বিএনএ, চবি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল হাসান সামাজিক কাজে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি বছর যুক্তরাজ্যের সম্মানজনক ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। আবদুল্লাহ সামাজিক সমতা নিশ্চিত করে বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন নিয়ে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
শনিবার (১ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চলতি বছরের ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের নাম জানানো হয়।
পড়াশোনার পাশাপাশি আব্দুল্লাহ পথচলা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। পথচলা ফাউন্ডেশনের সাথে সম্পৃক্ততার সুবাদে তিনি ২৭৮টি কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে ১ হাজার ৪১২ জন তরুণকে ব্যবসায় উদ্যোগ, নেতৃত্ব এবং যোগাযোগ দক্ষতার প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতায়নে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর সাথে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প প্রচারে ও নেতৃত্ব প্রদানে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছেন।
আব্দুল্লাহ এবং তার সংগঠন সিলেট ও ময়মনসিংহে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ২টি ওয়েলবিং সামিট আয়োজন করে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপও নেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তৃণমূল এবং উপকূলীয় অঞ্চলের ২৫০ জন তরুণের সমন্বয়ে একটি মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা দল প্রতিষ্ঠা করা হয়।
আবদুল্লাহ সম্প্রতি একটি জেন্ডার সমতা কর্মসূচির আয়োজন করেছেন। যার মাধ্যমে ৩৫০ জন তরুণকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজে দক্ষ করে তুলেছেন। এর পাশাপাশি ৯ জন নারী উদ্যোক্তার জন্য মূলধন সংগ্রহ করে তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা, একটি মডেল সংখ্যালঘু-নারী নেতৃত্বাধীন বিউটি পার্লার প্রতিষ্ঠা এবং ২৫ জন নারী-শিক্ষার্থীকে তাদের নেতৃত্বের গুণাবলী উন্নত করতে সহায়তা করে এমন একটি ট্রেনিং প্রোগ্রামের আয়োজনও করেন।
২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে পথচলা ফাউন্ডেশন সমাজের তৃণমূল সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নের জন্য উদ্যোক্তা তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। সংগঠনটি সারা বাংলাদেশে ১৬টি জেলায় সক্রিয়ভাবে টেকসই উন্নয়ন প্রচার করছে এবং তৃণমূল এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করে আসছে। আর এই প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে ইতিমধ্যেই জীবনমান পটরিবর্তন করেছেন অসংখ্য তরুণ।
ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেয়ে আব্দুল্লাহ আল হাসান বলেন, দীর্ঘদিন আমি সমাজে সমতা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি। আগে বিভিন্ন সংগঠনে কাজের মাধ্যমে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। একটা সময় এসে বুঝলাম এ লড়াই আরও জোরালো করতে আমরাও একটি সংগঠন শুরু করতে পারি। তারপর ২০১৯ সালে পথচলা ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। তখন থেকে আমার লড়াইটা আরও জোরালো হয় আরও বেগবান হয়।
একে একে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হতে নেই। সমাজের মাইনরিটি কমিউনিটির পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জন্য ছাতার মতো কাজ শুরু করি। বিশেষ করে তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি, নারীদের ক্ষমতায়ন, উদ্যোক্তা তৈরি, স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করা, স্বাস্থ্য সচেতনতাসহ নানান বিষয়ে কাজ করেছি আমরা। যার দরুণ পথচলা ফাউন্ডেশন ২০২০ সালে শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলেন্টিয়ারিং এওয়ার্ড, ২০২১ সালে জয় বাংলা ইয়ুথ এওয়ার্ডের সেরা ৩১, এবং ২০২২ সালে জাতিসংঘ আইভিডি এওয়ার্ড পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি এই সংগঠনকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিতে চাই। আমাদের এগিয়ে যাওয়া হবে পরিবর্তন আনতে, সমতা নিশ্চিকরণ এবং বৈষম্য দূরীকরণের জন্য। আমি মনে করি ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড আমাকে এবং আমার প্রতিষ্ঠানকে আরও উজ্জীবিত করবে। আমি এই পুরস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, প্রয়াত যুক্তরাজ্যের রাজকুমারী ডায়ানার স্মরণে বিশ্বব্যাপী ৯ থেকে ২৫ বছর বয়সি সংগঠকদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। যারা তাদের কাজের মাধ্যমে নিজ নিজ সম্প্রদায়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তাদেরই এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
বিএনএনিউজ/সুমন বাইজিদ,বিএম