বিএনএ, ঢাকা : ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গ থেকে নারায়নগন্জ রুপগন্জের আগুনের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ২৪জনের মরদেহ তার আ্ত্নীয় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বেলা ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত মরদেহগুলোর হস্তান্তের প্রক্রিয়া শেষ করেন। হাসপাতাল মর্গে সামনে প্রায় দুই শতাধিক মানুষের উপস্হিতি ছিল। তারা সকাল থেকেই মরদেহ গ্রহণ করা জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। এদের মধ্যে কেউ দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে, কেউ মাটিতে বসে। আবার কেউ দুই হাত দিয়ে গ্রিল ধরে অপেক্ষা করছিলেন । পুড়ে অঙ্গার প্রিয়জনের মরদেহ পাওয়ার জন্য এ অপেক্ষা তাদের।
যে ২৪ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে তারা হলেন : মো. আয়াত হোসেন, মো. নাঈম ইসলাম, নুসরাত জাহান টুকটুকি, হিমা আক্তার, মোসা. সাগরিকা শায়লা, খাদেজা আক্তার, মোহাম্মদ আলী, তাকিয়া আক্তার, মোসা. শাহানা আক্তার, মোসা. মিতু আক্তার, জাহানারা, মোসা.ফারজানা, মোসা. ফাতেমা আক্তার, মোসা. নাজমা খাতুন, ইসরাত জাহান তুলি, মোসা. নাজমা বেগম, রাশেদ, মো. রাকিব হোসেন, ফিরোজা, মো. তারেক জিয়া, মো. রিপন মিয়া, মোসা. শাহানা আক্তার, মো. মুন্না ও রিয়া আক্তার।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৮ শ্রমিকের মধ্যে ২৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর করে সিআইডি ও ঢামেকে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাকসুদুল আলমসহ অন্যান্য চিকিৎসকরা। এই মরদেহগুলো বুঝে নিতেই স্বজনদের সকাল থেকে এ অপেক্ষা।
সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ সুত্রে জানা যায় , মরদেহগুলো পুড়ে অঙ্গার ও বীভৎস হয়ে গেছে। মুখ দেখে এগুলো চেনার উপায় নেই। তাই ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে তাদের দাঁত ও টিস্যু সংগ্রহ করে পরিবারের সঙ্গে ডিএনএ মেলানো হয়েছে। মরদেহ নেয়ার জন্য ঢামেক মর্গে দেখা গেছে স্বজনদের অনেক ভিড় । মরদেহ কফিনে নেওয়া হলেই ডাক দেওয়া হচ্ছে স্বজনদের। সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসন মরদেহ দাফন কাফনের জন্য তাদের ২৫ হাজার টাকা দিয়ে মরদেহ বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
মেয়ের মরদেহ নিতে আসা নেত্রকোনার মোহাম্মদ আলী বলেন, ২৫ দিন অপেক্ষায় ছিলাম। গতকাল মঙ্গবার ফোন পেয়ে ভোরে চলে আসি। মেয়েকে দেখে চিনতে পারিনি। অন্তত তার শরীরটা মাটিচাপা দিয়ে শান্তি পাবো।
দুপুর থেকেই ঢামেক জুড়ে স্বজনদের আহাজারি। মায়ের জন্য মর্গে আসা জাকিরের কান্না যেন কোনোভাবেই থামছে না। জাকিরের মা জাহানারা বেগম ওই কারখানার চতুর্থ তলায় কাজ করতেন। মাকে নিতে না পারলেও এবার মায়ের মরদেহ কিশোরগঞ্জের মাতুয়াপাড়ায় নিয়ে যাবেন তিনি।
মায়ের কফিনের সামনে আহাজারি করে জাকির বলেন, ‘আমার মা তো চলে গেল। আর তো পাবো না। আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। এই আমার আপনাদের কাছে চাওয়া।
১৬ বছরের মুন্নার মরদেহ নিতে এসেছে বাবা গিয়াস উদ্দিন। নিজেকে সামলাতে পারবেন না বলে তার সঙ্গে এসেছেন মুন্নার ফুপা কুতুবউদ্দিন, ফুপু রোকসানা।
এছাড়াও কারখানার কর্মচারী শাহীনুরের মরদেহ বুঝে নিয়েছে ১৪ বছরের তানিয়া, মোহাম্মদ আলীর মরদেহ নিয়েছে তার বাবা শাহদাত খান। ১২ বছরের হাসনাঈনের নিথর মরদেহ নিতে এসেছেন তার মা নাজমা।
উল্লেখ্য, ৮ জুলাই সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে (সেজান জুসের কারখানা) আগুন লাগে। এ ঘটনায় ৫২ জনের মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেম, তার চার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। পুলিশ তাদের চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের আদালতে হাজির করা হলে মালিক আবুল হাসেমসহ ছয়জনকে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে হাসেমের দুই ছেলের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
বিএনএ/আজিজুল, ওজি