বিএনএ, ঢাকা: গত ২৫ মে, ২০২২ বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ‘সীতাকুন্ড তুলাতলীতে কাটা হচ্ছে লাখ লাখ গ্যাস সিলিন্ডার’ শীর্ষক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ সূত্র ধরে ৮ জুন (বুধবার) র্যাব-৭ এর একটি চৌকস অভিযানিক দল এ ঘটনায় জড়িত ৩ মূলহোতা সহ নয় জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
আটক তিন হোতা হলেন- শফিউর রহমানের ছেলে ইসমাইল হোসেন কুসুম, ফয়েজ আহাম্মদের ছেলে মহসীন, সিদ্দিকের ছেলে নুরুন নবীসহ নয়জন। এ সময় কাটা ও কাটার জন্য আনা ১০ হাজার গ্যাস সিলিন্ডার জব্দ করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্রাপ লোহার দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে। এ প্রেক্ষাপটে সীতাকুন্ড এন্টারপ্রাইজের মালিক ইসমাইল উদ্দিন কুসুম প্রকাশ এলপি কুসুমের নেতৃত্বে তুলাতলী এলাকার বাসিন্দা মহসিন, নবী, মঈনুদ্দিন মেম্বার, তার ভাই সাইফুদ্দিন, টিটু, শাহীন, রফিকসহ আরও কয়েকজন একটি একটি সিন্ডিকেট গঠন করে।
সূত্র জানায়, সীতাকুন্ড থানার ওসি এবং ফৌজদারহাট পুলিশ ফাড়িঁর ইনচার্জ এর যোগসাজসে গত ৩ মাস ধরে চক্রটি গ্যাস সিলিন্ডার কাটার মহাউৎসবে নেমেছে। প্রতিরাতে ১০ হাজার করে সিলিন্ডার কাটে। সে হিসাবে চক্রটি ৯ লাখ সিলিন্ডার কেটে রি-রোলিং মিলে বিক্রি করেছে। আয় করেছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা! সারাদশে তাদের এজেন্ট রয়েছে। বিভিন্ন এজেন্ট থেকে গ্যাস সিলিন্ডার সংগ্রহ করে তুলাতলীতে পাঠানো হয়। তুলাতলীতে গ্যাস সিলিন্ডার কাটা ছিল ওপেন সিক্রেট।
রাতের বেলায় লোকজন ঘুমাতে না পারলেও চক্রটি এতটাই প্রভাবশালী যে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি কেউ।উল্লেখ, দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবেশক, খুচরা ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির রিফুয়েলিং স্টেশনে ২৭টি অপারেটরের সাড়ে তিন কোটি সিলিন্ডার রয়েছে। এলপি গ্যাসে বড় বিনিয়োগ থাকে সিলিন্ডারে। দীর্ঘদিন ব্যবসা করে সেই মুনাফা তুলে আনেন বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠানগুলো। বাজারে পাওয়া যায় এমন গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ আনুমানিক ২০ বছর। একটি সিলিন্ডার তৈরি করতে খরচ হয় দুই হাজার আটশত টাকা থেকে তিন হাজার টাকা। সেই চড়া দামের সিলিন্ডার এক দুই বছরের মধ্যে স্ক্র্যাপে পরিণত করছে র্যাব-৭ এর হাতে সীতাকুন্ডের তুলাতলীতে আটক হওয়া চক্রটি।
বিস্ফোরক আইন অনুযায়ী বাজারজাতকারক প্রতিষ্ঠানও অনুমোদন ছাড়া সিলিন্ডারের আকার পরিবর্তন এবং বিকল্প ব্যবহার করতে পারে না। সিলিন্ডার বিধিমালা-১৯৯১-এ স্পষ্ট লেখা আছে, কোনো অবস্থায়ই সিলিন্ডার স্ক্র্যাপ, কাটা কিংবা আঘাত করা যাবে না। সিলিন্ডার নষ্ট হয়ে গেলে সেটি কাটতে বা ভাঙতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তা করতে হবে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, এলপিজি অপারেটর ও গ্যাস-সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে একটি সিলিন্ডার ১০ বছর পরপর পরীক্ষা করাতে হবে। সে সময় সেটির নির্দিষ্ট মান বজায় থাকলে এবং বিস্ফোরক পরিদপ্তরের ছাড়পত্র পেলেই তা আবারো ব্যবহার করা যাবে।
এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) এর সভাপতি আজম জে চৌধুরী জানান, সিলিন্ডার কাটা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি কাটা সিলিন্ডার না কিনতে রি-রোলিং মিল মালিকদের চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু গ্যাস সিলিন্ডার কাটা বন্ধ করতে পারেনি।
অবশেষে, বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) তে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে র্যাব-৭ এর একটি দল পুরোচক্রটিকে শনাক্ত করে। পরে জড়িত ব্যক্তিদের আটক করে। এতে এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) এর ২৭টি প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। একই সঙ্গে সীতাকুন্ড উপজেলার তুলাতলীর মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বিএনএনিউজ২৪/এমএইচ/ ওয়াই এইচ