28 C
আবহাওয়া
১২:৩৯ অপরাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » রাখাইনে জাস শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন জরুরি

রাখাইনে জাস শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন জরুরি


।।মিজানুর রহমান মজুমদার।।

মিয়ানমার ক্রমশ অন্ধকারের দিকে পা বাড়াচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দমাতে গিয়ে দেশটি গৃহযুদ্ধে থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। দেশটির বিভিন্ন প্রদেশ কাচিন,শান,শিন ও রাখাইনে মুখোমুখি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহিরা।ফলে বাড়ছে কারাগারে আটক, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।মিয়ানমারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে মানবাধিকার বিশ্লেষকরা। দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভাঙ্গার অভিযোগ এখন পুরনো।তবে রাখাইনে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জাতি নিধনযজ্ঞ অভিযানের পরও মিয়ানমার বিশ্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যাকে এড়িয়ে চলছে তাতে স্পষ্টত যে, আগামী ১০০বছরেও এ সমস্যার সমাধান হবে না। বরং এই সমস্যা বিশ্ববাসীর জন্য মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠতে পারে। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এই মুহুর্তে মিয়ানমারকে ঠাণ্ডা এবং রাখাইনে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ (জাস) শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন জরুরী হয়ে পড়েছে।

রেডিও ফ্রি এশিয়ার তথ্য অনুযায়ী গত মার্চ ও চলতি জুলাই মাসে মধ্যে সরকারি বাহিনী ও আরাকান আর্মির সাথে সংঘর্ষের পর কমপক্ষে ১৪ জন বেসামরিক নাগরিক গুরুতর আহত অবস্থায় মারা গেছে পুলিশ কাস্টডিতে।এদের মধ্যে রাচিডংয়ের ৭ জন ও মারুক টাউনশিপের ৬ জন, ১ জন কোয়াকথ টাইনশিপে।সংঘর্ষ যেখানে হয়েছে তার আশেপাশের এলাকা থেকে এদেরকে সেনাবাহিনী অযথা সন্দেহজনকভাবে ধরে নিয়ে এসে অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে  মেরে ফেলেছে। তাদের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক অভিযোগ তারা আরাকান আর্মিকে সহায়তা করেছে।এ ব্যাপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বারবার বলে আসছে এটি তাদের অভ্যন্তরীন ব্যাপার।কোন বাইরের রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। তারা যা চাইবে তাই হবে। বাইরের কেউ এখানে নাক গলাবার কে। যদিও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার আহবান জানিয়ে আসছে বেসামরিক লোজনকে গ্রেপ্তার, আটক ও নির্যাতন বন্ধ করার জন্য। তারা বারবার বলে আসছে এ ধরনের আটক নির্যাতন হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের সামিল। মিয়ানমারের একজন আইনজীবী মিন লু ইন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাছে মিয়ানমার সেনাবহিনীর অপরাধ তুলে ধরা সত্যিই মুশকিল। কারণ এরা এতটাই ধুরন্ধর যে, তাদের কৃত অপরাধের কোন চিহ্নই এরা রাখে না। লুকিয়ে ফেলে।

এদের উপর বহির্বিশ্বের চাপ ও অবরোধ বাড়াতে হবে।মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অর্থনৈতিক প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে হবে। তাদের অস্ত্র আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

মারবাধিকার গ্রুপগুলো জাতিসংঘের প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারের কাটগড়ায় দাঁড় করানোর আহবান জানিয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমান গণহত্যার সাথে সরাসরি জড়িত। যেমনটি তারা কাচিন ও মান স্টেটেও সংখ্যালঘু  আদিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য হত্যা নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

আরাকান ন্যাশনাল পার্টি

আরাকান ন্যাশনাল পার্টির ভাইস চেয়ারওমেন আইনু সেইন বলেছেন, স্থানীয় রাজনীতিকরা সত্যিটা জানতে চান কি ঘটছে ডিটেনশন সেন্টারে যেখানে বেসামরিক আটক যুবকরা মারা যাচ্ছেন।  আমরা সাহায্য করতে চাই। কিন্তু কে অভিযোগ জানাবে, কেই বা এর বিহিত করবে। আরাকান ন্যাশনাল পার্টি এক রিপোর্টে সংখ্যালঘু আদি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের নথি প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, এটি অনেকটা শিয়ালের কাছে মুরগির বিচার চাওয়ার মতো। আমরা কিছুই করতে পারি না।অথচ আমরা আমাদের সেরাটি দিতে চাই।

জাতিসংঘের স্পেশাল রিপোর্টার ইয়াংগি লী যিনি সংস্থার মানবাধিকার বিষয়গুলো দেখে থাকেন, তিনি বলেছেন, রাখাইনে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে সেনাবাহিনী যাতে তাদের অপকর্মের কাহিনী বিশ্ব জানতে না পারে। রাখাইনে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চলছে নিরবে নিভৃতে। মিয়ানমার আর্মি রাখাইনে যুদ্ধপরাধ করছে। নিধন করছে রাখাইনের বিদ্রোহিদের। যাতে কোন হিসেব না থাকে, সে কারণে সমস্ত প্রমাণ মুছে ফেলতে তারা ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে।এ মুহূর্তে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।

যদিও মিয়ানমার সরকার নির্যাতনের বিরুদ্ধে এখনো জাতিসংঘ কনেভেশনে সই করেনি।, যেখানে ১৭০ টি দেশ এ চুক্তিতে সই করেছে। জাতিসংঘ আশাবাদি মিয়ানমার শীঘ্রই জাতিসংঘ কনভেনশনে স্বাক্ষর করবে।

জাতিসংঘ বিশ্বের ১৪টি সহিংস স্থানে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করলেও এখনো মিয়ানমারের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কেন নিচ্ছে না সেটাও রহস্যময়। একটি বিষয় পরিস্কার, মিয়ানমার সরকার চাইছে না শান্তি রক্ষীবাহিনী মিয়ানমারে মোতায়েন করা হোক। জাতিসংঘের কোন পর্যবেক্ষক দলও তারা চায় না। বিদেশি সাংবাদিকের অবাধ প্রবেশাধিকার তারা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। কোন বিদেশি সংস্থা রাখাইনে কাজ করতে পারছে না। রেডক্রসের ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে যাওয়া কনভয়ের উপর হামলা করা হচ্ছে।বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা দরকার। এ মুহূর্তে যেটি প্রয়োজন তা হলো রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান ও সেনাবাহিনী নেতৃত্বকে  আন্তর্জাতিক আদালতের মুখোমুখি করা ।

যে সব স্থানে শান্তি রক্ষী বাহিনী মোতায়েন রয়েছে সেগুলো হলো, হাইতি,পশ্চিম সাহারা, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, মালি, কঙ্গো, দরফুর, গোলান উপত্যকায়, সাইপ্রাস,লেবানন,সুদান, কসোভো, দক্ষিণ সুদান, ভারত ও পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য। অথচ মিয়ানমারে যুগ যুগ ধরে সংঘটিত সহিংসতায় অসংখ্য প্রাণ ঝরেছে। উদ্বাস্তু হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। জাতিগত নিধনের নামে চালানো গণহত্যা বন্ধে কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের নিযুক্ত মানবাধিকার বিষয়ক দূত ইয়াং লি গত ২জুলাই জানান, ২০১৭ সালে এক নৃশংস সামরিক অভিযানে ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় গ্রহণ করে। জাতিসংঘের তদন্ত কমিটির মতে, ওই অভিযানে গণহত্যা, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করা হয়। অভিযানটি মূলত ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যেই’ পরিচালিত হয়েছিল।

ইয়াং লি বলেন, রাখাইনের ও চিন রাজ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরে চলা ভয়াবহ সংঘর্ষের ধ্বংসাত্মক প্রভাব বেসামরিক লোকজনের ওপর পড়েছে। রাজ্যদুটিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে নিরাপত্তা বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।

গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরকালে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াং হি লি সংকট সমাধানে মিয়ানমার জাতিসংঘকে সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ করে বলেন, জাস প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে দেশটির সরকার। ঠিক এই অবস্থায় মিয়ানমারে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করে রোহিঙ্গাদের সে দেশে পুনর্বাসনের উদ্যেগ গ্রহণ করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মিয়ানমারকে নিয়ে কোন ভোটাভুটির প্রয়োজন হলে, মিয়ানমারের বন্ধু দেশ চীনসহ কয়েকটি দেশ বরাবরই ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে আসছে। তাই প্রয়োজন হলেও কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না জাতিসংঘ। কারণ স্থায়ী দেশগুলোর সহঐক্যমত জরুরি।মিয়ানমার রোহিংগাদের দেশ ছাড়া করার পরও তারা সরাসরি অস্বীকার করে আসছে যে, তারা কোন অন্যায় কাজ করেনি। তারা কোন গণহত্যা চালায়নি।তাদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা,বানানো। তারা সন্ত্রাসিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।যারা তাদের পুলিশকে হত্যা করেছে। ভারি অদ্ভুদ। মগের মুল্লুক বলে কথা।মগরা জাতিসংঘের ভাষা বুঝে না। তারা যে ভাষায় কথা বুঝে তাদের সে ভাষায় বুঝানো দরকার। নয়তো তারা তা বুঝবে না।

বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল প্রতিবেশি দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা ও উন্নয়নে বিশ্বাসী। তিনি মানবিক মানুষ। না হলে এত বিপুল পরিমা্ণ রোহিঙ্গাদের বাঁচানোর ভার তিনি মাথায় তুলে নিতেন না। তার এ সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে জাতিসত্ত্বার স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে মিয়ানমার। যেটি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির অধিকার। তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে স্বদেশে ফেরানোর পথ জাতিসংঘকেই করতে হবে।রাখাইনে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন জরুরি। এ কাজটি যতো দ্রুত করা যায়, ততোই মঙ্গলজনক।

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ