30 C
আবহাওয়া
৬:২৯ পূর্বাহ্ণ - মে ২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » খাগড়াছড়িতে অনুমোদনহীন ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

খাগড়াছড়িতে অনুমোদনহীন ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ


বিএনএ, খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় বাংলাদেশ সরকারের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন ও নিয়ন্ত্রন আইন ২০১৩ ও উচ্চ আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে চলছে ইট ভাটা। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ৬ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, কোন ব্যক্তি ইট ভাটায় জ্বালনি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করতে পারবেননা। একই আইনের ১৬ ধারায় আইন অমান্য করলে অনধিক ৩ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। আইনের ৪ ধারায় জেলা প্রশাসকের অনুমতি ব্যতিত কোন ইট প্রস্তুত করা যাবেনা। ৫ নং ধারায় কৃষিজমি বা পাহাড় , টিলা ভূমি, কেটে মাটি সংগ্রহ করা যাবেনা। এসব আইনের তোয়াক্কা করেন না ইট ভাটার মালিকরা।

বাংলাদেশ সরকারের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন ও নিয়ন্ত্রন আইন ২০১৩ মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং ১২০৪/২০২২ এর ২৫শে জানুয়ারি ২০২২ তারিখের আদেশ মোতাবেক ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ইং তারিখ সকাল সাড়ে ১১টা হতে ৬টি উপজেলার ২৭টি ইট ভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছিল।

ইট ভাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছেন না কেউ।  প্রচলিত আইনে জনবসতি, ফসলি জমি, বনজঙ্গল ও পাহাড় কেটে ইটভাটা নির্মাণে বিধিনিষেধ থাকলেও তা অমান্য করেই এই ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। চলছে পাহাড় কাটার হিড়িক।

এছাড়াও ইট ভাটাগুলোতে যেন কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব চলছে। ইট ভাটাগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহৃত হওয়ায় উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। কোন রকম পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ভাটা গুলো।

উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন অনুসারে অবৈধ ইটভাটার কাযর্ক্রম বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৬টি উপজেলায় ২৭টি ইটভাটা গত বছরের ১২ ফেব্রুুয়ারী সীলগালা ও বন্ধ ঘোষণা করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। বন্ধ হওয়া ইট ভাটার মধ্যে রামগড়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ৯টি ইটভাটা সিলগালা করে দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। রামগড় পৌরসভার ফেনীরকুল এলাকার নুর ইসলাম, হাফেজ আহাম্মদ, মোস্তফা ভূঁইয়া ও আবদুল মান্নানের মালিকানাধীন ৪টি এবং তাছাড়া ইউনিয়নের দাতারাম পাড়া এলাকার মেগনা ১ ও ২, আপন, জনতা ও এসএসসহ আরও ৫টি ইটভাটা সিলগালা করে দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। দীঘিনালাতে ২টি ইটভাটা , মাটিরাঙ্গায় ৬টি ইটভাটা সীলগালা করা হয়।
এ ছাড়া গুইমারা উপজেলার আমতলীতে ফোর স্টার ব্রিক ফিল্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।মালিক বিএনপি নেতা শহীদ কোম্পানি। তারা ব্রিক ফিল্ড, এসবিএম ব্রিক ফিল্ড, বাইল্যাছড়িতে কামাল ব্রিকফিল্ডসহ ৫টি ইটভাটাকেও বন্ধ করে দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে এসব ইট ভাটায় পুরোদমে তৈরি হচ্ছে ইট। ব্যবহার হচ্ছে ড্রাম চিমনি। কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি।

এ ব্যাপারে গুইমারার ফোর স্টার ব্রিকফিল্ডের মালিক শহিদ কোম্পানি বন্ধ হওয়া ইট ভাটা চালুর ব্যাপারে বলেন, আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে ভাটা চালু করেছি।
একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে আদালতের স্থগিতাদেশ ৩০/১২/২২ তারিখে শেষ হয়েছে। তারপর ও চলছে ভাটাগুলো।

মানিকছড়ি উপজেলায় দুইটি ইটভাটা বন্ধ ঘোষণা করেছিল উপজেলা প্রশাসন। তুলাবিলে অবস্থিত সেলিম এন্ড ব্রাদার্স ও পান্নাবিলে অবস্থিত থ্রী স্টার নামীয় ইটভাটা দুইটি সিলগালা করা হয়।

পানছড়ি উপজেলার ৩টি ইটভাটা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। উপজেলার নালকাটা এলাকায় সততা, এমএসআর ও লোগাংয়ে সেলিম এন্ড ব্রাদার্স নামের ইটভাটা তিনটির অবস্থান।

দীঘিনালার দুটি ইট ভাটা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হেডম্যান পাড়ার এডিবি ব্রিক ফিল্ড ও রসিকনগরের মেসার্স সেলিম এন্ড ব্রাদার্স ভাটাকে বন্ধ ঘোষণা ও সেখানে লাল পতাকা টাঙিয়ে সিলগালা করে দেওয়া হয়।
মাটিরাঙ্গায় অবৈধভাবে গড়া ওঠা আরও ৬টি ইটভাটা সীলগালা করে দিয়েছিল মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান বলেন, শুনেছি মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার স্থগিতাদেশ নিয়ে ইট ভাটাগুলো পুনরায় চালু করেছে। আমি যেহেতু নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। অফিসিয়াল মন্তব্য করতে পারছিনা। কাগজপত্র দেখে বলতে পারব। উপযুক্ত ডকুমেন্ট না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

স্থানীয়রা জানায়, ইটভাটা বন্ধ ঘোষনায় তারা সন্তুষ্ট ছিল কারণ এই ভাটা গুলো পরিবেশের জন্য ছিল হুমকি। এখন চালু হওয়ায় শংকিত জনগণ।
জানা যায় , হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সমস্ত অবৈধ ইট ভাটা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। এসব ইটভাটা সম্পুর্ন অবৈধ প্রক্রিয়ায় জেলা প্রশাসকের অনুমতি ব্যতিত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
ভাটায় কাঁচামাল হিসেবে কৃষি জমির উপরিভাগের (টপসয়েল) মাটি ব্যবহার ও জ্বালানী হিসেবে বনের কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। কচি গাছ পুড়িয়ে ইট বানানোর ফলে উজাড় হচ্ছে বন। ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে বনভুমি। ব্যবহার করা হচ্ছে সনাতন পদ্ধতির ড্রাম চিমনি। জ্বালানী হিসেবে কয়লার ব্যবহার করার কথা থাকলেও আইনের কোন তোয়াক্কাই করছে না ইট ভাটার মালিকরা।

উল্লেখ্য যে, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলায় লাইসেন্স বিহীন ইটভাটা বন্ধে দায়ের করা এক রীটের শুনানী শেষে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের হাইকোর্ট বেঞ্চ রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন।

বিএনএ/ আ,হো

Loading


শিরোনাম বিএনএ