37 C
আবহাওয়া
৩:৩৮ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৪৬ (ময়মনসিংহ-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৪৬ (ময়মনসিংহ-১)


বিএনএ ডেস্ক : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ময়মনসিংহ-১ আসনের হালচাল।

ময়মনসিংহ-১ আসন 

ময়মনসিংহ-১ সংসদীয় আসনটি হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৪৬তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের প্রমোদ মানকিন বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৬ শত ৬৭জন। ভোট প্রদান করেন ৭৪ হাজার ৩ শত ১৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রমোদ মানকিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৭ হাজার ১শত ৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির এমদাদুল হক। লাঙল প্রতীকে তিনি পান ১৯ হাজার ৩শত ৯০ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আফজাল এইচ খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির আফজাল এইচ খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আফজাল এইচ খান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪০হাজার ৪শত ৪৯জন। ভোট প্রদান করেন ৯৮ হাজার ১ শত ২০জন। নির্বাচনে বিএনপির আফজাল এইচ খান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪২ হাজার ৩ শত ৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রমোদ মানকিন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ৪ শত ১০ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের প্রমোদ মানকিন বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪ শত ৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১লাখ ২৫ হাজার ৩ শত ৩৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রমোদ মানকিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ৮ শত ৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আফজাল এইচ খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ২ শত ৮০ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের প্রমোদ মানকিন বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৪ হাজার ৭শত ৭০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৮ শত ৬১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রমোদ মানকিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪২ হাজার ৯ শত ৮১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আফজাল এইচ খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯১ হাজার ৩ শত ৪৫ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের প্রমোদ মানকিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রমোদ মানকিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের জুয়েল আরেং বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭৭ হাজার ২ শত ৯৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪ শত ১৫ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের জুয়েল আরেং, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আফজাল এইচ খান এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের হুমায়ুন মো: আব্দুল্লাহ আল হাদী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

উল্লেখ, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রয়াত আলী আসগর দল থেকে মনোনয়ন পেলেও পরে তা সালমান ওমর রুবেলকে দেয়া হয়। কিন্তু ব্যাংক ঋণ জটিতলায় শেষ পর্যন্ত সালমান ওমর রুবেল বাদ পড়লে এই মনোয়ন পান সাবেক বিচারপতি টিএইচ খানের পুত্র সাংবাদিক আফজাল এইচ খান।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জুয়েল আরেং, বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৫৮ হাজার ৯ শত ২৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আফজাল এইচ খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ২৮ হাজার ৬ শত ৩৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ষষ্ঠ ও সপ্তম সংসদে বিএনপি এবং পঞ্চম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ময়মনসিংহ-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ময়মনসিংহ-১ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫২.০৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.৫৯%, বিএনপি ২৩.১০%, জাতীয় পাটি ২৬.০৯%, , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৪.২২% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.৮৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০.৯৯%, বিএনপি ৪৩.১৬%, জাতীয় পাটি ২২.৬৯% , জামায়াতে ইসলামী ২.০৫ % , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.১১% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৫.৩২ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.১৯ %, ৪ দলীয় জোট ৩২.৯৩%, জাতীয় পার্টি ২৮.৫৪%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩৪% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৩.৭৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৯.৯২ %, ৪দলীয় জোট ৩৮.২৮% , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৮% ভোট পায়।

ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়া উপজেলা) আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য প্রয়াত সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও আদিবাসী নেতা প্রমোদ মানকিন এমপির পুত্র জুয়েল আরেং। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। আরও মনোনয়ন চাইবেন, আনন্দমোহন কলেজের ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ খান, বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী প্রতিকা চিছামের স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা নিঃশেষ দ্রং।

তবে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ নানা শ্রেণী পেশার ভোটারদের কাছে আলাদা গ্রহণযোগ্যতার তালিকায় রয়েছেন প্রবীণ ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজের অধিকারি ফারুক আহমেদ খান।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, সাবেক বিশিষ্ট সাংবাদিক আফজাল এইচ খান, দানবীর হিসেবে আলোচিত ব্যবসায়ী সালমান ওমর রুবেল ।

তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়া উপজেলা) আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। বিগত ১১টি সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাতবার, বিএনপির প্রার্থী দুই বার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুইবার বিজয়ী হয়েছেন। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ফের আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আসে। ওই সময় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রতিমন্ত্রী ও আদিবাসী নেতা প্রমোদ মানকিন। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ ও সপ্তম সংসদ নির্বাচনে তা বিএনপির দখলে যায়। ২০০১ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত আসনটি দখলে রাখতে সক্ষম হয় আওয়ামী লীগ। ২০১৬ সালে প্রমোদ মানকিন মৃত্যুবরণ করলে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তারই পুত্র জুয়েল আরেং। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ফের তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এই আসনে আদিবাসী ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। এই আসনে আদিবাসী ভোটাররাই মূল ফ্যাক্টর। এই আসনে আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রবীণ অনেক নেতা কর্মীর সঙ্গেও দূরত্ব বেড়েছে এমপি জুয়েল আরেংয়ের। এলাকার উন্নয়ন বঞ্চনা নিয়েও রয়েছে নানা হতাশা। যা নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে।

বিএনপিতে দৃশ্যমান কোনো কোন্দল না থাকলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রুপিং রয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৪৬তম সংসদীয় আসন ময়মনসিংহ-১ সংসদীয় আসনটি হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়া আসনে আওয়ামী লীগই ফেবারিট বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।

বিএনএ/ শিরীন, রাহেনা, ওজি, ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ