26 C
আবহাওয়া
৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ‘মুখোত আওয়াজ নাই অ’বাজি কি ধান হাইট্টুম’

‘মুখোত আওয়াজ নাই অ’বাজি কি ধান হাইট্টুম’

‘মুখোত আওয়াজ নাই অ'বাজি কি ধান হাইট্টুম’

বিএনএ, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম): এক হানি জমিন চাষ গইরতে ১২ আজার টিয়া হরচ। কি ধান হাইট্টুম, ধান তো বেক্কিন লবণের পানি আর গুনগুনি রোগে হাই পেলাইয়্যি। এগিন ধান নয়, খ্যার হাডিত দিই। মুখোত আওয়াজ নাই অ’বাজি। (এক খানি জমিন চাষ করা ১২ হাজার টাকা খরচ। কি ধান কাটবো সব ধান তো লবণের পানি আর গুনগুনি রোগে (ব্লাস্ট) নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো কোন ধান নয়, এগুলো কতগুলো ঘাস। মুখে কোন শব্দ নেই বাপ, কি করব এমনে কাটতেছি আরকি)।

প্রতিবারের মতো এবারও তিনখানি জমি চাষ করেছেন আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর এলাকার কৃষক আইয়ুব আলী। তার মধ্যে ৯২ এক খানি আর ব্যক্তির ২৮ এক খানি। আর বাকী এক খানি দেশীয় ধান। এগুলো আবাদ করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। বাম্পার ফলনের আশা থাকলেও এবারে আবাদ হওয়া তার তিন খানি জমি লবণাক্ত পানি আর ব্লাস্ট রোগে পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। শনিবার (২৯ এপ্রিল) আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর গ্রামে তার আবাদ করা বোরো ধান কাটতে গিয়ে হতাশ হয়ে কৃষক আইয়ুব আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন। এসময় তিনি ধানের মাঠেই বসে পড়েন।

কৃষকরা জানায়, বৈশাখের এসময়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় পুরোদমে চলে বোরো মাড়াইয়ের কাজ। বোরোর বাম্পার ফলনে মাঠজুড়ে সোনালি ধানে ঝিক ঝিক করার কথা থাকলেও এবার বোরোর ফলনে হতাশ আনোয়ারার ১২ হাজার কৃষক। গেলো বেশ কয়েক বছর ধরে আনোয়ারায় বোরোর বাম্পার ফলনে পেয়েছে সাফল্য। তবে আনোয়ারায় এবার বোরোর ফলনে হতাশ কৃষকরা।

কৃষক ও বিভিন্ন ব্লগে দায়িত্বরত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানায়, এবার উপজেলার ৫ হাজার ৯শ ৮০ হেক্টর আবাদ হওয়া বোরোতে লবণের পানিতে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তার উপর এসব ফসল একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে ’নেক ব্লাস্ট’ নামে একটি রোগ। এই রোগে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন চাষিরা। নেক ব্লাস্ট এর জন্য শুকিয়ে চিট হয়ে গেছে ধানের শীষ। বিশেষ করে সরকারি দেওয়া নাম্বারি ধানগুলোতে দেখা দিয়েছে এই রোগ। কৃষি কর্মকর্তারা এর সঠিক সমাধান দিতে পারছেননা বলে জানিয়েছেন একাধিক কৃষক।

মুখোত আওয়াজ নাই অ'বাজি কি ধান হাইট্টুম
আনোয়ারার একটি ধানখেত

আনোয়ারা কৃষি সম্প্রাসারণ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার এগারোটি ইউনিয়নে ৫ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাদের পর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিবারের মত এবারও বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বোরো রোপনের কিছুদিন পর খালে আসে লবণাক্ত পানি। এরপর মাঝখানে বৃষ্টি হলে লবণের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠলেও ধান বের হবার পর ছত্রাকজাতীয় নেক ব্লাস্ট রোগে খেতের অধিকাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

আনোয়ারায় এই বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৯৮০ হেক্টর। তার মধ্যে হাইব্রিড ১৮৫৫ হেক্টর জমি আর উফশী ৪১১৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়। এতে হাইব্রিড হেক্টর প্রতি ৪.৭ মে. টন আর উফশী ৩.৬ মে. টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুসারে চলতি বুরো মৌসমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৩৫৩২.৫ মে. টন নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষিবিদরা মনে করছেন, কর্ণফুলী নদীর পানির মাধ্যমে এই দক্ষিণ অঞ্চলে বোরো আবাদ হয়। কিন্তু এবার বোরো রোপনের পর থেকে দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হওয়ায় কর্ণফুলী নদীর পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। এটা একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত দেখা দিয়েছে। লবণাক্ত পানির কারণে ফসলে বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিয়েছে। এবং সেচের এই লবণাক্ত পানিতে পুরো ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

বারখাইন এলাকার কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেন ছয় একর জমিতে। লবণের পানিতে এমনিতে ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে কিন্তু গত এক সপ্তাহে নেক ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে গিয়েছে দুই একর ফসল। তাছাড়া বাকি ধানখেতও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বিলপুর এলাকার অন্য কৃষক ইসমাঈল বলেন, এবার বোরো চাষ করেছি দুই একর জমিতে। মনে করছিলাম মাঝখানের বৃষ্টি লবণের ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে। এখন দেখা যাচ্ছে মাঠে লবণ বসে আছে ধান কাটতে গিয়ে দেখি ছিটা ছাড়া ধান বলতে কিছুই নাই।

এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা কৃষি অফিসার রমজান আলী বলেন, আসলে দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হওয়াটা ফসলের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি লবণাক্ত পানি বের করে দিয়ে মিঠা পানি ঢুকাতে। তবে এবার পুরো কর্ণফুলীর পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে এখানে করার কিছুই ছিলো না। লবণের কারণে এমনিতে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে এর মাঝে তাপ প্রবাহের কারণে বিভিন্ন রোগবালাই হয়েছে। যার ফলে এবার বোরোতে ফসল উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছি।

বিএনএনিউজ/এনামুল হক নাবিদ,বিএম,জিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ