33 C
আবহাওয়া
১০:২১ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সেই দিনের বিকেলটা ছিল ভয়ংকর

সেই দিনের বিকেলটা ছিল ভয়ংকর


বিএনএ, ঢাকা: দেড় যুগ আগের এই দিনের বিকেলটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ছিল এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। সেদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে মুহুর্মুহু গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণ, রক্তাক্ত মানুষের কাতর কান্না, চোখের সামনে সহযোগীদের মৃত্যু- সব মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় অবস্থার সৃষ্টি হয়।

এ নৃশংসতায় পুরো জাতি স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। আজ সেই ২১ আগস্ট, ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা দিবস।

ভয়ংকর এই গ্রেনেড হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন। এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ১৬ জন। স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হ দলের শীর্ষ নেতারা। দলীয় নেতাকর্মীরা মানববর্ম রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করলেও অসংখ্যা প্রাণহানি ঠেকানো যায়নি।

সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা, গোপালগঞ্জে তুষার হত্যাকাণ্ড এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মী হত্যা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও গণমিছিল ডেকেছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। দলীয় কার্যালয়ের সামেনই ট্রাকের উপর মঞ্চ তৈরি করা হয়। সভা শুরু হয় বেলা সাড়ে ৩টার দিকে। বিকাল ৫টায় তৎকালিন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা এসে সভাস্থলে পৌঁছান এবং ট্রাকে ওঠেন।

শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখতে শুরু করেন ৫টা ২ মিনিটে। ৫টা ২২ মিনিটে বক্তব্য শেষ করে ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করে মাইক থেকে সরে যাওয়ার মুহূর্তেই দক্ষিণ দিক থেকে কে বা কারা তাকে লক্ষ্য করে প্রথমে একটি গ্রেনেড ছুড়ে মারে। গ্রেনেডটি ট্রাকের বাঁ পাশে পড়ে বিস্ফোরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শেখ হাসিনা ট্রাকের ওপর বসে পড়েন। এরপর চলতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড হামলা। এ সময় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে দলীয় সভানেত্রীকে রক্ষা করেন। দলের নেতা-কর্মী ও দেহরক্ষীরা শেখ হাসিনাকে সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যান। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১৩টি শক্তিশালী গ্রেনেড।

একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে পুরো আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করাও ছিল এই হামলার মূল্য লক্ষ্য। খুনিরা যখন বুঝতে পারে বোমায় কাজ হয়নি তখন শেখ হাসিনাকে বহনকারী গাড়ী টার্গেট করে এলোপাথারি গুলি ছোড়ে। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার আর্শিবাদ আর বুলেট প্রুফ গাড়ী হওয়ায় সেদিন প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা।

খুনীদের টার্গেট ছিল বাংলার মাটি থেকে বঙ্গবন্ধুর শেষ স্মৃতি চিহ্নটি মুছে ফেলার। যেন আর একটি মানুষও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলতে না পারে। তাই সমাবেশ স্থলে শক্তিশালী গ্রেনেড মেরে পুরো দলটি ছিন্ন ভিন্ন করে দেওয়ার মিশনে নেমেছিল খুনিরা। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্রত্যক্ষ ছত্রছায়ায় ঘটেছিল গ্রেনেড হামলার ঘটনা।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ঘাতক চক্রের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বহীন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে রুখে দেওয়া এবং দেশে স্বৈরশাসন ও জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তা হতে দেয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, চারদিকে যখন গ্রেনেড বিস্ফোরিত হচ্ছে, তখন দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীরা মানববর্ম সৃষ্টি করে তাঁকে রক্ষা করেন। আল্লাহর অশেষ রহমত ও জনগণের দোয়ায় তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকেই ষড়যন্ত্রকারীরা তার পিছু নেয়। পিতা, মাতা ভাই ও স্বজনদের হত্যার বিচার করতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে যখন জনমত গঠন করেন, তখন থেকে খুনিদের প্রধান টার্গেটে পড়ে যান বঙ্গবন্ধুর জোষ্ঠ্য কন্যা শেখ হাসিনা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতিকে নেতৃত্ব শূন্য করার যে মিশন শুরু করেছিল খুনিরা, তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আবারও বঙ্গবন্ধু পরিবার ও তার গড়ে যাওয়া দলকে নিশ্চিহ্ন করতে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল ঘাতকরা।

বিএনএ/এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ