26 C
আবহাওয়া
৩:৪১ পূর্বাহ্ণ - মে ৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » জাবির করিডোরে ছাত্রের ওপর হামলার নেপথ্যে

জাবির করিডোরে ছাত্রের ওপর হামলার নেপথ্যে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিএনএ, জাবিঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি)  স্ত্রীর জন্য আপেক্ষারত এক শিক্ষার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের কতিপয় ছাত্রের বিরুদ্ধে।

গত মঙ্গলবার (৩১ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের করিডোরে এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রক্টরের নিকট পৃথক পৃথক অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলেন প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. মাশরুল আলম আজমী (৪৮তম ব্যাচ)। এছাড়া অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের জাহিদ হাসান ও মো. নাঈম হাসান। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের কর্মী।

অভিযোগপত্রে মাশরুল আলম উল্লেখ করেন, ‘দুপুর ১টার দিকে নিজ ফ্যাকাল্টির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের করিডোরে স্ত্রী নুসরাত জাহানের (প্রানিবিদ্যা,৪৭) জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাঈম আমাকে হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে ডিপার্টমেন্টে আসতে নিষেধ করেন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আমার বিভাগের এক বন্ধু এগিয়ে আসলে তাকেও গালাগালি করেন। বিভাগের নিচে নামার পর আমি ও আমার বন্ধুর ওপর আবারও চড়াও হয়। একপর্যায়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদ আমার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেন এবং আমাকে হলে গিয়ে মারধর করবে বলে হুমকি দেন।’

তিনি আঘাত প্রাপ্তস্থানের ছবি ও মেডিকেল রিপোর্ট সহ অভিযোগ পত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নিকট জমা দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত জাহিদ হাসানের সাথে আজমী স্ত্রী নুসরাত জাহানের খুব ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। একসময় জাহিদ নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সেই সময় নুসরাত তা প্রত্যাখান করে। পরবর্তীতে এক জুনিয়রের (মো. মাশরুল আলম আজমী) সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে নুসরাত জাহান এবং তাকেই বিয়ে করেন। তারপর থেকে আজমী প্রতিদিন ক্লাস শেষে নুসরাতের জন্য করিডোরে অপেক্ষা করে।

জুনিয়রকে বিয়ে করার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি জাহিদ। আবার সেই জুনিয়র ডিপার্টমেন্টের সামনে প্রতিনিয়ত এসে বসে থাকা সহ্য করতে পারেনি। ফলে সংঘর্ষের সুত্রপাত হয় বলে মন্তব্য করেছেন ঐ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

তবে এ পুরো বিষয়টাকে জাহিদ হাসান সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘নুসরাতের সাথে এক ডিপার্টমেন্টে পড়ার সুবাদে ভালো বন্ধুত্ব হলেও তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া একটি মিথ্যা ঘটনা। আমাদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে এখন আমাদের সুনাম ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে তারা।’

প্রতক্ষদর্শী নুসরাত জাহান (প্রাণিবিদ্যা-৪৭) বলেন, ‘বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে জাহিদ মাটি থেকে ইট তুলে নিয়ে তেড়ে আসে। তখন ওখানে আমিসহ উপস্থিত আরো অনেকে জাহিদকে থামাতে যাই। জাহিদ তখন নিজেকে কোনো রকমে ছাড়িয়ে নিয়ে আজমীর মাথায় আঘাত করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।’

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আরাফাত আল জালাল (প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান, ৪৮) বলেন, ‘ক্লাস শেষ করে আমি নিচে নামার সময় দেখি আজমীর সাথে এক সিনিয়র ভাইয়ের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে। আমি সেখানে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করতে গেলে আমার সাথেও খারাপ ব্যবহার করে। পরবর্তী পরিস্থিতি শান্ত হলে আমরা নিচে নেমে আসি। সেখানে দুজন আবার আজমীর ওপর চড়াও হয়। কথা-কাটাকাটির মাঝে একজন নিচ থেকে ইট তুলে নেয় এবং মুখে আঘাত করে।’

প্রাণীবিদ্যা ৪৭ ব্যাচের সিআর আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ডিপার্টমেন্টের মেয়েদের ওয়াসরুমের পাশে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে একাধিকবার আজমির বিরুদ্ধে আমার কাছে অভিযোগ আসে। আমি প্রতিবারই নুসরাতকে জানাই, যাতে আজমিকে সে সচেতন করতে পারে। কিন্তু ঘটনার দিন পুনরায় তাকে একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সেই সময় নাঈম তাকে সেখানে দাঁড়াতে নিষেধ করে। কিন্তু সে তার কথার পরোয়া না করে নাঈমের সাথে খারাপ ব্যবহার করে এবং সেখানে একটি বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে আমি ঘটনাস্থল ত্যাগ করি।’ তবে ইট দিয়ে আঘাত করার ঘটনাটি স্বচক্ষে দেখেননি বলে জানান তিনি।

আজমীরের অভিযোগের বিপরীতে নাঈম হাসান ও জাহিদ হাসান শারীরিক হেনস্তা ও হামলার বিচার চেয়ে প্রক্টরের নিকট অন্য আরেকটি অভিযোগপত্র দাখিল করে।

অভিযোগপত্রে জাহিদ হাসান ও নাঈম হাসান উল্লেখ করেন, ”অনেকদিন ধরে আজমী (প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান-৪৮) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের করিডোরে বসে থাকতো। এ কারণে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিব্রত বোধ করতো। তাকে এ বিষয়ে অবহিত করা হলেও সে এ বিষয়ে গ্রাহ্য না করে প্রতিনিয়তই বসে থাকতো। তাকে আবারো প্রাণিবিদ্যা বিভাগের করিডোরে দেখা গেলে আমি (নাঈম হাসান) তাকে মার্জিত ভাষায় বলি সে এখানে বসে থাকলে আমাদের (প্রাণিবিদ্যা) শিক্ষার্থীদের চলাফেরায় সমস্যা হয়। তুমি চাইলে বাইরে অবস্থান করতে পারো। এই কথা বলে বিভাগ থেকে বের হয়ে আসতে চাইলে সে (আজমী) আমার পথ আটকায় এবং উগ্র হয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, এবং আমি কে তা সে জানতে চায়। একই সময়ে তার বন্ধু আরাফাত আল জালাল (প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান ৪৮) আমাকে এসে ধাক্কা দেয় ও গালিগালাজ শুরু করে এবং পরিচয় জানতে চায়। আমি পরিচয় দিয়ে তাদের বাজে ব্যবহার উপেক্ষা করে বিভাগ থেকে বের হয়ে আসতে থাকি। আমি ফার্মেসি বিভাগের গেটের সামনে গেলে তার (আজমী) স্ত্রী নুসরাত জাহান (প্রাণিবিদ্যা-৪৭) ও আজমীর বন্ধু জালাল অত্যন্ত উগ্রভাবে  আমাকে পিছন থেকে ডাকে এবং নুসরাত জাহান আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে করতে জিজ্ঞেস করে “তুই আজমীকে ডিপার্টমেন্টে করিডোর থেকে চলে যেতে বলার কে”। তখন আমি বলছি “তুই আমাকে গালিগালাজ কেন করছিস?” ঠিক এই সময় আজমী ও তার বন্ধু জালাল আমার গায়ে ধাক্কা দেয় এবং গালিগালাজ করতে থাকে। তা দেখে আমার বন্ধু (জাহিদ হাসান) এগিয়ে আসে এবং জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে? এ কথা বলা মাত্রই তার গায়ে আজমী ও জালাল ধাক্কা দেয় এবং আমাদের দুজনকে মারতে আসে। তখন আমার বন্ধু জাহিদ হাতে আঘাত প্রাপ্ত হয়।’

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফারহানা মতিন জুলিয়ানা বলেন, ‘আমি এ বিষয় নিয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি। এ বিষয়টা নিয়ে আমরা সবাই সচেতন। একজন ছাত্র আরেকজন ছাত্রকে এভাবে শারীরিক নির্যাতন করবে তা খুবই দুঃখজনক। তবে আমরা বিষয়টা নিয়ে প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। ছাত্রদের পরীক্ষার কারণে আমরা কিছুদিন সময় দিবো।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ‘ঘটনাটা আমি শুনেছি। সে ছাত্রলীগ করুক বা আমার হলে থাকুক অপরাধী তো অপরাধীই। যদি সে অপরাধ করে থাকে এবং উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে থাকে তবে এর কঠোরতম বিচার হোক।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘অভিযোগটা আমি পেয়েছি, নিয়মতান্ত্রিক ভাবে এর তদন্ত হবে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তরা শাস্তি পাবে।’

বিএনএ/সানভীর, এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ