23 C
আবহাওয়া
১০:২৭ পূর্বাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন- ৮০(চুয়াডাঙ্গা-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন- ৮০(চুয়াডাঙ্গা-২)


বিএনএ ডেস্ক : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের হালচাল।

চুয়াডাঙ্গা-২ আসন

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনটি দামুড়হুদা, জীবননগর এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ, নেহালপুর, গড়াইটুপি ও বেগমপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৮০ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জামায়াতে ইসলামীর হাবিবুর রহমান বিজয়ী হন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১২ হাজার ৫১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬ শত ৭১ জন। নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর হাবিবুর রহমান বিজয়ী হন। দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৪৯ হাজার ৬ শত ৮৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোজাম্মেল হক। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪০ হাজার ২০ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির মোহাম্মদ মোজাম্মেল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। নির্বাচনে বিএনপির মোহাম্মদ মোজাম্মেল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন:  বিএনপির মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বিজয়ী 

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৭ হাজার ৬ শত ৫৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ২ শত ১১ জন। নির্বাচনে বিএনপির মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৪ হাজার ৭ শত ৫৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মীর্জা সুলতান রাজা । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৩ হাজার ৭ শত ৩২ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মোজাম্মেল হক বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৮ হাজার ৭ শত ৪৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ২শত ৯৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির মোজাম্মেল হক বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫ শত ৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মীর্জা সুলতান রাজা। নৌকাপ্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭ হাজার ৫০ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আলী আজগার বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৭ হাজার ৪ শত ৩০ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৫ হাজার ৫ শত ৫৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আলী আজগার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫৩ হাজার ২ শত ৭২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর হাবিবুর রহমান। দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪১ হাজার ৫ শত ৭৬ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আলী আজগার বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৭ শত ৭৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২২ হাজার ১ শত ৭৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আলী আজগার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৮ হাজার ৩ শত ৮৫ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ওয়ার্কাস পাটির সিরাজুল ইসলাম শেখ। হাতুড়ি প্রতীকে তিনি পান ৮ হাজার ৩০ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আলী আজগার বিজয়ী 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ১৫ হাজার ২৭ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৩৮ হাজার ২ শত ৬৭ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আলী আজগার, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মাহমুদ হাসান খান, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাসানুজ্জামান, মাছ প্রতীকে গনফ্রন্টের শেখ লালন আহমেদ, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির আব্দুল লতিফ খান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আলী আজগার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৯৮ হাজার ৮ শত ৩৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মাহমুদ হাসান খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ২৬ হাজার ৯ শত ২৪ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা-২ সংসদীয় আসনে পঞ্চম সংসদে জামায়াতে ইসলামী, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৩.৯৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৮.৭৭%, বিএনপি ২৯.৫০%, জাতীয় পার্টি ৭.৯৫%, জামায়াতে ইসলামী ৩৬.৬২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৭.১৬% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৩১%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩২.৮২%, বিএনপি ৩৩.৩৪%, জাতীয় পাটি ৫.৭৬%, জামায়াতে ইসলামী ২৫.২০ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৮৮% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.১১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪১.৬১%, ৪দলীয় জোট ৫৬.৯৬%, জাতীয় পার্টি ১.০৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩৬% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯২.৮৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫১.০৩%, ৪ দলীয় জোট ৪৬.৮২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ২.১৫% ভোট পায়।

আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আলী আজগার টগর। তিনি এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও মনোনয়ন চাইবেন আলী আজগার টগর। এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্য হাশেম রেজা। দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মনজু।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির উপ-কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ হাসান খান বাবু (বাবু খান)। সাবেক সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হকের ছেলে শিল্পপতি আতিকুল হক মিথুন বিএনপি নেতা প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু ও দর্শনা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহমুদুর রহমান তরফদার শাওন।
নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াতে ইসলামী দলীয় প্রতীক দাড়িপাল্লা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি রুহুল আমিনকে ২০দলীয় জোটের শরিক হিসাবে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য বিএনপির প্রতি চাপ দিয়ে আসছে। তাদের যুক্তি ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে দলটি। এছাড়া জাসদের জেলা সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বাবুও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনটি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শক্ত ঘাটি। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে গেলেও দলীয় কোন্দলের কারণে উন্নয়নের অর্জন ঘরে তুলতে পারছে না দলটি।
বিএনপিতে দলীয় কোন্দল রয়েছে। জাতীয় পার্টির সংগঠনিক তৎপরতা কাগজে কলমে। জামায়াতে ইসলামীর সংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ়। ভোটের লড়াইয়ে জামায়াতে ইসলামী বড় ফ্যাক্টর। বিএনপি ও জামায়াত সমঝোতা হলে এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৮০ তম চুয়াডাঙ্গা সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগ ধরে রাখতে পারবে কীনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

বিএনএ/শিরীন সুলতানা, রেহেনা ইয়াসমিন, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ