বিএনএ, ঢাকা : বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী মানব পাচার, টেন্ডার ও নিয়োগ-বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতি অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন । হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। বিমানকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে অসংখ্য কর্মকর্তা নিজেরা মোটা- তাজা হয়েছেন। তাদের অনিয়মের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের অনেকেই জানতেন। তা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়মের বিষয়ে অবহিত করে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন । বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর কর্মকর্তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
দুদক থাবা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে কেউ কেউ বিভিন্ন দপ্তরে জোর তদবির চালাচ্ছেন। আবার কেউ পালিয়েছেন বিদেশে। ইতিমধ্যে অন্তত সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশ ছেড়ে গেছেন। অনেকে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা –তদবির চালাচ্ছেন।
জানা গেছে, নানা অনিয়ম করে ইতিমধ্যে দেশ ছেড়ে গেছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল খালেক। তিনি প্রায় একশ কোটি টাকা হাতিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়েছেন কানাডায়। আর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামানও দেড়শ কোটি টাকা নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
এই অবস্থায় প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিমানের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু কুমার গোস্বামীসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবারও তলব করেছে দুদক। তা ছাড়া বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামান, মো. মোকাব্বর আলী ও উপসহকারী প্রকৌশলী কাজী বায়েজিদ আহমেদকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কী কী প্রকল্পের কাজ হয়েছে তার তালিকা, এই দুই অর্থবছরে কেনাকাটা খাতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ, একই সময়ে নির্মাণ ও সংস্কার খাতে কত ব্যয় হয়েছে তার বিবরণ, আইটি খাতে কত বরাদ্দ ছিল এবং কী কী কাজ করা হয়েছে জানতে চেয়েছে দুদক।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে চাকরির আড়ালে মানব পাচারসহ নানা অপরাধ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । তা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। গত ২১ এপ্রিল মিজানের দুর্নীতির বিষয়ে দুদক চিঠি পাঠায় বিমানের চেয়ারম্যানের কাছে। এই মিজানের মতোই অন্তত ৩৭ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিষয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক।
দুদকের দেওয়া চিঠিতে, তালিকাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বেবিচক কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা আছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে ও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ অর্জন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা-সংক্রান্ত কোনো ধরনের বিভাগীয় অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে কি না তাও জানতে চাওয়া হয়। তা ছাড়া সাত ধরনের প্রকল্পের কাজসহ ৯ ধরনের নথিপত্র তলব করা হয়েছে।
দুদক থেকে চিঠি পেয়ে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল, নিজস্ব ইন্টেলিজেন্সের পাশাপাশি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে। চাকরির তথ্যের পাশাপাশি তাদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অপরাধ, মামলা-মোকদ্দমার তথ্য থাকবে ওই প্রোফাইলে।
দুদক সূত্র জানান, প্রকৌশল বিভাগ, হিসাব শাখা, লাইসেন্স নবায়ন শাখা, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, সম্পত্তি শাখা, পুরনো মালামাল ক্রয়-বিক্রয় শাখা, কল্যাণ শাখায় অনিয়ম হচ্ছে। পাশাপাশি রাডার মেরামত, কেলিব্রেশন, এক্সপ্রোসিভ ডিটেনশন সিস্টেম স্থাপন, বোর্ডিং ব্রিজের স্পেয়ার পার্টস ক্রয়, খান জাহান আলী বিমানবন্দর উন্নয়ন, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নয়ন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ওভারলেকরণ ও টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের রানওয়ে ওভারলেকরণ, প্যারালাল টেক্সিওয়ে, রানওয়ে সম্প্রসারণ এবং বিদ্যমান টার্মিনালের সম্প্রসারণ, কক্সবাজার বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, রানওয়ে সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন-সংক্রান্ত মেগা প্রকল্পে অনিয়ম হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার নীতি জিরো টলারেন্স। যারা অপরাধ করবে তারা শাস্তি পাবেই। দুদক যেকোনো সহযোগিতা চাইবে, তাদের সবধরনের সহায়তা করা হবে। বেবিচকে শুদ্ধি অভিযান চালানো হচ্ছে। সব বিভাগে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
বিএনএনিউজ/শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচ.এম/ হাসনা