।। সৈয়দ সাকিব ।।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফরম বিক্রি করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আয় হয়েছে প্রায় ৩১ কোটি টাকা। চলতি বছরের গত ২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে দুই ধাপে তিনটি ইউনিটে এই আবেদন কার্যক্রম চলে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আবেদন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯৭২ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনটি ইউনিটে মোট আবেদন জমা পড়ে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪১৫টি। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ৯৬ হাজার ১৬২টি, ‘বি’ ইউনিটে ৪২ হাজার ৪৩৩টি এবং ‘সি’ ইউনিটে জমা পড়ে ৯৮ হাজার ৮২০টি আবেদন।
এ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে একক আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ জন। এ হিসেবে প্রতিটি আবেদন বাবদ ২২ টাকা ফি ধরা হওয়ায় প্রাথমিক আবেদন থেকে আয় হয় ৫৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
চূড়ান্ত আবেদনে ‘এ’ ও ‘সি’ ইউনিটে মোট ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৮২টি আবেদন জমা পড়ে। প্রতিটি আবেদনের জন্য সার্ভিস চার্জসহ ১৩২০ টাকা করে নেওয়া হয়। এতে মোট আয় হয় ২৫ কোটি ৭৩ লাখ ৭৬ হাজার ২৪০ টাকা। অন্যদিকে, ‘বি’ ইউনিটে আবেদন ফি ছিল ১১০০ টাকা। এই ইউনিটে ৪২ হাজার ৪৩৩টি আবেদন জমা পড়ায় আয় হয় ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৭৬ হাজার ৩০০ টাকা। চূড়ান্ত আবেদনে তিনটি ইউনিট থেকে ১০% সার্ভিস চার্জসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয় হয়েছে ৩০ কোটি ৪০ লাখ ৫২ হাজার ৫৪০ টাকা।
ফলে, প্রাথমিক ও চূড়ান্ত—দুই ধাপে আবেদন ফরম বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় হয়েছে ৩০ কোটি ৯৫ লাখ ১৯ হাজার ৫৪০ টাকা।
যেভাবে খরচ হবে এই অর্থ
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আবেদন থেকে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ও কোন কোন খাতে তা ব্যয় হবে তা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নির্ঝর রহমান রেজিস্ট্রারের অনুমতি ছাড়া গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
তবে, আবেদন থেকে প্রাপ্ত অর্থ কোন কোন খাতে খরচ হয় তার একটি নথি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রধান পরিদর্শকের সম্মানী প্রতি পরীক্ষায় ৩ হাজার টাকা, ভর্তি পরীক্ষায় ইউনিটভুক্ত অনুষদ/বিভাগ/ইনস্টিটিউটে কর্মরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্মানী প্রতি পরীক্ষায় ২ হাজার টাকা এবং কর্মচারীর পারিতোষিক প্রতি পরীক্ষায় ১ হাজার টাকা। ভর্তি পরীক্ষার হলে ২০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য ১ জন পরিদর্শক এবং ৪০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য ১ জন কর্মচারী থাকবে।
এদিকে প্রতি ইউনিটের চীফ কো-অর্ডিনেটরের সম্মানী ৭৫ হাজার টাকা, এডিশনাল চীফ কো-অর্ডিনেটরের সম্মানী ৭৫ হাজার টাকা, কো-অর্ডিনেটরের সম্মানী ৫০ হাজার টাকা। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সম্মানী বাবদ ২ লাখ টাকা, উপ-উপাচার্যদ্বয় (প্রত্যেকে) ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কোষাধ্যক্ষ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং রেজিস্ট্রার ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথমবর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অনলাইন পদ্ধতিতে আবেদনের বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থের ৬০% সংশ্লিষ্ট ইউনিট গ্রহণ করবে ও অবশিষ্ট ৪০% অর্থ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফান্ডে জমা হবে। ৬০% অর্থের মধ্য থেকে ৫% অর্থ ইউনিটভুক্ত ডিন ও ইনস্টিটিউট অফিস এবং ১০% অর্থ ইউনিটভুক্ত বিভাগসমূহের উন্নয়নের জন্য রেখে বাকি অর্থ প্রতিটি ইউনিট ভর্তি পরীক্ষাসহ ভর্তি-সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় সম্পন্ন করবে।
উপরোক্ত নির্ধারিত সম্মানীসহ ভর্তি-সংক্রান্ত অন্যান্য যাবতীয় প্রশাসনিক ব্যয়সমূহ প্রথমবর্ষ স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা খাত (প্রশাসনে রক্ষিত ৪০%) থেকে ব্যয় করা হবে।
ভর্তি পরীক্ষার ফি থেকে প্রাপ্ত অর্থের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, “ফি থেকে প্রাপ্ত অর্থ বণ্টনের ক্ষেত্রে পুরোপুরি স্বচ্ছতা বজায় রাখা হবে। এ বছর ভর্তি পরীক্ষা ডিসেন্ট্রালাইজড হওয়ায় বিগত ভর্তি পরীক্ষাগুলোর তুলনায় খরচের পরিমাণটাও অনেকাংশে বেড়ে গেছে।”
উল্লেখ্য, আগামী ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা।
বিএনএনিউজ/ বিএম/শাম্মী