।।আশরাফ উদ্দিন।।
গত শুক্রবার মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরণা রোড়ে রেল ক্রসিংয়ে ঘটে গেল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। দূর্ঘটনায় ১১ পর্যটকের মৃত্যুতে আলোড়ন হচ্ছে সারা দেশে। শোকের মাতম চলছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আমান বাজারসহ সারা চট্টগ্রামে। স্বজনরা বুকে পাথর চাপা দিয়ে নিহতদের দাফন সম্পন্ন করলেও আহত ৬ জন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে আহতদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা খুবই নাজুক।
দুর্ঘটনার পর সচেতন মহলে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কার দোষ কতটুকু তা খুঁজে বের করে দোষত্রুটির পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করছেন অনেকেই। শনিবার (৩০ জুন) সকালে দুর্ঘটনা স্থল পরিদর্শন করে ক্রসিং এলাকার বেশ কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে।ট্রেন ক্রসিং পর হবার সময় সিগন্যাল লাইট জ্বলে না,সর্তকতা বেল বাজার কথা সেটিও বাজে না। এমনকি ট্রেন এক ষ্টেশন থেকে অন্য ষ্টেশনে যাওয়ার তথ্য যে টেলিফোনের মাধ্যমে ষ্টেশন মাষ্টার বা রেলক্রসিং গেইট ম্যানকে জানানো হয় সেটিও বিকল।
গেইট ম্যানের কক্ষে যে সিষ্টেম আছে সেটির সুইচ ঘুরালে একটি লাল ও একটি সবুজ বাতি ঝলছে সেই সাথে সাথে বাইরে সাংকেতিক লাল ও সবুজ বাতি জ্বলার কথা কিন্তু বাস্তবে তা জ্বলছেনা।
বলতে গেলে রেল ক্রসিংএর যাবতীয় সিষ্টেম ছিল বিকল। একটি প্রকল্পের ক্যাজুয়াল কর্মচারী সাদ্দাম হোসেনকে নামকা ওয়াস্তে গেইট ম্যান হিসেবে বসিয়ে দিয়ে দায় সেরেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গেইটম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও সাদ্দাম ট্রেন আসার তথ্য আগ থেকে পান না। ট্রেন আসতেছে নিজ থেকে যখন বুঝতেন তখন গেইটবার ফেলতেন। তবে গেইট বার ফেলতে গেলেও ক্রসিং পার হওয়া অনেক পর্যটকের সাথে বাক বিতন্ডা হতো তার। ট্রেন দূরে থাকা আবস্থায় গেইটবার ফেলতে গেলে বাধা হয়ে দাড়াতো অনেক পর্যটক। গেইটবার তুলেও পর্যটকদের গাড়ি ঝুকি নিয়ে চলাচল করতো।
গেইটম্যান সাদ্দামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলা যেখানে সম্যার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে সেখানে নিজেদের দায় এড়াতে গেইটম্যান সাদ্দামের নামে মামলা করাটা যেন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেন বলে মনে করছেন অনেকে।
স্থানীয়রা জানান, রেল কর্তৃপক্ষের সিষ্টেম বিকল থাকার কারণে সাদ্দাম জানতোনা জুমার নামাজের সময় ট্রেন আসবে। তার কাছে ছিলোনা কোন তথ্য। আর যেহেতু জুমার নামাজের সময় ক্রসিং এ গাড়ি পারাপার থাকেনা তাই সেই সুযোগে নামাজ পড়তে চলে যান তিনি। কিন্তু দূর্ভাগ্য বশত সেই মুহর্তেই ঘটে ভয়াবহ দূর্ঘটনা।
পর্যটকদের অসচেতনতা ও দূর্ঘটনার অন্যতম কারণ মনে করছেন অনেকে। স্থানীয় কামাল হোসেন জানান, পর্যটকদের গাড়ি পূর্বদিক থেকে রেল ক্রসিংএর উপর উঠেযায়। কিন্তু পূর্বদিক থেকে যে রাস্তা হয়ে পর্যটকের গাড়ি এসেছে সেই রাস্তার ৮শ গজ দূর থেকে ট্রেনের চলাচল খুবই স্পষ্ট ভাবে অনেক আগ থেকে দেখা যায়। এত দূর থেকে ট্রেনের চলাচল দেখা গেলেও পর্যটকদের বহন করা গাড়িটি কোন কারণে ট্রেনের চলাচল দেখতে পায়নি ।
স্থানীয় অনেকেই মন্তব্য করেন, ছোট্ট একটি মাইক্রো গাড়িতে গাদাগাদি করে ১৮জন পর্যটক বসেছে। এছাড়া গাড়িতে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে আনন্দ করার সময় গাড়ির ড্রাইভারের মনোযোগ সেই দিকে থাকায় ট্রেন চলে আসার বিষয়টি নজরে পড়েনি।
ফলে দ্রুত গতিতেই রেললাইনের উপর উঠে পড়ে গাড়ি। এতেই নিমিষেই নিঃশেষ হয়ে যায় ১১টি তাজা প্রাণ। এমন দুর্ঘটনায় পর্যটকের গাড়ির ড্রাইভারের অসচেতনতা ও পর্যটকদের উদাসীনতা কোন অংশে কম নয়।
বিষয়গুলি নিয়ে জানতে চাইলে রেলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গেইটম্যান আমাদের নিয়োগ প্রাপ্ত মাষ্টাররোলের কর্মচারী। ঘটনার দিন চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১টা ৩২ মিনিটে বড়তাকিয়া স্টেশন পার হয়। বড়তাকিয়া স্টেশন পার হওয়ার ৫ মিনিট অর্থ্যাৎ ১টা ২৭ মিনিটে গেইটম্যান গেইবার ফেলে। সেই গেইটবার আর তোলা হয়নি কারণ ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মহানগর প্রভাতি ট্রেনটি ১টা ৩৫মিনিটে বড়তাকিয়া স্টেশন ত্যাগ করে। কিন্তু পর্যটকরা প্রথম ট্রেইনটি পার হওয়ার সাথে সাথে গেইটবার তুলে রেল ক্রসিং পার হওয়ার চেষ্টা করলে দূর্ঘটনার কবলে পড়ে।
সিগন্যাল সিস্টেম বিকল থাকা রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা ইঙ্গিত করে কিনা সেটি জানতে চাইলে তিনি জানান, এটি দুদিন আগেও ঠিক ছিল।
তিনি বলেন আপনি কত দিন সংবাদিকতা করেন আমি জানি না। আপনার জানা প্রয়োজন ইলেকট্রনিক জিনিস যে কোন মূহুর্তে নষ্ট হতে পারে।
টেলিফোন বিকল থাকার ব্যাপারে তিনি জানান, টেলিফোনে নয় বরং মোবাইলে স্টেশন মাষ্টার গেইটম্যানকে তথ্য প্রদান করে।
গেইট ম্যানের বিরুদ্ধে মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, তার ব্যাপারে কেন মামলা করা হয়েছে আমি জানিনা। তার কোন দোষ আমি দেখিনা। তাকে বার বার আমি জিজ্ঞাসা করেছি গেইট ফেলার ব্যাপারে।সে গেইট ফেলেছে বলে আমাকে জানায় । তার দায়িত্বে অবহেলা ছিলনা। তবু দেখা যাক তদন্ত কমিটি কি প্রতিবেদন দাখিল করে। তার ওপর অন্যান্য বিষয়গুলি নির্ভর করবে।
বিএনএ/ ওজি