24 C
আবহাওয়া
৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ - মে ৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৯ (গাইবান্ধা-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৯ (গাইবান্ধা-১)


বিএনএ,ঢাকা:  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্ঠা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে গাইবান্ধা-১ আসনের হালচাল।

গাইবান্ধা-১ আসন

গাইবান্ধা-১ সংসদীয় আসনটি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৯ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: গাইবান্ধা-১ আসন : জাতীয় পার্টির হাফিজুর রহমান প্রামানিক বিজয়ী

১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে গাইবান্ধা-১ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৩ শত ৫২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ হাজার ৭ শত ২৭ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হাফিজুর রহমান প্রামানিক বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ৭ শত ৭৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর মওলানা আব্দুল আজিজ । দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ২২ হাজার ৭ শত ৩২ ভোট।

৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন: কাউকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়নি

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি প্রতিরোধও করে। ফলে গাইবান্ধা-১ আসনে নির্বাচন পন্ড হয়ে যায়। ফলে এ সংসদীয় আসনে কাউকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়নি।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির ওয়াহেদুজ্জামান সরকার বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯২ হাজার ১ শত ৩৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৫ শত ৬৪ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ওয়াহেদুজ্জামান সরকার বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫৭ হাজার ৩ শত ১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর মওলানা আব্দুল আজিজ। দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৩৮ হাজার ১ শত ৪৫ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: জামায়াত ইসলামীর মওলানা আব্দুল আজিজ বিজয়ী 
২০০১ সালের ১ অক্টোবর  অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬০ হাজার ১ শত ৩১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৩ শত ৩৫ জন। নির্বাচনে জামায়াত ইসলামীর মওলানা আব্দুল আজিজ বিজয়ী হন। দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৭৫ হাজার ৪ শত ৭৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির ওয়াহেদুজ্জামান সরকার। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫৭ হাজার ৪৮ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির আব্দুল কাদের খান বিজয়ী

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯ শত ৭০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪ শত ৮৪ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আব্দুল কাদের খান বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬০ হাজার ৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর মওলানা অআব্দুল আজিজ । দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৭২ হাজার ৮৩ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন বিজয়ী
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯শত ৮ ভোট।নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির আব্দুল কাদের খান। তিনি পান ১৩ হাজার ৪৪ ভোট।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচন অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে।

YouTube player

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটেোয়ারী বিজয়ী

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩৯ হাজার ১ শত ৪৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭০ হাজার জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ১১ জন।
ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মাজেদুর রহমান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটেোয়ারী, বটগাছ প্রতীকে খেলাফত আন্দোলন হাফিজুর রহমান সর্দার, হারিকেন প্রতীকে মুসলিম লীগের গোলাম আহসান হাবিব মাসুদ, মই প্রতীকে বাসদের গোলাম রাব্বানী শাহ, কবুতর প্রতীকে গণতন্ত্রী পার্টির মোহাম্মদ শরীয়ত উল্লাহ প্রতিদ্বন্দ্বী করেন। এছাড়া আপেল প্রতীকে আফরুজা বারী, মটরগাড়ি প্রতীকে আব্দুল কাদের খান, কুড়াল প্রতীকে এমদাদুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্ধন্দ্বীতা করেন। আওয়ামী লীগ গাইবান্ধা ১ আসনে কোন প্রার্থী দেয়নি।
নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটেোয়ারী বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫ শত ৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মাজেদুর রহমান। ধানের শীর্ষ প্রতীকে তিনি পান ৬৫ হাজার ১ শত ৭৩ ভোট।
কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) সংসদীয় আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটেোয়ারী আবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জাতীয় পার্টি নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা মোহসীন সরদার।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায় আছেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বোন আফরুজা বারী। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার লেবু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল হান্নান, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফুল ইসলাম, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আতাউর রহমান মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ডা. জিয়াউল ইসলাম, সাবেক উপজেলা সভাপতি মোজাহারুল ইসলাম, বর্তমান উপজেলা আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইফতেখার হোসেন এবং সদস্যসচিব মাহমুদুল ইসলাম।
জামায়াতে ইসলামী জেলা সহ-সভাপতি মাজেদুর রহমান নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কুঁড়িগ্রাম ২ আসনে জাতীয় পার্টি পঞ্চম, সপ্তম, নবম, একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি, অষ্টম সংসদে জামায়াত ইসলামী, দশম সংসদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর গাইবান্ধা-১ আসনে ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান প্রদানের চেষ্ঠা করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৬.২৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৮.৭৭%, বিএনপি ৪.৪১ %, জাতীয় পার্টি ২৭.৪৮%, জামায়াত ইসলামী ২১.৭১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৭.৬৩% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৭.৪৩%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ২১.৯০ %, বিএনপি ২.২৫ %, জাতীয় পার্টি ৪৪.২৪%, জামায়াত ইসলামী ২৯.৪৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.১৭% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭০.৮৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫.০০%, ৪ দলীয় জোট ৪০.৯৫ %, জাতীয় পার্টি ৩০.৯৫%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.১০% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.২৫%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় মহাজোট ৬৭.৬৬%, ৪ দলীয় জোট ৩০.৪৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ১.৮৫% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গাইবান্ধা-১ আসনে সাংগঠনিক দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত নয়। জামায়াত ইসলামীর সংগঠনিক অবস্থা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চেয়ে ভাল। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলটির দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী নির্বাচন না করলে তাদের বিপুল ভোট বিএনপির ধানের শীষেই যাবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ২৯ নম্বর আসন, গাইবান্ধা-১ জাতীয় পার্টির প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

 

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ