29 C
আবহাওয়া
৮:০১ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » পাহাড়ে বসবাসকারীদের স্থায়ী সমাধান হবে : বিভাগীয় কমিশনার

পাহাড়ে বসবাসকারীদের স্থায়ী সমাধান হবে : বিভাগীয় কমিশনার

পাহাড়ে বসবাসকারীদের স্থায়ী সমাধান হবে : বিভাগীয় কমিশনার

বিএনএ,চট্টগ্রাম: পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের স্থায়ী সমাধান করা হবে জানিয়েছেন সদ্য যোগদানকারী চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান। পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে স্থায়ী সমাধানের এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সকলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সরকারকে একটি প্রস্তবনাও দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার (৮ জুন) সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম নগরীর লালখানবাজার ওয়ার্ডের মতিঝর্ণা এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় পরিদর্শনের সময় তিনি এ কথা বলেন। এসময় পাহাড়ের পাদদেশে যেসব পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তাদের সতর্ক করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান ও জেলা প্রশাসক মো. মুমিনুর রহমান। অতি বর্ষণে পাহাড় যেকোনো সময় ধসে পড়ে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে জানিয়ে তাদেরকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে নির্দেশনা দেন তাঁরা।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত পরিবারগুলোকে পুনবার্সন করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো আমরা। তাই এর স্থায়ী সমাধান করতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, আমাদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে তার কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সামনেও আমাদের কার্যক্রম চলমান থাকবে।

তিনি বলেন, স্থায়ীভাবে পাহাড় থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হলে আগে জায়গার মালিকানা নির্ধারণ করতে হবে। মালিকানা নিয়ে যেহেতু সমস্যা আছে, আদালতে রিট ও মামলা আছে, তাই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো কিছুই করতে পারব না। যেসব পাহাড় নিয়ে আদালতে মামলা আছে সেগুলোর বিষয়ে আদেশের পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর যেগুলোতে ঝামেলা নেই সেগুলোতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মুমিনুর রহমান বলেন, পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমরা সবসময় সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে আসছি। এছাড়া পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণদের সরিয়ে নিতে জেলাপ্রশাসনের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে ২৫টি। এসব পাহাড়ে কম ও বেশি ঝুঁকিতে বসবাসকারী লোকজনের সংখ্যা লাখের ওপরে। বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের। এর মধ্যে ১৮টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের তালিকা করেছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। বাকি পাহাড়গুলোর তালিকা এখনও শেষ হয়নি।

পাহাড় ধসে গত ১৫ বছরে তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের প্রায় সবাই ছিলেন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী হতদরিদ্র লোকজন।

২০০৭ সালের ১১ জুন স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে ১২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট লালখানবাজারের মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যান ১১ জন, ২০০৯ ও ২০১০ সালে নগরীর পাহাড়তলী, সিআরবি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে মারা যান আরো ১৫ জন।

২০১১ সালের ১ জুলাই পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৮ জনসহ বাটালি পাহাড়ের রিটেইনিং দেয়াল ধসে ১৭ জন মারা যান। ২০১২ সালে ১৭ জুন নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনিসহ বিভিন্ন এলাকায় ২৩ জন মারা গেছেন। ২০১৩ সালে পাহাড় ও দেয়াল ধসে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। ২০১৪ সালে ১ জন। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে ৩ জন এবং ২১ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার মাঝিরঘোনা এলাকায় মা-মেয়ে মারা যান। ২০১৬ সালে নগরীতে কেউ মারা না গেলেও সে বছরের ১৩ জুন রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশে ২৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালের ১২-১৩ জুন রাঙামাটিসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলায় প্রাণ হারান ১৫৮ জন। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের আকবরশাহের ফিরোজশাহ কলোনিতে ৪ জন মারা যান।

বসবাসকারীদের মতে, শহর অঞ্চলে পাহাড়ের পাদদেশে তৈরি করা ঝুঁকিপূর্ণ বস্তি ঘরে কম টাকায় থাকতে পারে শ্রমজীবী লোকজন। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগও সহজে মেলে।

পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যারা: দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অভাবের তাড়নায় ছুটে আসা উদ্বাস্তু ও নিম্ন আয়ের লোকেরা সাধারণত এসব ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বল্প আয়ের এসব লোক না পারে ভালো কিছু খেতে, না পারে কিছু করতে। মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও করতে পারে না। অভাবের কারণে তাদের অনেক স্বাদ-আহ্লাদ থেকে যায়। যার ফলে তাদেরকে বসবাস করতে হয় পাহাড়ের চূড়ায় নয়তো রেল লাইনের পাশে।

পাহাড় ধস কেন হয়: প্রতি বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি এবং ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড় ধস হয়। যত্রতত্রভাবে পাহাড়ে বসবাস এবং অতিরিক্ত পাহাড় কাটার কারণে পাহাড় ধস হয়। পাহাড়ি বনাঞ্চল ধ্বংস করার কারণেও পাহাড় ধস হয়ে থাকে।

পাহাড় ধসের কারণে জলাবদ্ধতা: অতিরিক্ত পাহাড় কাটার কারণে বৃষ্টির সময় পাহাড়ের বালিগুলো ড্রেনে নেমে আসে এবং পলি জমাতে ড্রেনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। যার ফলে নগরীতে জলাবদ্ধতা চরম আকারে দেখা দেয়। পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পাহাড়ের পাদদেশে খুপরি ঘর ভাড়া দেয় এলাকার কিছু চিহ্নিত লোক। তাদের কারণেই মূলত লোকজনের ঝুঁকি বাড়ছে। ঝুঁকিতে বসবাসকারী লোকজনদের সরিয়ে নিতে নির্দেশ কোনোভাবে মানা হচ্ছে না। পাহাড়ের পাদশে খুপরি ঘর বানিয়ে ভাড়া প্রদানকারী প্রভাবশালী দুর্বৃত্তদের নিয়ে নানা তথ্য মিলছে। পাহাড় বিক্রি করে এদের অনেকে বিপুল অর্থের মালিক।

বিএনএনিউজ/মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ