25 C
আবহাওয়া
৫:৫৯ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কোথায় হারালেন ক্রিকেটার রাসেল?

কোথায় হারালেন ক্রিকেটার রাসেল?

রাসেল

বিএনএ স্পোর্টস ডেস্ক: সময়টা ২০০৫ সাল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বের দরবারে আস্তে আস্তে নিজেদের পরিচয় জানান দিচ্ছিল। অল্প পরিসরে সবকিছুই ছিল, ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং। ডানহাতি পেসার, স্পিন বোলার, নান্দনিক ব্যাটিং লাইনআপ। অভাব ছিল একজন বামহাতি পেসারের। ঠিক একই সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটে বামহাতি পেসার দিয়ে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড রীতিমত শাসন করে চলেছিলেন ক্রিকেটে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে তখন বাঁহাতি পেস বোলারের চরম আকাল তখনই অভিষেক হয়েছিলো একজন সম্ভবনাময়, ক্রিকেটীয় ভাবমূর্তি সম্পূর্ণ বামহাতি পেসারের। সেই উদীয়মান তরুণ পেসার সৈয়দ রাসেল।

২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা বোলার কে ছিলেন, এমন প্রশ্ন করলে ওই সময়ের কথা যাদের মনে আছে সবাই নিশ্চয়ই মাশরাফি (৯ উইকেট) অথবা রাজ্জাকের (১৩ উইকেট) নাম বলবেন। রাজ্জাকের সাথে রফিক (৮ উইকেট) আর সাকিব (৭ উইকেট) মিলে ‘লেফট আর্ম স্পিন ট্রায়ো’ তৈরি হওয়ায় তাদের নামগুলো প্রায় সময় একসাথেই উচ্চারিত হত। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটার কথাই ধরুন। ৩৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে মাশরাফি ম্যাচসেরা; কিন্তু ইনিংসের শুরুতে রাসেলের টানা ১০ ওভারের দুর্দান্ত স্পেলটা (১০-২-৩১-০) ভারতকে কী পরিমাণ চাপে রেখেছিল সেটাও নিশ্চয়ই মনে আছে অনেকের।

আরও পড়ুন: কোথায় হারালেন তাপস বৈশ্য?

এরপর জোহানেসবার্গ, ২০০৭। ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি’র উদ্বোধনী আসরে বাংলাদেশের উইন্ডিজ বধের অন্যতম নায়ক ছিলেন সৈয়দ রাসেল। ইনিংসের প্রথম ওভারেই আগের ম্যাচের ‘সেঞ্চুরিয়ান’ ক্রিস গেইলকে ০ রানে ফিরিয়ে দিয়ে মূল আঘাতটা কিন্তু রাসেলই হেনেছিলেন। কেবল এতেই ক্ষান্ত হন নি তিনি, ৪ ওভারের বিরতিহীন স্পেলে রান দিয়েছিলেন মাত্র ১০; ইকোনমি রেট ২.৫০!

বাংলাদেশ ক্রিকেটে বাঁহাতি পেস বোলিংয়ের রোমাঞ্চ প্রথম দেখিয়েছিলেন এই রাসেলই। কথা হলো, ৬ টেস্ট, ৫২ ওয়ানডে ও ৮ টি-টোয়েন্টি খেলা রাসেল এখন কোথায়? কেমন আছেন সাবেক তারকারা। কীভাবে কাটছে জীবন।

সৈয়দ রাসেল এখন একজন খামার ব্যবসায়ী। তিনি খামার নিয়ে আছেন এবং খামারি পরিচয়ে গর্ববোধ করেন। জাতীয় দলের সাবেক এ সুইং বোলার খামার ও মাছের ঘের দিয়ে আর্থিক দিক থেকেও শক্ত ভিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এজন্য নিরলস খাটেন- যেমন পরিশ্রম করতেন খেলার মাঠে, খেলোয়াড়ি জীবনে।

২০১০ সালের জুলাইয়ে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন রাসেল। তবে মাঝে গুজব ছড়িয়েছিল, খেলা ছেড়ে তিনি এলাকায় কাপড়ের ব্যবসা করছেন। ঝিকরগাছায় তার দোকানও আছে। খবরটির কোনো সত্যতা নেই বলেই জানিয়েছিলেন রাসেল, যে কাপড়ের দোকানের কথা শুনেছেন, ওটা আসলে আমার ছোট ভাইয়ের। বছর দুয়েক আগে এক স্থানীয় সাংবাদিকের সঙ্গে ওই দোকানে বসে কথা বলেছিলাম। এরপর সেটা ছড়িয়েছে অন্যভাবে। বোলিংয়ের মতো জীবনকে নিয়ন্ত্রিত রেখে এগোতে চান রাসেল।

উল্লেখ্য, রাসেল ওরফে রাসুর শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঝিকরগাছা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৯৯ সালে তিনি ঝিকরগাছা এম, এল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাস করেন। ২০০৪ সালে তিনি ঝিকগাছা শহীদ মশিয়ুর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন। এবং তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ শেষ করেন। রাসু ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার সাথে জড়িত ছিলেন।

১৯৯৮ সালে এম, এল পাইলট হাইস্কুল থেকে ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালে ঝিকরগাছা জাগরনী সংসদের পক্ষ থেকে যশোর যুব টিমে এবং আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এই বছরেই খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়াম থেকে ডাক পড়ে। খুলনা বিভাগীয় টিমে খেলে তিনি অপরাজিত চাম্পিয়ন হয়। ২০০১ সালে অনুর্ধ ১৭ কাপ ক্রিকেট বাংলাদেশ টিমে খেলার জন্য ডাক পড়ে তার এবং স্টান্ডবাই খেলোয়ার হিসেবে চান্স হয় তার ।

জাতীয় দলে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৫ টেস্ট খেলাই অভিষেক ঘটে এই বা-হাতি পেসারের। একদিনের খেলায় অভিষেক হয় শ্রীলঙ্কার সেই সফরেই। আর টি-২০ খেলায় অভিষেক ঘটে ১ সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে। ২০০৫ সালের টেস্ট খেলার অভিষেক হলে, ম্যাচ খেলেছেন ৬ টি, রান করেছেন ৩৭। বল করেছেন ৮৭৯ টি রান দেন ৫৭৩ আর উইকেট পেয়েছেন ১২ টি।

একই সালে একদিনের খেলাই অভিষেক হলেও ৬ বছরে ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র ৫২ টি ম্যাচ। বল করেছেন ২৬৫৭ টি রান দিয়েছেন ২০৫১ আর উইকেট নিয়েছেন ৬১ টি। ম্যাচের তুলনায় উইকেট খুব বেশি না হলেও রান চেকের কাজ টা খুব ভালো পারতেন যশোরের রাসু।

রাসেল ৪৪১ ওভার বল করেছেন যার মধ্যে ৪১ টাই মেডেন। ইকোনমি রেট সাড়ে ৪। কম রান দেওয়ার কারণে দর্শকরা তাকে কিপ্টা রাসেলও বলে ডাকতেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় হওয়ার পিছনে বিশেষ ভূমিকা আছে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয়লাভ। ওই বিশ্বকাপে যখন বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকা কে হারালো ওই ম্যাচেও ১০ ওভারে ৪১ রান দিয়ে নিয়েছিল ২ টি উইকেট।

একদিনের ক্রিকেট রাসেল ৫২ ম্যাচে ৪৪২.৫ ওভার বল করেছেন। যার মধ্যে ৪১টি মেডেন ওভার দিয়েছেন তিনি। ওয়ানডেতে মাত্র ৪.৬৩ ইকোনমি রেটে উইকেট নিয়েছেন ৬১টি। খুব একটা টেস্ট খেলার সুযোগ হয়নি যদিও, তবে টেস্টের ৬ ম্যাচর ৮টি ইনিংসে ৩.৯১ ইকোনমি রেটে বল করে ১২টি উইকেট উইকেট পেয়েছিলেন এই মিডিয়াম পেসার।

বিএনএনিউজ২৪/এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ