বিএনএ,চট্টগ্রাম: মাত্র ৯ মিনিটেই ৩৩ লাখ টাকার সিগারেট ডাকাতি করেছে একটি চক্র। সিগারেট ডাকাতি করাই এই চক্রের পেশা। তবে তা কয়েক হাজার কিংবা লাখ টাকার সিগারেট নয়, অন্তত ২০ লাখ টাকার সিগারেট না হলে তাদের পোষায় না। তাই ডাকাতির টার্গেটই থাকে ২০ লাখ টাকার উপরে। এই ডাকাত চক্রের সদস্য রয়েছে ২০-২৫ জন। তারা এক জেলায় ডাকাতি করে অন্য জেলায় পাড়ি জমায়। গত ৭ বছরে ১০ জেলায় প্রায় ১০ কোটি টাকার সিগারেট ডাকাতি করেছে চক্রটি। এসব ডাকাতির ঘটনায় ২ জনকে খুনও করেছে তারা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানা এলাকায় একজন ও কুমিল্লাতে খুন করেছে একজনকে।
সর্বশেষ চট্টগ্রাম নগরীর আবুল খায়ের গ্রুপের ডিলার খাজা ট্রেডার্সের গোডাউনে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় ওই চক্রের মূলহোতা মো. নুর নবীসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে নগর গোয়েন্দা ও ডবলমুরিং থানা পুলিশ। এসময় ডাকাতি হওয়া লাখ টাকার ৯২ কার্টন সিগারেট পণ্য উদ্ধার এবং ডাকাতির মাল বিক্রির নগদ ৬৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ডাকাত দলের প্রধান মো. নুর নবী (৩০), ডাকাতির মাল ক্রেতা শাহজাহান এবং এনায়েত উল্যাহ শান্ত। বুধবার (৩১ মে) রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড থেকে নুর নবীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ বন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নোবেল চাকমা, ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন ও ডিবির পরিদর্শক প্রিটন সরকার অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
নুর নবীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ কুমিল্লা শহরের বাগিচাগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতি হওয়া ৯২ কার্টন সিগারেট উদ্ধার করে। এ সময় কম দামে ডাকাতির সিগারেটের ক্রেতা মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে শাহজাহান (৬০) ও তার ছেলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এনায়েত উল্লাহ শান্তকে (২৬) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সোমবার (৩১ মে) চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানায় সাংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিন পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) আব্দুল ওয়ারিশ। এ সময় ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার মাহমুদুর রহমান মামুনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, গত ২৭ মে নগরের ডবলমুরিং মডেল থানার পোস্তারপাড় এলাকায় আবুল খায়ের গ্রুপের ডিলার খাজা ট্রেডার্সের গোডাউনে সংঘটিত দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা সংঘঠিত হয়। মাত্র ৯ মিনিটেই আবুল খায়ের গ্রুপের ৩৩ লাখ টাকার সিগারেট ডাকাতি করে এই চক্রটি। ১০-১২ জনের একটি ডাকাত দল ৩ টনের একটি ট্রাকে করে এসে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দারোয়ানসহ ৩ জনকে মারধর করে ডাকাতি করে। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মাত্র ৪ দিনে ওই ডাকাতির ঘটনার লুন্ঠিত ৯২ কার্টন সিগারেট এবং দুই কার্টন বিক্রির ৬৮ হাজার টাকা দুই ক্রেতা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় চক্রের মূলহোতাসহ ওই দুই ক্রেতাকে গ্রেপ্তার করেছে নগর গোয়েন্দা বিভাগের একটি দলসহ ডবলমুরিং থানা পুলিশ। এই চক্রটিতে ২০-২৫ জন সদস্য কাজ করে। তাদের দলনেতা হলো নূর নবী। তারা প্রথমে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে রেকি করে। পরে দারোয়ানকে বেঁধে সাথে নিয়ে আসা মিনি ট্রাকে ডাকাতির মালামাল নিয়ে সরে পড়ে।
পুলিশ জানায়, নুর নবী শুধু সিগারেটের গোডাউনে ডাকাতি করেন। এ পর্যন্ত তার নেতৃত্বাধীন চক্র চট্টগ্রামের চান্দগাঁও কামাল বাজার এলাকার রফিক স্টোর থেকে ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ৭৩ কার্টুন সিগারেট, সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি আফজাল হোসেনের গোডাউন থেকে ২২ লাখ টাকা মূল্যের ৬৩ কার্টুন সিগারেট ও নগদ প্রায় দেড় লাখ টাকা, চাঁদপুর কচুয়ার সাইফুল স্টোর থেকে ২২ কার্টুন সিগারেট ও নগদ সাড়ে ৪ লাখ, টেকনাফ থেকে ২২ লাখ টাকা মূল্যের সিগারেট এবং সবশেষ ডবলমুরিংয়ের খাজা ট্রেডার্সের গোডাউন থেকে ৩২ লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের ৯৪ কার্টুন সিগারেট লুট করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কয়েকমাস আগে নুর নবী পতেঙ্গা থানা এলাকায় দারোয়ান খুন করে আকিজ বিড়ির গোডাউনে ডাকাতি করেছিলেন। এছাড়াও তিনি গত সাত বছরে চট্টগ্রামের রাউজান, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, সিলেট, সাভার, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জসহ ১০ জেলায় ৩০টি ঘটনায় প্রায় ১০ কোটি টাকার সিগারেট ডাকাতি করেছেন। এ কাজে বাঁধা পাওয়ায় তারা এ পর্যন্ত দুজনকে খুন করেন। এসব করলেও নুর নবী নিজ এলাকায় সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, এই চক্রটি খুবই ভয়ংকর। তাদের ডাকাতিতে বাধা দিলেই গুলি ছোঁড়ে কিংবা ছুরিকাঘাত করে এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে হত্যাও করে তারা। এ পর্যন্ত তাদের হাতে ২ জন খুন হয়েছে। সম্প্রতি পতেঙ্গায় গুদামের মালামাল লুট করার সময় বাধা দেওয়ায় একজন এবং কুমিল্লাতে একজনকে হত্যা করেছে। এছাড়া কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হলে গুলিও করে চক্রটি। ডবলমুরিং থানায় এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের তিনজনকে ডাকাতির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আজ (সোমবার) আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
বিএনএনিউজ/মনির