বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের পতেঙ্গার লালদিয়ার চরের ৫২ একর ভূমিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। যা বন্দরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উচ্ছেদ অভিযান। সোমবার (১ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে এক হাজার বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য রয়েছে। পাশাপাশি কাজ করছে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক। সকাল ৭টা থেকে পতেঙ্গার বোট ক্লাবের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও শ্রমিকরা সমবেত হতে থাকেন। গতকাল রোববার থেকে সেখানে প্রস্তুত ছিল বুলডোজার, ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও সাঁজোয়া যান।
তিনি বলেন, এর আগে লালদিয়ার চরের ২৬ একর জায়গা উচ্ছেদ করেছি। আমরা আজ ৫২ একর জায়গা পুনরুদ্ধার করতে পারবো। অবৈধ দখল উচ্ছেদ হলে সরকার তৃণমূলদের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা থাকে। তাদের সহায়তা করার জন্য আমরা তালিকা পাঠিয়েছি।
গত শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বন্দর ভবনে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহানের সভাপতিত্বে বৈঠক হয়। এতে বন্দরের সদস্য এবং শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পুনবার্সনের দাবিতে আন্দোলনরত লালদিয়ার চরের মানুষের পক্ষে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহমেদ চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আসলাম, লালদিয়ার চর পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হাসানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, লালদিয়ার চরের ভূমি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কৃষিভূমি হিসেবে ইজারা দেয়ার রেকর্ড রয়েছে। বন্দরের মালিকাধীন ভূমি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। সর্বশেষ ৮ ডিসেম্বর জরিপ অনুযায়ী লালদিয়ার চরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আদালতের নির্দেশনা দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এছাড়া আগামী ৮ মার্চের মধ্যে লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ অভিযানের বিস্তারিত প্রতিবেদন উচ্চ আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। ১৭ ফেব্রুয়ারি বন্দর কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সব ‘অবৈধ দখলদারকে’ অবিলম্বে ওই জায়গা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
জানা যায়, লালদিয়ার চরে ২ হাজার ৩০০ পরিবারের ১৪ হাজারের মতো মানুষ বসবাস করে আসছিল। ১৯৭২ সালে বিমান ঘাঁটি সম্প্রসারণের কাজের কারণে ঘাঁটি সংলগ্ন এলাকা ছেড়ে আসা কয়েক’শ পরিবার স্থায়ী বন্দোবস্তি পাওয়ার আশ্বাসের ভিত্তিতে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে লালদিয়ার চরে বসতি শুরু করেন। শুধু বাসিন্দারা নন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, শ্রমিকলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ লালদিয়ার চরবাসীর পক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ী প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনও পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদের বিরোধিতা করেছেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে এসে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী লালদিয়ার চরে উচ্ছেদে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেন, সেখানে পুনর্বাসনের মতো কেউ নেই। লালদিয়ার চরে জমি ‘দখলে রেখে’ যারা আর্থিক ‘ফায়দা লুটেছে’ তাদের তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। মন্ত্রীর এ ঘোষণার পর পুনর্বাসনের দাবিতে মানববন্ধন করে কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ। তাদের সাথে বিভিন্ন সংগঠনও একাত্মতা প্রকাশ করে।
বিএনএনিউজ/মনির,ওজি