বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ঘোষিত আট দফা বাস্তবায়নের দাবিতে মানবন্ধন ও সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)। রোববার, ২ জানুয়ারি, দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। সমাবেশে বিএফইউজের আট দফা দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে সারাদেশে কঠোর আন্দোলন শুরুর হুঁশিয়ারি দেন সাংবাদিক নেতারা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সিইউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলী। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকার সাংবাদিকদের জন্য ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করে আসলেও বেশীরভাগ সংবাদ মাধ্যম সেটি বাস্তবায়ন করছে না। দেশের পত্রিকাগুলোতে এ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে নবম ওয়েজবোর্ড সংশোধনসহ আট দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানান।
সিইউজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, সিইউজে সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, সিইউজের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমদ ও রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, সিইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি রতন কান্তি দেবাশীষ, সহ-সভাপতি অনিন্দ্য টিটো, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসিফ সিরাজ, সিইউজের অর্থ সম্পাদক কাশেম শাহ, প্রচার সম্পাদক ইফতেখার ফয়সাল, বিএফইউজে সদস্য আজহার মাহমুদ, প্রণব বড়ুয়া অর্ণব, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির উদ্দিন তোতা প্রমুখ।
সমাবেশে বিএফইউজে সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম বলেন, অনেক মালিক সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা দেন না অথচ তাঁদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। আমরা চট্টগ্রামের পত্রিকা মালিকদের আয়-ব্যয়ের হিসাব করার দাবি জানাই। আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখলেই বোঝা যাবে তাঁরা গণমাধ্যকর্মীদের কিভাবে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছেন।
তিনি বলেন, পত্রিকা মালিকদের বলবো আপনারা সিইউজে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র করেছেন এবার ক্ষান্ত হোন। ডেকে ডেকে সাংবাদিকদের চাকুরিচ্যুত করছেন, ন্যায্য পাওনা দিচ্ছেন না। আমরা আশা করবো আপনারা এসব অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকবেন। অন্যথায় বিএফইউজে, সিইউজেসহ সারাদেশের সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হব।
সিইউজে সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম বলেন, এমন কোন পেশা নেই যেখানে বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করতে হয়। সরকার শুধু সাংবাদিকদের জন্য ওয়েজবোর্ড গঠন করেই দায় সারছে, তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা মনিটরিং করছে না।
তিনি বলেন, অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের কথা বলে চট্টগ্রামের পত্রিকা মালিকরা বিজ্ঞাপনের রেট কার্ড নিয়েছেন। পত্রিকায় কর্মরতদের ন্যায্য পাওনা না দিয়ে মালিকদের সংগঠন বানিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। তাঁরা যদি নিজেদের অপকর্মের লাগাম না টানেন তবে সাংবাদিক সমাজের ক্ষোভের যে বিষ্ফোরণ ঘটবে, তার ধাক্কা সামলানো কঠিন হবে।
সিইউজের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমদ বলেন, বিএফইউজের আট দফা দাবিতে সাংবাদিকদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো একত্রিত করা হয়েছে। সাংবাদিক সমাজকে সাথে নিয়ে এসব দাবি আদায় করা হবে। সাংবাদিক সমাজ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে দাবি আদায়ে কোন বাধাই টিকবে না।
সিইউজের সাবেক সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যখন করা হচ্ছিল তখন মন্ত্রীরা বলেছেন এটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সাংবাদিকদের ঘায়েল করতেই এ আইন করা হয়েছে। অবিলম্বে এ আইন সংশোধন করতে হবে।
বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী বলেন, ওয়েজবোর্ড সাংবাদিকদের কল্যাণের পরিবর্তে মালিকদের প্রতারণার ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের কথা বলে মালিকরাই বারবার সুবিধা পাচ্ছেন, গণমাধ্যমকর্মীরা কিছুই পায়নি। ভারতে পেনশন সুবিধা চালু হলেও বাংলাদেশে সাংবাদিকরা অবসরকালীন কোন সুবিধার আওতায় না আসা দুঃখজনক।
বিএফইউজে ঘোষিত আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে গণমাধ্যমকর্মী (চাকরি শর্তাবলী) আইন দ্রুত পাস করা, নবম ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ সংশোধন ও বাস্তবায়ন, সাংবাদিকদের নিয়োগপত্র-বেতনভাতা ও বকেয় পরিশোধ নিশ্চিত করা, জাতীয় সম্প্রচার আইন প্রণয়ন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন, সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার করা, অবসরভাতা চালু এবং সাংবাদিকদের আবসন প্রকল্পের জন্য জমি বরাদ্দ নিশ্চিত করা।
বিএনএনিউজ২৪, এসজিএন