৬১৯ কোটি টাকার সার কেলেঙ্কারি মামলার প্রধান আসামি, বহুল আলোচিত নবাব অ্যান্ড কোম্পানি নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ নবাব খান অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন।
জেল জীবন এড়াতে তিনি নিজের বদলে, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আপন ভাগিনা ফাহিম কে নবাব খান বানিয়ে আদালতে পাঠিয়েছিলেন।কিন্ত শেষ রক্ষা হয় নি। মামা ভাগিনা দুজনেই আসল ও নকল নবাব হিসেবে ধরা খেলেন।
ভাগিনা ফাহিম জেলে যাবার ১০ দিনের মাথায় এবার আসল নবাব ধরা পড়েছেন ঢাকার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) হাতে। সোমবার রাজধানীর শাহবাগ থানা এলাকা থেকে নবাবকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মতিঝিল থানায় হস্তান্তর করা হলে থানার পুলিশ আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠায়।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এর ইউরিয়া সার পরিবহন ঠিকাদার নবাব খান আত্মসাৎ করেছেন ৬২০ কোটি টাকা। শুধু তাই নয় বিসিআইসি মামলা করার পর আদালতে নিজের পরিচয়ে ভাগিনাকে উপস্থাপন করে জামিন নেয়ার চেষ্ঠা করেছেন! কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়, ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) এর মাধ্যমে আহ্বানকৃত টেন্ডারের বিপরীতে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) বিভিন্ন দেশে থেকে ইউরিয়া সার আমদানি করে থাকে। আমদানীকৃত ইউরিয়া চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বাফার গুদামে পৌছে দিতে নবাব এন্ড কোম্পানির সঙ্গে ভিন্ন ভিন্নভাবে ৭টি চুক্তি করে বিসিআিইসি।
৫০ দিনের মধ্যে এ সার পৌছে দেয়ার কথা। বিসিআইসি জি টু জি চুক্তির মাধ্যমে মধ্য প্রাচ্যের মুনতাজাত- কাতার ও সাবিক সৌদি আরব ১,৮৩,১৫৬.৫৫ ইউরিয়া সার আমদানি করে। এর মধ্যে কাতার থেকে এমভি জিন্দা জাহাজ যোগে আনা ইউরিয়া সার ৬/২/২০২০ খালাস শেষ হয়।কাতার থেকে আসা এমভি গোল্ডেন লিফ-১ জাহাজ আনা সার খালাস হয় ১১/১১/২০২০।
একই সময়ে এমভি সি বেনিভোলেন্স সৌদি আবর থেকে আমদানী করা ইউরিয়া সার নিয়ে আসে। ২১/১২/২০২০ সার নিয়ে আসে এমভি বাংলার অরজুন সৌদি আবর থেকে । এমভি গোল্ডেন লিফ-২ জাহাজটি সৗদি আরব থেকে সার নিয়ে আসে ২৪/১২/ ২০২০। পরের বছর ১৬/২/২০২১ সৌদি আবর থেকে আমাদানি করা সার নিয়ে আসে এমভি প্যাসিফিক ভিক্টর। ১৯/২/২০২১ সালে আসে এমভি ইমালা।
উল্লেখিত ৭টি জাহাজে বিসিআইসি আমদানি করা ১,৮৩,১৫৬.৫৫ মেট্রিক টন সার পরিবহন করে নবাব এন্ড কোম্পানি। এর মধ্যে বিসিআিইসিকে ৬৬৮৭৪ মেট্রিক টন আমদানি করা ইউরিয়া সার বুঝিয়ে দেয়নি।উক্ত সারের আনুমানিক মূল্য ৭২,২১৭,২৩২.৬০ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি ৬১৯৯৮৪৯৪১৯ ( ছয়শত উনিশ কোটি আটানব্বই লাখ উনপঞ্চাশ হাজার চারশত উনিশ) টাকা। বিসিআইসিকে ৬৬৮৭৪ মেট্রিক টন সার বুঝিয়ে দেয়ার জন্য ৫/৮/২০২১, ২৪/৮/২০২১, ২৫/১০/২০২১, ৩/১১/২০২১ খ্রি: আসামী নবাব খান (৫৫)কে তাগিদপত্র দেয়া হয়। ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর সময় সীমা বেধে দেয়া হয়। কিন্তু নবাব খান তা আমলে নেয়নি।এতে রাষ্ট্রের স্বার্থ মারাত্বকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে এবং কৃষক সারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে বিসিআইসির উপ ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলামের মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মামলা নং ৪১ (১২)২১। তারখি ২৩/১২/২০২১ ধারা ৪২০/৪০৬ দন্ডবিধি। এ মামলা দায়ের হওয়ার পর গত ৩ ফেরুয়ারি মহামান্য হাইকোর্টে ক্রিমিনাল মিস মামলা নং ৬২৬৯ /২০২২ করে আগাম জামিনের আবেদন করেন। নবাব খানের পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট চঞ্চল কুমার দত্ত। বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ, বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর দ্বৈত বেঞ্চ তিন সপ্তাহের আগাম জামিন দেন এবং নিম্ম আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশের ভিত্তিতে নবাব খান তার ভাগিনা ফাহিম আহমেদকে নবাব খান সাজিয়ে উপস্থাপন করেন।
মূল উদ্দেশ্য ছিল ভাগিনাকে কারাগারে পাঠিয়ে আসল নবাব দেশের বাইরে পালিয়ে যাবেন। সে জন্য অনেক দিন থেকে নানা আয়োজনও করছিলেন। কিন্ত বিধি ধাম।
পড়ুন আগের নিউজ :
নবাবের রূপধারণ: পরিণতি ৭ বছর কারাদণ্ড!
নবাব সাজলেন কর্মচারি, অত:পর কারাগারে