বিএনএ ডেস্ক: প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ। নয়াদিল্লি থেকে আজ রোববার ঢাকা আসবেন তিনি। ফরাসি প্রেসিডেন্টের এ সফরে স্যাটেলাইটসহ দুটি সমঝোতা স্মারক ও একটি সম্মতিপত্র সইয়ের প্রস্তুতি রাখছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে দু’দিনের এ সফরে এমানুয়েল মাক্রোঁ আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। আজ সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক তাঁর সম্মানে একটি নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আগামীকাল সোমবার সকালে প্রথমে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে একটি শীর্ষ বৈঠক, দ্বিপক্ষীয় ইনস্ট্রুমেন্ট সই অনুষ্ঠান এবং একটি যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আগামীকাল অপরাহ্ণে তাঁকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদায় জানাবেন। এর আগে ৩৩ বছর আগে ১৯৯০ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
সফরকালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে অন্যদের মধ্যে থাকবেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে বলে আশা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এ সফরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত বেসামরিক বাঙালি ও অবাঙালিদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি করা জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন না ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট আসবেন সন্ধ্যার দিকে। ফলে বাংলাদেশের প্রটোকল অনুযায়ী বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে অন্ধকার হয়ে যাবে। পর দিন বিকেলে ঢাকা ছাড়বেন তিনি। ফলে সূচিতে এটি মেলানো যায়নি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, এভিয়েশন খাতে দুটির মধ্যে একটি স্যাটেলাইট ও অন্যটি এয়ারবাসের সঙ্গে সমঝোতা। এছাড়া নগর উন্নয়নে একটি সম্মতিপত্র সইয়ের প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। এছাড়া আরও কিছু বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে, তবে সেগুলো চূড়ান্ত হয়নি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক, সামরিক বাহিনীগুলোর মধ্যে সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে আলোচনা হবে।
এই কূটনীতিক বলেন, ইউরোপে বাংলাদেশের অন্যতম অংশীদার হচ্ছে ফ্রান্স। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) দেশটির বেশ প্রভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে ফ্রান্স বাংলাদেশের পাশে থাকা মানে ইইউ পাশে থাকা। ইইউ পাশে যদি নাও থাকে, তবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভূমিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে ফ্রান্স অন্যতম প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করবে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চলতি বছরে দুই দেশের প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ ও ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রীর সফরে দেওয়া যৌথ ঘোষণার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে বাংলাদেশ-ফ্রান্স দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে।
এর আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে ২০২১ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় তিনি এমানুয়েল মাক্রোঁকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সে সময় দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্মতিপত্রে সই করে। দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার যে সম্মতিপত্র সই করেছে, তাতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রযুক্তি বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো যুক্ত রয়েছে।
২০২১ সালে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের পর দুই দেশের দেওয়া যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, দুই দেশ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে একমত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত আলোচনা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে।
প্রয়োজনে সামর্থ্য অনুযায়ী এক পক্ষের চাহিদা অনুযায়ী অন্য পক্ষ তা সরবরাহ ও সহযোগিতা করবে। দুই দেশ তাদের এই সম্পর্কের একটি কৌশলগত দিকনির্দেশনা দেওয়ার লক্ষ্যে সহযোগিতার সব বিষয়ে নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক আলোচনা আয়োজনের ওপর জোর দিয়েছে। দুই পক্ষ রাজনীতি, কূটনীতি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়সহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতায় জোর দিয়েছে।
ঢাকার ফ্রান্স দূতাবাস জানায়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বাংলাদেশ সফরকালে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বা ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে ফ্রান্সের কৌশল নিয়ে জোর দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে এমন একটি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর হবে, যে দেশটি দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি করেছে এবং অংশীদারিত্বে বৈচিত্র্য খুঁজছে। জলবায়ু নিয়ে প্যারিস এজেন্ডাসহ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে অভিন্নতা রয়েছে। প্যারিস এজেন্ডা বাংলাদেশ সক্রিয় সমর্থন করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যেহেতু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, ফলে এ বিষয়ে মানবিক দিক থেকে বাংলাদেশের পাশে থাকার সংকল্প আবারও ব্যক্ত করবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। বিশ্বের শান্তিরক্ষা অথবা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া আন্তর্জাতিক সংহতিমূলক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী দেশ।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ/ হাসনাহেনা