24 C
আবহাওয়া
৫:৪২ পূর্বাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » অবশেষে লাকিংমে চাকমার মরদেহ বুঝে পেলেন স্বজনরা

অবশেষে লাকিংমে চাকমার মরদেহ বুঝে পেলেন স্বজনরা

অবশেষে লাকিংমে চাকমার মরদেহ বুঝে পেলেন স্বজনরা

বিএনএ,কক্সবাজার: কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গের হিমঘরে ২৫ দিন পড়ে থাকার পর কিশোরী লাকিংমে চাকমার মরদেহ বুঝে পেয়েছেন স্বজনরা।আদালতের নির্দেশে সোমবার (৪ জানুয়ারি) কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গের হিমঘর থেকে মরদেহ বুঝে নেন লাকিংমের চাচাতো ভাই ক্যচিং মং চাকমা।বিকাল সোয়া তিনটায় মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্জুন চৌধুরীর উপস্থিতিতে মরদেহ হস্তান্তর হয়।

সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন মো. আবদুর রহমান চৌধুরী।

এরআগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিমঘরের ভাড়া বাবদ ২৪ হাজার টাকা দাবি করায় মরদেহ হস্তান্তরে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়। লাকিংমের পরিবার অসহায় ও দরিদ্র হওয়ায় ওই টাকা পরিশোধ করতে পারেনি।পরে বিষয়টি জানতে পেরে হিমঘরের ভাড়া পরিশোধ করার ব্যবস্থা করেন র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান।এরপর মরদেহ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের উপ-পরিদর্শক অর্জুন চৌধুরী বলেন, তদন্তে লাকিংমে চাকমার বয়স নাবালিকা অর্থাৎ প্রচলিত আইনে বিয়ের উপযুক্ত হয়নি বলে প্রমাণ হয়েছে।তাই লাকিংমের যদি বিয়ে হয়েও থাকে,আইনগতভাবে সেটি অবৈধ।এজন‌্য সার্বিক বিবেচনায় ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে তার মরদেহ বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।এটি একটি অপহরণ মামলা হিসেবে আদালতে বিচার কার্য চলবে বলেও জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন মো. আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লাকিংমে চাকমাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে কয়েকজন যুবক।রোগী বিষপান করেছে বলে জানায় তারা। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করে।বিষয়টি হাসপাতালে কর্মরত পুলিশকে জানানো হয়।লাকিংমের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ।১০ ডিসেম্বর লাকিংমের মরদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়।এর মধ্যে আতাউল্লাহ নামে এক যুবক লাকিংমেকে নিজের স্ত্রী দাবি করে মরদেহ তাকে হস্তান্তরের জন্য পুলিশকে আবেদন করে।আর মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পেয়ে বাবা লালা অং হাসপাতালে গিয়ে সন্তানের মরদেহ পাওয়ার আবেদন করেন। শুরু হয় আইনি জটিলতা।

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শিলখালী এলাকার চাকমা পল্লির বাসিন্দা লালা অং চাকমা জুম চাষ ও সমুদ্রে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন।তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় মেয়ে লাকিংমে চাকমা।

বাবা লালা অং চাকমার দাবি, ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি স্থানীয় যুবক আতাউল্লাহর নেতৃত্বে কয়েকজন তার মেয়ে লাকিংমেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর জোর করে বিয়ে করে হত্যা করা হয়। এরপর ২৭ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন তিনি।  মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

লালা অং চাকমা মামলার আরজিতে উল্লেখ করেছেন, তার মেয়ে এখনও বয়সে শিশু।ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক ইস্যু করা জন্ম সনদ অনুযায়ী তার মেয়ের বয়স মাত্র ১৪ বছর ১০ মাস।ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন শাখার ইস্যুকৃত সনদ মতে, লাকিংমের জন্ম ২০০৫ সালের ২ মার্চ।তার মেয়ে নাবালক এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিয়ের বয়স হয়নি।সে স্বেচ্ছায় যায়নি, তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে গেছে আতাউল্লাহরা।

আর স্বামী দাবিদার আতাউল্লাহর দাবি, অপহরণ নয়, স্বেচ্ছায় তারা বিয়ে করেছেন।বিয়ের আগে লাকিংমে ধর্মান্তরিত হন।তার বর্তমান নাম হালিমাতুল সাদিয়া।

আতাউল্লাহ বলেন,এত দিন তারা কুমিল্লায় ছিলেন।ছয় মাস আগে স্ত্রীসহ টেকনাফে আসেন।গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বিউটি পার্লারে যাওয়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে রুমে গিয়ে সাদিয়া বিষ পান করে।মারা যাওয়ার ১২ দিন আগে  একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে সাদিয়া।

কক্সবাজারের একটি আদালত নিহত কিশোরীর ধর্মান্তরকরণ এবং অপহরণের ঘটনা তদন্ত করতে দায়িত্ব দেয় র‌্যাবকে।আদালতের নির্দেশে র‌্যাব-১৫ রোববার আদালতে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দেয়।র‌্যাবের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রোববার(৩ জানুয়ারি) লাকিংমের মরদেহ শেষ পর্যন্ত বাবার জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।

বিএনএনিউজ/আরকেসি

Loading


শিরোনাম বিএনএ