পানি সংকট চলছে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপেও। পুরো শুকনা মৌসুমজুড়ে এটি চলমান থাকতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দ্বীপের বাসিন্দারা।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, লবণাক্ততা বাড়লে পান অযোগ্য পানিতে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া বেড়ে যেতে পারে। ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া বায়বীয় ও অবায়বীয় দুই অবস্থাতেই থাকতে পারে। এ ব্যাকটেরিয়ার কারণে মূত্রনালীতে সংক্রমণ, রক্তে বিষক্রিয়া, মেনিনজাইটিস টাইফয়েড, ডায়রিয়া, বমি ও রক্তযুক্ত মল, মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ এবং প্রচণ্ড জ্বর হতে পারে।

কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুপেয় পানি সংকট দূর করতে রেইন ওয়েটার হার্ভেস্টিং প্রকল্প চলমান। বিশেষ করে রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত উখিয়া-টেকনাফের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে উখিয়ার পালংখালীতে ৬০০ একর জমি লিজ নিতে প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, টেকনাফ, উখিয়া এবং কক্সবাজার শহর ও উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে এমন শঙ্কায় ওয়াটার-এনার্জি-লাইভলিহুড (ওয়েল) নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। চলমান রয়েছে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রকল্প। সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সুপেয় পানি সংকট দূর হবে। একইসঙ্গে সাগরের লবণাক্ত পানি পরিশোধন করে কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়েও পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে কয়েকদফা উচ্চ পর্যায়ের গবেষণা টীম কক্সবাজারের পানীয় জলের সংকট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন।

কক্সবাজার যেহেতু পর্যটন জোন, এখানে সারা বছর গড়ে লক্ষাধিক বহিরাগত লোকজন অবস্থান করেন। জেলার লোক সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ ও রোহিঙ্গা ১৪ লাখ সব মিলিয়ে ৪২ লাখ লোকের চাহিদা মেটাতে যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন তার ৩৫ শতাংশ পানি পাওয়া যাচ্ছে শুধু। আগামী দিনের চাহিদা মাথায় রেখে কক্সবাজারে সুপেয় পানির জন্য বৃহত্তর প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর নুরুল আবছার। একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ অনুযায়ী কক্সবাজার জেলায় সরকারি বেসরকারি ও এনজিও সংস্থার দেয়া গভীর অগভীর নলকূপ রয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার গভীর অগভীর নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

বিএনএনিউজ/এইচ.এম/হাসনা

Loading


শিরোনাম বিএনএ