25 C
আবহাওয়া
১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৫৭

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৫৭

কারাগারের রোজনামচা

দেখেই খুশি হলাম যে আমি ও আমার সহকর্মীরা অনেকেই জেলে আটক থাকা অবস্থায়ও আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীরা শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন চালাইয়া যাওয়ার সঙ্কল্প করিয়াছে। রক্ত এরা বৃথা যেতে দিবে না। সৈয়দ নজরুল ইসলাম এঙ্কিং সভাপতি, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের। তার সভাপতিত্বে ১১ ঘণ্টা ওয়ার্কিং কমিটির সভা হয়েছে। মিজানুর রহমান চৌধুরী জাতীয় পরিষদে যোগদান করতে পিন্ডি চলে গেছে। ১৭ই, ১৮ই, ১৯শে জুন ‘জুলুম প্রতিরোধ’ দিবস উদযাপন করার আহ্বান জানাইয়াছে আওয়ামী লীগ । আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটি ১৬ই আগস্টের পূর্বে সমস্ত গণবিরোধী ব্যবস্থার অবসান দাবি করিয়াছে। তা না করিলে ১৬ই আগস্ট থেকে জাতীয় পর্যায়ে গণআন্দোলন শুরু করা হবে। মনে মনে ভাবলাম আর কেউ আন্দোলন নষ্ট করতে পারবে না। দাবি আদায় হবেই ।

৬ দফার বাস্তবায়নের সংগ্রাম আওয়ামী লীগ অব্যাহত রাখবে তাও ঘোষণা

করেছে এখন আর আমার জেল খাটতে আপত্তি নাই, কারণ আন্দোলন চলবে। ভাবতে লাগলাম কর্মীদের টাকার অভাব হবে। পার্টি ফান্ডে টাকা নাই । আমিও বন্দোবস্ত করে দিয়ে আসতে পারি নাই। মাসে যে টাকা আদায় হয় তাতে অফিসের খরচটি চলে যেতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস আছে, অর্থের জন্য কাজ বন্ধ হয়ে থাকে না। জনসমর্থন যখন আওয়ামী লীগের আছে, জনগণের প্রাণও আছে। আমি দেখেছি এক টাকা থেকে হাজার টাকা অফিসে এসে দিয়ে গিয়াছে, যাদের কোনো দিন আমি দেখি নাই। বোধ হয় অনেককে দেখবোও না । ভরসা আমার আছে, জনগণের সমর্থন এবং ভালবাসা দুইই আছে আমাদের জন্য । তাই আন্দোলন ও পার্টির কাজ চলবে।

সন্ধ্যার একটু পূর্বে বরিশাল থেকে বাবু চিত্ত সুতারকে নিয়ে এসেছে । আমার সামনেই বিশ সেলের ৫নং ব্লকে রেখেছে। এখানে পাবনার রণেশ মৈত্রও

থাকেন । পরীক্ষা দিতে এসেছেন । দুইজন এক সাথেই থাকবে । ইনি এমপি ছিলেন, খুব নিঃস্বার্থ কর্মী । তাঁকেও ডিভিশন দেওয়া হয় নাই তাঁর কাছ থেকে খবর পেলাম আমার ভগ্নিপতির সাথে জাহাজে দেখা হয়েছে, আমার মা অনেকটা ভাল । মনে একটু শান্তি পেলাম ।

চিত্তবাবু বললেন, অন্যান্য দল ভুল করেছে আওয়ামী লীগের ডাকে সাড়া না দিয়ে । আর আলাপ হতে পারল না। কারণ আমি রাস্তায় ছিলাম তাই একটু কথা হলো । তারপর তারা যার যার ব্লকে চলে গেল । আমি আমার ব্লকে একা, একেবারে একা । কথা বলারও লোক নাই, কয়েকজন সাধারণ কয়েদি ছাড়া ডাক পড়েছে, বুড়া জমাদার সাহেব বন্ধ করতে এসেছেন হ্যারিকেন জ্বালিয়ে কাগজ কলম নিয়ে আমার লেখার কাজে বসে পড়লাম ।

১৩ই জুন ১৯৬৬ ॥ সোমবার

আজকাল খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠি স্বাস্থ্য রক্ষা করারও চেষ্টা করি । বাইরে বসার জায়গায় যখনই বসেছি দেখি ইউনুস এসে হাজির। ঝাড়ু দেওয়ার কাজ করে । ইউনুসের বিশ বছরের সাজা হয়েছে খুনের মামলা । সে বলে কিছুই জানি না এর বেশি কিছু গোছাইয়া বলতে পারে না ।

সূত্র : কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ৮৫-৮৬ লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান, প্রকাশকালঃ ফাল্গুন ১৪২৩/ মার্চ ২০১৭

আরও পড়ুন :

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৫৬

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৫৫

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৫৪

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৫৩

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৫২

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৫১

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৫০

গ্রন্থনা ও পরিকল্পনাঃ ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনাঃ হাসিনা আখতার মুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ