বিএনএ, ডেস্ক রিপোর্ট: ঈদুল ফিতর মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি অন্যতম একটি দিন এবং ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়া ওয়াজিব। বিশ্বের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান রমজানের রোজার শেষে ঈদ উল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। নিচে ধারাবহিকভাবে ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম,নিয়ত,তাকবীর,ওয়াজিব সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।
ঈদ’ অর্থ কী
ঈদ’ আরবি শব্দ, অর্থ- আনন্দ, আরেক অর্থ- উৎসব, এমন উৎসব, যা বারবার ফিরে আসে। ‘ফিতর’ শব্দটিও আরবি, যার অর্থ রোজা ভাঙা। ঈদুল ফিতর মানে রোজা শেষ হবার আনন্দ বা উৎসব পালন। ঈদুল ফিতর প্রতিবছর হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী শাওয়াল মাসের ১ তারিখে পালিত হয়।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে শাওয়াল মাস শুরু হবে এবং বৃহস্পতিবার জাতীয়ভাবে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন বাংলাদেশের মুসলমানরা।
আল্লাহর জিকির ও তার বড়ত্বের ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হয় মুসলিমদের ঈদ। ঈদের দিনে মুসলিমদের প্রথম ও প্রধান আমল হলো ঈদের নামাজ আদায়।
ভালভাবে অজু করা
ঈদগাহ মাঠে যাওয়ার আগে অবশ্যই ভালভাবে অজু করে নিবেন। মাঠে যাওয়ার সময় তাকবির পড়তে পড়তে যাবেন।
ঈদ। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। মুমিন মুসলমান প্রতি বছরে দুটি ঈদ উদযাপন করে থাকেন। যে কারণে অনেকেই ঈদের নামাজের নিয়ম ভুলে যান। মুসলিম উম্মাহর জন্য ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব। ঈদের দিন যথাযথভাবে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য নিয়ম ও প্রস্তুতির বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো-
ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ার নিয়ম
মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরের দুই (২) রাকাত ওয়াজিব নামাজ সঠিকভাবে আদায়ের উদ্দেশ্যে অনেকে নিয়মসমূহ জানতে চান। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের পূর্ণাঙ্গ নিয়ম রয়েছে। এই দুই (২) রাকাত ওয়াজিব নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে হবে এবং প্রতি বছর মুসলমানরা এই নামায আদায় করে থাকেন।
ঈদুল ফিতরের সুন্নত
ঈদুল ফিতরেরও কিছু নবী করীম (সা.) এর সুন্নত রয়েছে।
সুন্নতগুলো হল: ক) ঈদুল ফিতরের নামাজে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া। খ). গোসল করা। গ). মিসওয়াক করা। ঘ). সদকায়ে ফিতর আদায় করা। ঙ). সাধ্য অনুযায়ী উত্তম পোশাক পরিধান করা। চ). সুগন্ধি ব্যবহার করা। ছ). তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহে গমন করা। তবে ঈদুল ফিতরের তাকবীর উচ্চস্বরে বলবেনা।
ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর
ঈদের নামাজ ঈদগাহে ও খোলা মাঠে পড়া সুন্নত
ঈদের নামাজ ঈদগাহে ও খোলা মাঠে পড়া সুন্নত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং খোলাফায়ে রাশেদিন সবাই ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়তেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন (ঈদের নামাজের জন্য) ঈদগাহে যেতেন। -সহিহ বোখারি : ৯৬৫
হানাফি মাযহাব
ঈদের নামাজ দুই রাকাত পড়তে হয়। প্রথমে তাকবীরে তাহরিমা আল্লাহু
আকবার বলে সানা পড়বেন। ছানা পড়ে কেরাত পড়ার আগে অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর দিবেন। তাকবীরটি হল: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত
ইসলামে নিয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সকল কিছুই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। নিয়ত আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো, মনের ইচ্ছা, সংকল্প বা প্রতিজ্ঞা। এটি অন্তরের কাজ, জিহ্বার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোনো কাজের শুরুতে মনের মধ্যে যে ইচ্ছা পোষণ করা হয়, সেটাকেই নিয়ত বলা হয়। তাই মনে মনে স্থির করতে হবে যে, আমি এই ঈদের নামাজ কিবলামুখী হয়ে ইমামের পেছনে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে আদায় করছি।
নিয়ত শব্দের অর্থ হলো সংকল্প করা অথবা ইচ্ছা পোষণ করা। আপনারা নিয়ত মুখে পড়তে পারেন অথবা মনে মনে সংকল্প করেও করতে পারেন। তবে অনেকে মুখে নিয়ত করতে চান তাদের জন্য আরবি এবং বাংলা দুটি নিয়তই তুলে ধরা হল:
ঈদুল ফিতরের নামাজের আরবি নিয়ত
যারা ঈদ উল ফিতরের ওয়াজিব নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে চান এবং আরবি উচ্চারণ করতে পারেন না তারা সহজভাবে বাংলা নিয়ত করতে পারেন।
বাংলা উচ্চারণ: ‘নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা আলা রাকয়াতাই ছালাতিল ঈদিল ফিতরি মাআ ছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তা আলা ইক্বতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলা অর্থ: এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ ছয় তাকবিরের সঙ্গে আদায় করছি।
ঈদুল ফিতরের নামাজের বাংলা নিয়ত
আমি ক্কেবলামুখী হয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ এই ইমামের পিছনে আদায় করিতেছি আল্লাহু আকবার এটাও যদি না পারেন শুধুমাত্র মনে মনে সংকল্প করে বা ইচ্ছা পোষণ করে নামাজ আদায় করবেন।
ঈদুল ফিতরের নামাজের সময়
ঈদের নামাজের সময় হল যখন সূর্য উদিত হয় এবং এর প্রখরতা বৃদ্ধি পেয়ে চোখ জর সাথে শুরু করে তখন থেকে শুরু করে দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাজের সময় বাকি থাকে।
ঈদের নামাজ পড়ার সম্পূর্ণ নিয়ম
ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মতে, প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরিমা বলার পর তিনবার অতিরিক্ত তাকবির বলবেন এবং প্রত্যেকবার হাত উঠাবেন। তারপর ছানা পড়বেন।
তারপর সূরা ফাতিহা পড়বে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে রুকু করবেন। সিজদা করবে তারপর দ্বিতীয় রাকাতে তার জন্য দাঁড়াবে।
ঈদের নামাজ কয় রাকাত
দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর এবং রুকুর পূর্বে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলবেন এবং প্রত্যেকবার হাত উঠাবে। তারপর রুকুর জন্য তাকবীর বলবেন। রুকুর এই তাকবীর ঈদের নামাজে ওয়াজিব তাই এই শেষ তাকবির ছুটে গেলে সেজদা শাহ আবশ্যক হবে। এছাড়া বাকি নিয়ম অন্য নামাযের মতই। ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত নামাজ শেষে ইমাম মিম্বারে উঠে দুটি খুতবা দেন। ঈদের খুতবা শোনা ওয়াজিব। খুতবা শেষে সবাই মসজিদ থেকে বের হবেন।
ঈদের নামাজ যাদের ওপর ওয়াজিব
মাসয়ালা : যাদের ওপর জুমার নামাজ ফরজ, তাদের ওপর ঈদের নামাজ ওয়াজিব। অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, যেসব মুসলিম পুরুষ, জামাতে উপস্থিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের সক্ষমতা রাখে তাদের ঈদের নামাজ পড়তে হবে। -আল মুহিতুল বুরহানি : ২/৪৭৬
মাসয়ালা : নারীদের ওপর ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়। অনুরূপ এমন অসুস্থ পুরুষ, যে ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের সক্ষমতা রাখে না, তার ওপরও ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়। -বাদায়েউস সানায়ে : ১/৬১৭
মাসয়ালা : মুসাফির তথা যে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কি.মি. দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে, এমন ব্যক্তির ওপর ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়। তবে সে যদি ঈদের নামাজ পড়ে তাহলে তা সহিহ হবে এবং এর সওয়াব পাবে। -বাদায়েউস সানায়ে : ১/৬১৭
ঈদের নামাজে মাসবুক হলে করণীয়
মাসয়ালা : কেউ প্রথম রাকাতে ঈদের অতিরিক্ত তাকবির বলার পর ইমামের সঙ্গে শরিক হলে সে তাকবিরে তাহরিমা বলে নামাজে শরিক হওয়ার পর নিজে নিজে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলে নেবে। এক্ষেত্রে ইমাম কেরাত পড়া অবস্থায় থাকুন না কেন। কিন্তু নামাজে শরিক হওয়ার পর দাঁড়ানো অবস্থায় (রুকুর আগে আগে) তাকবির আদায়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যদি আদায় না করে তাহলে পরে আর রুকুতে তাকবির বলবে না। -আল বাহরুর রায়েক : ২/১৬১
মাসয়ালা : ইমামকে রুকুতে পেলে সেক্ষেত্রে যদি প্রবল ধারণা হয়, দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বললেও ইমামের সঙ্গে রুকুতে শরিক হতে পারবে তাহলে দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলে ইমামের সঙ্গে রুকুতে শরিক হবে। আর যদি প্রবল ধারণা হয়, দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত তাকবির বলতে গেলে ইমামকে রুকুতে পাওয়া যাবে না, তাহলে তাকবিরে তাহরিমা বলে রুকুতে চলে যাবে। রুকুতে গিয়ে ছুটে যাওয়া অতিরিক্ত তাকবিরগুলো হাত উঠানো ছাড়া বলে নেবে। এরপর যদি সময় থাকে তাহলে রুকুর তাসবিহ আদায় করবে। -আল মুহিতুল বুরহানি : ২/৪৮৮
মাসয়ালা : ইমামের সঙ্গে রুকুতে শরিক হওয়ার পর অতিরিক্ত তাকবির বলার মতো সময় না পেলে আর তাকবির বলতে হবে না। ইমামের সঙ্গে রুকু পাওয়ার কারণে সে ওই রাকাত পেয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকবিরও পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। -ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ২/৬১৮
মাসয়ালা : কেউ দ্বিতীয় রাকাতে ইমামের সঙ্গে শরিক হলে ইমামের সালাম ফেরানোর পর ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে প্রথমে সুরা-কেরাত পড়ে তারপর রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবির বলবে। অর্থাৎ ছুটে যাওয়া রাকাতেও দ্বিতীয় রাকাতের মতো রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবির বলবে। অবশ্য যদি কেউ এক্ষেত্রে সুরা-কেরাতের আগে অতিরিক্ত তাকবির বলে নেয় তাহলেও তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে। -কিতাবুল আসল : ১/৩২২
মাসয়ালা : দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর পর এমনকি শেষ বৈঠকের তাশাহহুদের পরও কেউ জামাতে শরিক হলে সে ঈদের জামাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। এক্ষেত্রে ইমামের সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মেই উভয় রাকাত আদায় করবে। অর্থাৎ প্রথম রাকাতের পর দাঁড়িয়ে কেরাতের পূর্বে অতিরিক্ত তাকবিরগুলো বলবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর অতিরিক্ত তাকবির বলবে। -কিতাবুল আসল : ১/৩২২
ঈদের নামাজে আজান-ইকামত নেই
মাসয়ালা : ঈদের নামাজে আজান-ইকামতের বিধান নেই। হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে একাধিকবার ঈদের নামাজ পড়েছি এবং আজান-ইকামত ছাড়া পড়েছি। -সহিহ মুসলিম : ৮৭৮
ঈদের খুতবা
মাসয়ালা : ঈদের নামাজের পর খুতবা দেওয়া সুন্নত। আর উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য তা শ্রবণ করা ওয়াজিব। মুসল্লিরা মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনবেন। -কিতাবুল আসল : ১/৩১৮
ঈদের নামাজ ছুটে গেলে
মাসয়ালা : ঈদের নামাজে কাজার বিধান নেই। তাই কারও ঈদের নামাজ ছুটে গেলে সে আশপাশের অন্য কোনো ঈদের জামাতে শরিক হওয়ার চেষ্টা করবে। এমনটি সম্ভব না হলে তওবা-ইসতেগফার করবে। -শরহু মুখতাসারিত তাহাবি : ২/১৬১
সূত্র: তথ্যসমূহ বিভিন্ন গণমাধ্যম হতে সংগৃহীত
এসজিএন/হাসনা