27 C
আবহাওয়া
১:১৩ অপরাহ্ণ - মে ৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » পার্বত্য অঞ্চলের নতুন আতঙ্কের নাম ‘কেএনএফ’

পার্বত্য অঞ্চলের নতুন আতঙ্কের নাম ‘কেএনএফ’

পার্বত্য অঞ্চলের নতুন আতঙ্কের নাম ‘কেএনএফ’

।। সৈয়দ সাকিব ।।

বিএনএ, চট্টগ্রাম: কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট সংক্ষেপে কেএনএফ। এটি ‘বম’ পার্টি নামেও পরিচিত। ‘বম শব্দের অর্থ ‘বন্ধন’ হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে একাংশকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় নিষিদ্ধ জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী এই রাজনৈতিক সংগঠনটি। এ সশস্ত্র সংগঠনটি রাঙামাটি এবং বান্দরবান জেলার নয়টি উপজেলা নিয়ে বম জনগণের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র কথিত ‘কুকিল্যাণ্ড’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের কথিত একটি ম্যাপও আছে ওই কুকিল্যান্ডের।

সম্প্রতি এই সংগঠনটি পার্বত্য এলাকার নতুন আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠেছে। বান্দরবান জেলার রুমায় গত ২ মার্চ রাতে সোনালী ব্যাংকে হামলা, ১০ পুলিশ ও ৩ আনসার সদস্যের ১৪টি অস্ত্র লুটে নেয়। অপহরণ করে ব্যাংক ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে। ১৬ ঘন্টার ব্যবধানে ৩ মার্চ দুপুরে থানচি সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে হামলার ঘটনা ঘটে। লুটে নেয় নগদ টাকা। ফলে নতুন করে আলোচনায় এসেছে কেএনএফ। ফিরে দেখি কেএনএফ কীভাবে পার্বত্য অঞ্চলে আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠেছে?

২০০৮ সালে কেএনএফ-এর জন্ম হলেও ২০১৬ সালে সংগঠনটি সশস্ত্র গ্রুপ তৈরি করে। শুরুতে এর নাম ছিল কুকি চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স কেএনভি। বর্তমানে এই সশস্ত্র সংগঠনের নাম কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। প্রথম দিকে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে ভারতের মনিপুর ও বার্মার ‘চীন রাজ্যের’ সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। প্রথম ব্যাচে শতাধিক সদস্যকে মনিপুরে প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। এরপর ১০০ জনকে ভারতের মনিপুর, বার্মার কারেন ও কাচিন রাজ্যে গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য পাঠায়। ২০১৯ সালে প্রশিক্ষণ শেষে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের ফিরে আসে‌। শুরুতে তারা নীরব থাকে। কিছু দিন পর তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের কাছে রয়েছে ভয়ংকর সব স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র।

বর্তমানে সংগঠনটির সশস্ত্র উইংয়ে তিন থেকে চার হাজার সদস্য রয়েছে। যারা পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মিজোরামে অবস্থান করছে। কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ তিন মাস। এর মধ্যে এক মাস মিজোরামে তাত্ত্বিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাকি দুই মাস মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে মিয়ানমার আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মতে, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট মিয়ানমারের কাচিন রাজ্য থেকে অস্ত্র পায়। কারেন বিদ্রোহীর সাথেও এর সম্পর্ক রয়েছে।

কেএনএফ’ এর প্রতিষ্ঠাতা করেন নাথান বম। তিনি এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি বান্দরবানের রুমা উপজেলায়। কেএনএফ’এর প্রতিষ্ঠাতা নাথান বম। এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি বান্দরবানের রুমা উপজেলায়।

কেএনএফের ঘোষণা ও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির অন্তত ছয়টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা। যদিও দলবদ্ধভাবে তাদের বম হিসেবেও প্রচার করছে অনেকে।

বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার কেওক্রাডং পর্বতের কাছাকাছি এলাকায় কেএনএফ এর গোপন আস্তানা রয়েছে। তবে সংগঠনের বেশিরভাগ সদস্য বর্তমানে সাদা পোশাকে ছদ্মবেশে থাকে।

বম, পআঙ্খউয়আ, লুসাই, গুণী, ম্রো, খিয়াং নামের ছয়টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মিলে কেএনএফ গঠিত। তারা নিজেদের পার্বত্য চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দা মনে করে। একইসঙ্গে তারা চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে বার্মিজ ও ভারতীয় জাতিভুক্ত এবং বহিরাগত মনে করে। আর এ কারণেই জেএসএস ও ইউপিডিএফ-এর মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি তাদের বৈরী মনোভাব রয়েছে।

‘মি-জো’ কথার মানে ‘পাহাড়ের মানুষ’। এটা বেশ বিস্তৃত ধারণা। এতে অনেক জাতিসত্তা অন্তর্ভুক্ত। এসব জাতিসত্তা নিজেদের বলে ‘জো’। যেহেতু চিন, বান্দরবান, মিজোরাম মিলে জোদের মধ্যে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী বেশি, সে কারণে আইজলের রাস্তায় দাঁড়ানো মানুষদের মধ্যে একটা ধর্মতাত্ত্বিক শক্ত বন্ধনও কাজ করছে। বম, পাংখোয়া, লুসাইরা ‘ব্রিটিশ খ্রিষ্টান’ হিসেবে পরিচিত।

মিজোরা যাদের কুকি-চিন বলছে, বাংলাদেশে তারা হলো বম, লুসাই, পাংখোয়া ইত্যাদি। সংখ্যায় খুব কম এসব জাতিগোষ্ঠী। বান্দরবান সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল অঞ্চলে এদের বেশি বসবাস, যা মিয়ানমারভুক্ত চিন প্রদেশ এবং ভারতভুক্ত মিজোরাম-সংলগ্ন। বান্দরবানের কাছাকাছি মিজোরামের জেলার নাম লঙ্গৎলাই। আর চিনের অংশ পালেতওয়া টাউনশিপের মাটুপি। কাছেই আরাকানের মংডু।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কুকি চিন জাতীয় ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) এনজিও’র আড়ালে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করেছেন নাথান বম। এছাড়া পাশের দেশ ভারতের মিজোরাম এবং মিয়ানমার থেকে তাদের কাছে অস্ত্র আসে। সেই অস্ত্র চড়া দামে পাহাড়ে অবস্থান করা নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়তুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যদের কাছে বিক্রি করতো। শুধু তাই নয়, তাদের অস্ত্র চালানো প্রশিক্ষণও দিতো কেএনএফ। তাদের বেশ কিছু আস্তানা ধ্বংস করে দিয়েছে আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী।

অভিযানের সময় তাদের শতাধিক সদস্য গ্রেপ্তার হয়। অস্ত্র উদ্ধার হয়। পুলিশ ও র‌্যাব তখন জানায়, কেএনএফ দুর্গম পাহাড়ে বাংলাদেশের জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে অর্থ আয় করে। এই অবস্থায় গত ৫ মার্চ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে শান্তি আলোচনায় যুক্ত হয়েছিল কুকি চিন নামের এই বিচ্ছন্নতাবাদী রাজনৈতিক সংগঠনটি। তারা অঙ্গীকার করে ছিলেন পার্বত্য এলাকায় শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান বজায় রাখবেন। কিন্তু আলোচনার এক মাস পার না হতেই রুমা ও থানচি কাণ্ডে সশ্রস্ত্র সংগঠনটির আসল রূপ প্রকাশ পেয়েছে।

বিএনএনিউজ/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ