28 C
আবহাওয়া
৬:৩১ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন আর নেই

কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন আর নেই

কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন আর নেই

বিএনএ,ঢাকা:প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন ইন্তেকাল করেছেন।ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।রোববার(৩ জানুয়ারি)সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে রাজধানী ঢাকার স্পেশালাইজড হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।বার্ধক্যজনিত কারণে রাবেয়া খাতুন মারা গেছেন বলে তার পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমিসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিকের বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

সাহিত্যের সব শাখায় সফলভাবে বিচরণ করেছেন রাবেয়া খাতুন।দীর্ঘ জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন তেমনি অসংখ্য পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন।

কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার,বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার,নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক,জসিমউদ্দিন পুরস্কার,শেরে বাংলা স্বর্ণপদকসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন তিনি।

উপন্যাস,ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী,কিশোর উপন্যাস,স্মৃতিকথাসহ চলচ্চিত্র ও নাট্য জগতেও বিচরণ রাবেয়া খাতুনের।তার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘মেঘের পরে মেঘ’ জনপ্রিয় একটি চলচ্চিত্র।‘মধুমতি’ এবং ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টিও সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে।

বাংলা একাডেমি,চলচ্চিত্র জুরি বোর্ড, লেডিস ক্লাব,বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ,মহিলা সমিতিসহ অসংখ্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রাবেয়া খাতুন।

কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত হলেও রাবেয়া খাতুন এক সময় শিক্ষকতা করেছেন।সাংবাদিকতার সঙ্গেও দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন।ইত্তেফাক, সিনেমা পত্রিকা ছাড়াও তার নিজস্ব সম্পাদনায় পঞ্চাশ দশকে বের হতো ‘অঙ্গনা’নামের একটি মহিলা মাসিক পত্রিকা।

রাবেয়া খাতুনের প্রকাশিত পুস্তকের সংখ্যা একশরও বেশি।এর মধ্যে রয়েছে উপন্যাস, গবেষণাধর্মী রচনা, ছোটগল্প, ধর্মীয় কাহিনী, ভ্রমণকাহিনী, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথা ইত্যাদি।রেডিও, টিভিতে প্রচারিত হয়েছে অসংখ্য নাটক, জীবন্তিকা ও সিরিজ নাটক।তার গল্পে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে কয়েকটি।

রাবেয়া খাতুন উপন্যাস লিখেছেন পঞ্চাশটিরও বেশি।এ পর্যন্ত চার খণ্ডে সংকলিত ছোটগল্প সংখ্যায় চারশর বেশি।ছোটদের জন্য লেখা গল্প-উপন্যাসও সংখ্যায় কম নয়। রাবেয়া খাতুন বাংলাদেশের ভ্রমণ সাহিত্যের প্রধানতম লেখক।প্রথম উপন্যাস মধুমতী (১৯৬৩) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শক্তিমান কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি পান।ক্ষয়িষ্ণু তাঁতী সম্প্রদায়ের জীবন সংকট ও উঠতি মধ্যবিত্ত জীবনের অস্তিত্ব জিজ্ঞাসার মধ্যে ব্যক্তিকে আবিষ্কার করেছিলেন রাবেয়া খাতুন এই উপন্যাসে।

রাবেয়া খাতুন ভ্রমণ সাহিত্য রচনাকে গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম হিসেবে বিবেচনা করেছেন বলে তাঁর ভ্রমণ সাহিত্যের বইও অনেক।বেশকিছু আত্মজৈবনিক স্মৃতিমূলক রচনা লিখেছেন।একাত্তরের নয় মাস (১৯৯০) বইয়ে লিখেছেন একাত্তরের শ্বাসরূদ্ধকর দিনগুলোর কথা।

১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর তৎকালীন ঢাকার বিক্রমপুরে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন রাবেয়া খাতুন। তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে।বাবা মৌলভী মোহাম্মদ মুল্লুক চাঁদ ও মা হামিদা খাতুন।১৯৪৮ সালে আরমানিটোলা বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা (বর্তমানে মাধ্যমিক) পাস করেন। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে হওয়ায় বিদ্যালয়ের গন্ডির পর তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায় তার।

১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই এটিএম ফজলুল হক ও রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। প্রয়াত এটিএম ফজলুল হক ছিলেন দেশের চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রথম পত্রিকা সিনেমার সম্পাদক ও চিত্রপরিচালক।বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’ এর পরিচালকও তিনি।

এদিকে, রাবেয়া খাতুনের মৃত্যুতে শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সোমবার(৪ জানুয়ারি) ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তার মরদেহ রাখা হবে। এরপর দুপুর ২টায় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে মরহুমার দাফন সম্পন্ন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিএনএনিউজ/আরকেসি

Loading


শিরোনাম বিএনএ