বিএনএ, সাভার : মানিকগঞ্জের বাড়ি থেকে কর্মস্থল রাজধানীতে যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারান সাবেক সেনা সদস্য ফজলুল হক। অবসরে যাওয়ার পর পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের প্রধান শাখায় রাজধানীতে সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবে চাকুরি নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গত ২৪ জানুয়ারি সাভারে বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকার একটি শাখা সড়কের পাশ থেকে হাত বাঁধা ও মুখে কাপড় গোঁজা অবস্থায় ফজলুল হকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনার এক মাস পর ক্লুলেস এই মামলার রহস্য উন্মোচন করল ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তার তিন আসামি ছিনতাই ও হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
রোববার রাত ১০টার দিকে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হয়।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, সাবেক সেনা সদস্য ফজলুল হক রাজধানীর মতিঝিলে পপুলার লাইফ ইনসুরেন্স লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে সিকিউরিটি ইনচার্জ পদে কর্মরত ছিলেন। গত ২৩ জানুয়ারি গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ থেকে অফিসে যাওয়ার পথে তিনি নিখোঁজ হন। পরে ২৪ জানুয়ারি সকালে সাভারে বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকার একটি শাখা সড়কের পাশ থেকে হাত বাঁধা ও মুখে কাপড় গোঁজা অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে সাভার মডেল থানা পুলিশ। ২৫ জানুয়ারি নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের হয়। পরে তদন্তে নামে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এক পর্যায়ে গতকাল (২৭ ফেব্রুয়ারী) রাজধানীর মিরপুর থেকে মাসুম ও জনিকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যে ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে পাবনা থেকে রব নামে আরেকজনকে আটক করেন তারা। তিনজনের দেয়া তথ্যে সবশেষ মিরপুর থেকে ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত ছিনতাইকারটিও জব্দ করা হয়। এরপর রোববার বিকেলে তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে পাঠালে তারা ছিনতাই ও সাবেক সেনা সদস্য ফজলুল হককে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল আলম বলেন, ছিনতাইয়ের কৌশল হিসেবে এই চক্রটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোকের গাড়ি ভাড়া নেয়। মূলত মিরপুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে পাটুরিয়া ঘাটে যায়। দুই জন পিছনে, সামনের সিটে একজন ও ড্রাইভার একজন। তাদের চারজনের একটা কোম্পানী। পরে পাটুরিয়া ঘাটে গিয়া ঢাকার উদ্দেশ্যে একজন যাত্রীকে টার্গেট করে ভাড়ায় তোলে এভাবে যে, একজন যাত্রী লাগে ঢাকায় যাব। এভাবে একজন যাত্রীকে তারা পিছনে ওঠায়। কিছুদূর যাওয়ার পর মাঝে থাকা একজন (যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী) বমি আসতেছে এমন ভান করে টার্গেট করা যাত্রীটাকে মাঝখানের সিটে বসায়। এরপর সামনের সিটে বসা একজন সাথে সাথেই কালো কসটেপ লাগানো চশমা পরায় দেয় যাতে আর কিছু না দেখে। দুই হাত কসটেপ দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর তাকে চেক করে তার কাছে থাকা টাকা নিয়ে নেয়। যদি টাকা কম থাকে তাহলে ক্রেডিট কার্ড থাকলে পিন নম্বর নিয়া টাকা তুলে নেয়। এছাড়া পরিবারের কাছ থেকে ভিকটিমের বিকাশ নম্বরে টাকা আনিয়ে রাস্তার পাশে বিকাশের দোকান থেকে টাকা তুলে নেয় ছিনতাইকারী চক্রটি।
তিনি আরও বলেন, ওই সেনা সদস্যকেও এই চক্রটি বাস স্ট্যান্ড থেকে এভাবেই ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে প্রাইভেটকারে তুলেছিল। কিন্তু ছিনতাইয়ের সময় ফজলুল হক ধস্তাধস্তি ও চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সাভারের বিরুলিয়ায় সড়কের পাশে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।
ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) নাজমুল হাসান বলেন, এই চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল এলাকার হাইওয়ের পাশের বাজার ও বাস স্ট্যান্ড থেকে যাত্রী উঠিয়ে ছিনতাই করে আসছিল। এমনকি তারা ভিকটিমদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে সড়কের পাশে নির্জন স্থানে ফেলে দিত। আর মুক্তিপণ না পেলে কিংবা কেউ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের হত্যার পর নির্জান স্থানে ফেলে রেখে যেত। এই চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা গেলেও এখনও পলাতক আরেকজন। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের রাজবাড়ী থানায় একাধিক চারটি মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিএনএনিউজ/ইমরান খান, জেবি