বিএনএ ডেস্ক: আগামী বছরেই সরকার ফাইভ-জি চালু করতে চায়। কিন্তু ফাইভ-জি প্রযুক্তি স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ এখনো সম্পূর্ণ প্রস্তুত নয়। ফাইভ-জির জন্য জনগণকেও প্রস্তুত করা হচ্ছে না। উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা ফাইভ-জি চালুর জন্য দেশের অপারেটরগুলো এ বছরের মার্চে নিলামের মাধ্যমে তরঙ্গ কেনে।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘৫জি প্রযুক্তি: সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এবং মুঠোফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠান রবির যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান হয়। রবির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর সহযোগী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ ফাইভ-জির সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। সেখানে দেশে ফাইভ-জি চালু করার বিষয়ে পাঁচটি চ্যালেঞ্জের কথা জানান তিনি। সেগুলো হলো, ব্যবহারের সীমিত ক্ষেত্র, শিল্পগুলোর মানসিকতা পরিবর্তন না করা, ভূগর্ভস্থ ফাইবারের কেব্লের ব্যাপক সম্প্রসারণে ঘাটতি, যথেষ্ট প্রস্তুতির অভাব এবং প্রয়োজনীয় মুঠোফোন না থাকা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও ফাইভ-জির ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে বলেন, ‘ফাইভ-জি দিলে গ্রাহক কি এখন কাজে লাগাবে? বাজার তৈরি হয়েছে? দেশে ফাইভ-জির হোম নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি। ডিভাইস কি পর্যাপ্ত?’ মন্ত্রী ফাইভ-জি কাজে লাগানোর সক্ষমতা আছে কি না, তা বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে আমরা এখনও গোছাতে পারিনি।’
ফাইভ-জির জন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের কাছে যাওয়ার জন্য যে প্রচেষ্টা দরকার, তা কাজ করছে না। জনগণকে ফাইভ-জির জন্য প্রস্তুত করছি না, ফাইভ-জির সমাধান দেখাচ্ছি না।’ আগামী জানুয়ারি মাসে ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা করার কথা জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, সেখানে ফাইভ-জি কেন এবং কী কারণে ব্যবহার করা হবে, তা মানুষকে দেখানো হবে। তবে ফাইভ-জির জন্য যে পরিবেশ দরকার, তা তৈরি করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া জানান, জানুয়ারি থেকে থ্রি-জি সেট বানানো যাবে না, আমদানিও করা যাবে না।
ফাইভ-জি হচ্ছে সেলুলার নেটওয়ার্কের পঞ্চম প্রজন্ম, যা ফোর-জি গতি থেকে শত গুণ বেশি দ্রুততায় কাজ করে। মানুষের নিয়মিত ব্যবহার ও ব্যবসার জন্য ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার প্রযুক্তি এটি। বাংলাদেশে গত ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় অপারেটর প্রতিষ্ঠান টেলিটক পরীক্ষামূলকভাবে কিছু এলাকায় ফাইভ-জি চালু করেছিল। বাকি তিন অপারেটরও এ বছর ফাইভ-জি ট্রায়াল দিয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ ২০১৮ সালে ফোর–জিতে, ২০১২ সালে থ্রি-জিতে প্রবেশ করে।
গোলটেবিলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ফাইভ-জি চালুর অংশীজনদের অনেকেই এখনো প্রস্তুত নয়। একটি সমন্বিত বাজার সমীক্ষা করতে হবে, যাতে ফাইভ-জি সেবা বাণিজ্যিকভাবে কীভাবে চালু করা যেতে পারে, তা বোঝা যায়।
রবি ফাইভ-জি নিয়ে প্রস্তুত উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, দ্রুত ফাইভ-জি সংযোগ দেওয়ার জন্য তাঁরা কাজ করছেন।
গ্রামীণফোনের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হোসেন সাদাত ফাইভ-জির জন্য ইকোসিস্টেম পরিবর্তনের কথা বলেন। তিনি বলেন, টাওয়ারগুলোতে প্রচুর বিদ্যুৎ লাগবে।
টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় গোলটেবিলে আরও বক্তব্য দেন বাংলালিংকের রেগুলেটরি অপারেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর মুখলেসুর রহমান, টেলিটকের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (ফাইভ-জি) রেজাউল করিম রিজভী, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল মতিন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) ইমদাদুল হক, অ্যামটব মহাসচিব এস এম ফরহাদ প্রমুখ।
বিএনএ/এ আর