36 C
আবহাওয়া
১১:৫২ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৮৫ (যশোর-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৮৫ (যশোর-১)


বিএনএ,ঢাকা : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে যশোর-১ আসনের হালচাল।

যশোর-১ আসন 

যশোর-১  আসনটি শার্শা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৮৫ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩২ হাজার ১ শত ২৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৮ হাজার ১ শত ৩৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার বিজয়ী হন। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ৭ শত ৪৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নুর হোসেন। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ১৮ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মফিকুল হাসান (তৃপ্তি) কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির মফিকুল হাসান (তৃপ্তি) কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম  সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ  ৪৩ হাজার ৬ শত ৭৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৩  হাজার ১ শত ৬৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ১ শত ১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি’র আলী কদর। ধানের শীষ  প্রতীকে তিনি পান  ৪০ হাজার ৬ শত ৩৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আলী কদর বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮২ হাজার ২ শত ৬৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬১  হাজার ৮ শত ১০ জন। নির্বাচনে বিএনপির আলী কদর বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৬ হাজার ৫ শত ৮৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান  ৭৪ হাজার ২ শত ৫৪ ভোট।

  নবম সংসদ নির্বাচন:আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন  ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪ শত ১৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭ শত ৯২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন বিজয়ী হন। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান  ৯৩ হাজার ৮ শত ৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আজিজুর রহমান। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৮৮ হাজার ৭ শত  ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৩  হাজার ৬ শত  জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২০ হাজার ৪৫ জন।

একাদশ জাতীয় সংসদে যশোর-১ আসনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে শেখ আফিল উদ্দিন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মফিকুল হাসান তৃপ্তি, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টি সাজেদুর রহমান, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বকতিয়ার রহমান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ১১ হাজার ৪ শত ৪৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মফিকুল হাসান তৃপ্তি। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৪ হাজার ৯ শত ৮১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, যশোর-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ এবং ষষ্ঠ ও  অষ্টম সংসদে বিএনপি বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর যশোর-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৪.২৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.৪৫%, বিএনপি ২১.০১%, জামায়াতে ইসলামী ৩৩.৬৫%, জাতীয় পার্টি  ৭.৫০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩৯% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৭২%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.৪৪%, বিএনপি ৩২.৯৯%, জাতীয় পাটি ২.১২%, জামায়াতে ইসলামী ২৬.২২ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.২৩% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৭৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৫.৮৯%, ৪দলীয় জোট ৫৩.৫১%, জাতীয় পার্টি ০.৪২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.১৮%  ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯৩.১০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫১.৪৫%, ৪ দলীয় জোট ৪৮.২৬%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ০.২৯% ভোট পায়।

যশোর-১ (শার্শা উপজেলা)  সংসদীয়  আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার, ১৯৭৯ সালে বিএনপির আলী তারেক, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম, ১৯৮৮ সালে জামায়াতে ইসলামীর নূর হোসেন, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের তবিবুর রহমান সরদার, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী বিএনপির মফিকুল হাসান তৃপ্তি, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন আওয়ামী লীগের তবিবুর রহমান সরদার, ২০০১ সালে বিএনপির আলী কদর, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে শেখ আফিল উদ্দিন পুনরায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সর্বশেষ ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শিল্পপতি শেখ আফিল উদ্দিন। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন।

এছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য নাজমুল হাসান মনোনয়ন চাইবেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু ও যুগ্ম আহ্বায়ক- হাসান জহির।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, যশোর-১ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ। বর্তমান শেখ আফিল উদ্দিন ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর এই আসনে একক নিয়ন্ত্রণ কর্তা হয়ে ওঠেন। তার বিপরীতে বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন একটি দলীয় বলয় তৈরি করেছেন। যা দ্বাদশ জাতীয় সংসদে প্রভাব ফেলবে। বিএনপিতেও কোন্দল রয়েছে। তবে তা আওয়ামী লীগের মতো প্রকট নয়।

বিএনপি চাইবে তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ চাইবে ধারাবাহিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৮৫তম যশোর- ১ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ