বিএনএ, ঢাকা : কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার দুই বছর আজ রোববার। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।
চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি বহুল আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
এছাড়া বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত (৩০), কনস্টেবল সাগর দেব, ওসি প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা (৩০), স্থানীয় বাসিন্দা বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন (২২), মো. নিজাম উদ্দিন (৪৫) ও মোহাম্মদ আইয়াজকে (৪৫) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডদের বিচারক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন।
সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. লিটন মিয়া (৩০), কনস্টেবল ছাফানুর করিম (২৫), মো. কামাল হোসাইন আজাদ (২৭), মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান আলী (৪৭), কনস্টেবল মো. রাজীব হোসেন (২৩) ও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (২০)খালাস পেয়েছেন । কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে গুলিতে নৃশংসভাবে খুন হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন উল্লেখ করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। অন্যদিকে, বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেছেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে বাদীপক্ষ।’ তিনি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
র্যাব-১৫-এর দুই কর্মকর্তা—সহকারী পুলিশ সুপার মো. জামিলুল হক ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করেছেন। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ মামলায় মোট ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আদালতে সাক্ষ্য দেন।
এদিকে হত্যার দুই বছরে এসে এ ঘটনায় করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর চেয়েছেন সিনহার মা ও বোন। সিনহার মা নাসিমা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে ছিল আমাদের জন্য প্রাণের উৎস। সে যখনই সুযোগ পেয়েছে, শুধু মানুষের কল্যাণে এগিয়ে গেছে। যেসব নরপিশাচ আমার ছেলেকে হত্যা করে আমার বুক খালি করেছে, তাদের আমি কোনোদিন ক্ষমা করব না। পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে তো বিচার দিয়েই রেখেছি। আমার একমাত্র প্রত্যাশা—যারা আমার ছেলেকে হত্যা করে আমার বুক খালি করেছে, সেসব হত্যাকারী মানুষ নামধারী নরকের কীটদের যেন দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। আমি আশায় বুক বেঁধে আছি, সেদিনের জন্য, যেদিন এদের ফাঁসি হবে, আমার মনটা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিচারের রায় কার্যকর হবে এবং এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে মানুষের জন্য। আর কেউ এভাবে কোনো মায়ের বুক খালি করার মতো দুঃসাহস দেখাবে না।’
সিনহার বোন ও মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস জানান, উচ্চআদালতে মামলাটি আপিলে রয়েছে। এ পর্যন্ত মামলা যতটুকু এগিয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট তারা। এখন উচ্চআদালত দ্রুত শুনানি করে বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। আর, যারা খালাস পেয়েছেন, এ ব্যাপারে আপিলের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তিনি। তিনি উচ্চআদালতের কাছে দ্রুত শুনানি করে ভাইয়ের হত্যার ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেছেন ।
বিএনএনিউজ২৪.কম/এনএএম