বিএনএ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সরদার হাসান ইলিয়াস তানিমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে সরকারের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রমূলক নিপীড়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তা বন্ধ করার দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
রোববার (৮ অক্টোবর) বেলা ১০টায় সচেতন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানবন্ধনে সাতক্ষীরার জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান সাইদ সভাপতিত্ব করেন। এসময় বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী জোসেপ অপূর্ব সাংবাদিক তানিমের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, ঔষধ কোম্পানি একমির অবৈধ মার্কেটিং পলিসি ও অসাধু ডাক্তারদের ঘুষ দিয়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঔষধ লিখিয়ে রোগীদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ তোলায় আজ সাংবাদিক তানিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এসময় তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান সরদার হাসান ইলিয়াস তানিম আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন একমির মতো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের সহায়তায় দেশের অসাধু ডাক্তারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পে অর্ডারের মাধ্যমে ঘুষ ও নানা ধরনের উপহার সামগ্রী দিয়ে যোগসাজস করে। তারা সাধারণ রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঔষধ লিখিয়ে রোগীর জীবন বিপন্ন করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক শ্রী বিমল দাস বলেন, ঔষধ কোম্পানি ও অসাধু ডাক্তারদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করে সাংবাদিক তানিম মানবাধিকার সমুন্নত করেছেন। অথচ তাকে ও তার পরিবারকে পুরস্কারের পরিবর্তে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি অবিলম্বে সাংবাদিক তানিমের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে ডা. মিজানুর রহমান ঔষধ কোম্পানির অবৈধ মার্কেটিং পলিসি ও কতিপয় ডাক্তারের অপ্রয়োজনীয় ঔষধ প্রয়োগে রোগীর শরীরে ঔষধের কার্যক্ষমতা নষ্ট এবং রোগী মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, এভাবে দেশের স্বাস্থ্যখাত চলতে পারে না। আমি সরকারের নিকট অবিলম্বে সাংবাদিক তানিমের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক দায়েরকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাসহ সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তার পরিবারকে হয়রানীমূলক নিপীড়ন বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
এর আগে দেশের ১২০ জন বিশিষ্ট নাগরিকসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠন সাংবাদিক তানিমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. ফারুকুল ইসলাম শামীম, অ্যাড. সুনীল কুমার দাস, ডা. মিজানুর রহমান, সংগঠক রাসেল আহম্মেদ, শ্রমিক নেতা আব্দুল হাকিম, মহিলা শ্রমিক নেত্রী কুলসুম আরা খাতুন, সাংবাদিক হাবিব আল আসাদ, ডা. মাসুম বিল্লাহ, শ্রমিক নেতা তামিম হোসেন, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবাদুল হক, এনজিও কর্মী জগদীশ চন্দ্র মন্ডল, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তার, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী মোহসিনা পারভীন, খায়রুল প্রমুখ।
উল্লেখ,, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সরদার হাসান ইলিয়াস তানিম একযুগেরও বেশী সময় ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক সংবাদ মাধ্যমে সাংবাদিকতা ও উপসম্পাদকীয় কলাম লিখে আসছেন। গণমাধ্যমে কাজ করার পাশাপাশি তিনি দেশের শীর্ষ স্থানীয় ঔষধ প্রস্তুত ও বিপননকারী প্রতিষ্ঠান ‘দি একমি ল্যাবরেটরীজ লিমিটেড’-এর এরিয়া ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
গতবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি একমির বিরুদ্ধে অবৈধ মার্কেটিং পলিসি ও অসাধু ডাক্তারদের ঘুষ দিয়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঔষধ লিখিয়ে রোগীদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ আনেন। একইসাথে মানহীন কাঁচামাল দিয়ে বাংলাদেশের মার্কেটে ঔষধ বিপণন করার প্রতিবাদ করে একমির মালিকপক্ষ ও ম্যানেজমেন্টের সাথে বিবাদে জড়ান।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত দ্রুত বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশের
এর জের ধরে একটি বিশেষায়িত সংস্থার নির্দেশে একমি কতৃপক্ষ গত ১১ এপ্রিল একমি থেকে সাময়িক সাসপেন্ড করে এবং ১০ মে সাংবাদিক সরদার হাসান ইলিয়াস তানিমের বিরুদ্ধে তার কর্ম এলাকা বরিশাল ও পিরোজপুর জেলার সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দণ্ডবিধির ৪০৮/ ৪২০/৪৬৮/৫০৬ (২)/১০৯/৩৪ ধারা উল্লেখ করে অর্থ আত্বসাৎ কল্পকাহিনী লিখে ২টি ভিত্তিহীন মামলা দায়ের এবং ঢাকা সাইবার ট্রাইবুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৪/২৫/২৯ ধারায় ১টি মামলাসহ মোট তিনটি মামলা দায়ের করেছে।
সাংবাদিক তানিমের বিরুদ্ধে ঢাকা সাইবার ট্রাইবুনাল এ দায়েরকৃত মামলা নম্বর ৩৩১/২০২৩। এবং বরিশাল কোর্টের মামলা নাম্বার CR-144/23 ও পিরোজপুর কোর্ট-এর মামলা নাম্বার CR-567/23, যা বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন তদন্ত করছে।
বিএনএনিউজ/ সাকিব/ বিএম