বিএনএ, ডেস্ক : ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এস. আলম গ্রুপ এবার ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। ফলে বর্তমানে এস আলম গ্রুপের অধীনে ব্যাংকের সংখ্যা ৮টি। দেশে এত বেশী ব্যাংকের মালিক অন্য গ্রুপ হতে পারেনি। ব্যাংক জগতে অপ্রতিরোধ্য এস আলম গ্রুপ এক কথায় ‘ব্যাংক আড়তদার’ হয়ে উঠেছেন।
প্রসঙ্গত, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ না করা ন্যাশনাল ব্যাংকের বোর্ডের সিদ্ধান্তের কয়েকদিনের মধ্যেই আবারও ব্যাংকটির বোর্ড ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাড়ে ৪ মাসের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো পুনর্গঠন করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় মূলধনী এই ব্যাংকটি। আর নতুন বোর্ডের আধিপত্যও এস আলম গ্রুপের হাতে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের অধিকাংশ পরিচালকই চট্টগ্রামের কিংবা চট্টগ্রামের এই শিল্প গ্রুপটির সঙ্গে জড়িত। এস আলম গ্রুপের নিজস্ব একাধিক ব্যক্তিকে পরিচালক হিসেবে বসানো হয়েছে বোর্ডে।
গত ৫ মে প্রথম প্রজন্মের এই ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক খলিলুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে ১০ সদস্যের নতুন পরিচালনা পরিষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদের মধ্যে ৩ জন স্বতন্ত্র পরিচালক। আগের পরিষদের পারভিন হক শিকদারসহ অধিকাংশ পরিচালকই বাদ পড়েছেন। নতুন পরিচালনা পরিষদের অধিকাংশই চট্টগ্রামের কিংবা চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। মূলত শিকদার পরিবারের অব্যাহত লুটপাটের হাত থেকে ব্যাংকটিকে রক্ষা করতেই কয়েকমাস আগে নতুন পরিষদ গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর ফলে আর্থিক নানা সূচকে উন্নতিও করছিল ব্যাংকটি। কিন্তু গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপিয়ে দেওয়া ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করার সিদ্ধান্তকে নাকচ করে দেয় ন্যাশনাল ব্যাংকের বোর্ড। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হুমকি দেওয়া হয় ১০ দিনের মধ্যে ভেঙে দেওয়া হবে বোর্ড। কয়েকদিন যেতে না যেতেই বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ড ভেঙে দিলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদকে আরও শক্তিশালী করতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিকে চেয়ারম্যান করে পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। যাতে ব্যাংকটিতে সুশাসন নিশ্চিত হয়। গতকাল রোববার বিকালে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুল আলম খানকে চিঠি পাঠিয়ে পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠনের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রণিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি)। ২
বিভাগটির পরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ক্ষমতাবলে ৫ মে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত বোর্ডের পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামের কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, ফেনীর ব্যবসায়ী ও হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. শফিকুর রহমান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রিয়াজুল করিম এফসিএমএ।
রাঙ্গুনিয়ার ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ, চট্টগ্রামের একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের আইনজীবী আহসানুল করিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ কে এম তফাজ্জল হক। আগের পরিষদের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন ছাড়া আর কাউকে নতুন পরিষদে রাখা হয়নি। স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী, চট্টগ্রামের পেশাজীবী চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ড. রত্না দত্ত এফসিএ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা।
এই তিনজনই ব্যাংকিং খাতের গত কয়েক বছরে আধিপত্য বিস্তারকারী বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিজস্ব লোক। এদের মধ্য ড. রত্না দত্ত গ্রুপটির চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) এর স্ত্রী। আর এ বি এম জহুরুল হুদা গ্রুপটির একটি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। গত প্রায় দেড় দশক ধরে ন্যাশনাল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল শিকদার পরিবারের হাতে। এই পরিবারের নানা অনিয়ম অনাচারে ও স্বেচ্ছাচারিতায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মূলধনী কোম্পানিটি মুখ থুবড়ে পড়ে।
ব্যাংকটিকে রক্ষায় ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদ্যমান বোর্ড ভেঙে দিয়ে পেশাজীবী ও উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে নতুন পরিষদ গঠন করে দেয়। এই পরিষদের সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। তিনি গত বৃহস্পতিবার (২ মে) বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন। ওইদিন আরো কয়েকজন পরিচালক পদত্যাগ করেন। এর পরের কার্যদিবসেই নতুন বোর্ড গঠন করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী