21 C
আবহাওয়া
৪:০০ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বর্ধিত ভাড়ার প্রথম দিনেই হট্টগোল, ভাড়া আদায় দ্বিগুণ

বর্ধিত ভাড়ার প্রথম দিনেই হট্টগোল, ভাড়া আদায় দ্বিগুণ

বর্ধিত ভাড়ার প্রথম দিনেই হট্টগোল, ভাড়া আদায় দ্বিগুণ

বিএনএ,চট্টগ্রাম: করোনা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। একইসাথে দুই সপ্তাহের জন্য ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তবে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ার প্রথম দিনেই চট্টগ্রাম নগরীতে লেগে গেছে হট্টগোল। যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণ বর্ধিত ভাড়া। এতে ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সাথে বাসের হেলপার ও চালকদের বাকবিতন্ডবতা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার (৩১ মার্চ) সরেজমিনে নগরীর আগ্রাবাদ, ওয়াসা, জিইসি, ২নং গেইট, লালখানবাজার, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, চকবাজার ও বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের প্রায় গণপরিবহনকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করতে দেখা গেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি দুই সিটে একজন যাত্রী-পরিবহন করার কথা থাকলেও অধিকাংশ গণপরিবহনে ভেতরে এবং বাইরে যাত্রীপরিবহন করছে।

শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী-পরিবহনের পাশাপাশি ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির নির্দেশনা না মেনে গণপরিবহনগুলো যে যার মতো করে যাত্রী তুলছে, আদায় করছে দ্বিগুণ ভাড়া। আসন খালি না থাকায় দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায় কিছু গণপরিবহনে। এ নিয়ে চালক-যাত্রীদের মধ্যে তর্কাতর্কি হতেও দেখা যায়।

মো. সাগর নামে এক যাত্রী বলেন, বাদামতলী থেকে জিইসির আগের ভাড়া ৭টাকা কিন্তু ৬০ শতাংশ বেশি দিলে সেটা দাঁড়ায় ১১টাকা। কিন্তু যখন ভাড়া দিতে গেলাম তখন বললো ডাবল ভাড়াই দিতে হবে নয়ত আরেক সিটে যাত্রী বসতে দিতে হবে। বাধ্য হয়ে ডাবল ভাড়া দিয়ে নামতে হলো।

নগরীর বায়েজীদ এলাকার বাসিন্দা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, নগরীর ২নং গেইট-অক্সিজেন টেম্পো ভাড়া উঠানামা ১০ টাকা করে নিচ্ছে। তার উপর মানুষ নিচ্ছে ভিতরে ৮ জন, বাহিরে দাঁড়িয়ে নিচ্ছেও ২ জন এবং ড্রাইভারের দুইপাশে ২ জন নিচ্ছে। ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করলে ও তারা উঠানামা ১০ টাকা নেয়া শুরু করছে, তাদের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে গেলেই বলে সরকার বলেছে, তাই নিচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা সাধারণ যাত্রীরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

১০ নম্বর রোডের বাসচালক মো. সোহান বলেন, ভাড়া যে ৬০ ভাগ বাড়াইছে সেটা যদি একদম ঠিকভাবে হিসাব করি তাহলে তো অনেক ঝামেলা। যেমন যে জায়গায় আগে ভাড়া ৮ টাকা ছিল সেটা ৬০% হিসাবে আসে ১২ টাকা ৮০ পয়সা। এখন আমাদের বা যাত্রীদের কারো কাছেই তো ভাংতি পয়সা নেই। তাই সোজা ১৩ টাকা দিতে বলি। এরপরই যাত্রীরা ঝগড়া শুরু করে।

সড়কে যাত্রী-চালকের এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানের জেরে দুর্ভোগ বাড়ছে গণপরিবহনগুলোতে। দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিয়েছি। তবে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করার ফলে একদিকে যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। অন্যদিকে যেখানে আমরা দুই সিটের ভাড়া পেতাম সেখানে এখন আমরা ভাড়া কম পাচ্ছি। ভাড়া বৃদ্ধি হলেও সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন যাতে যাত্রী এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টরা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
বর্ধিত ভাড়ার প্রথম দিনেই হট্টগোল, ভাড়া আদায় দ্বিগুণ

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, আজ নগরের বিভিন্ন স্থানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যদিও আমাদের স্বল্পসংখ্যক অভিযানে সমগ্র নগরীকে মনিটর করা আসলেই কঠিন। তবে আগামীকাল থেকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এবং বিআরটিএ থেকেও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। আমাদের প্রয়োজন যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বুধবার (৩১ মার্চ) থেকে সারাদেশে গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভাড়া আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রেখে এবং শতভাগ মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদের গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকদের এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেন।

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের ২১ মার্চ থেকে সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার। দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গেলো বছরের ১ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত সাপেক্ষে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তখন ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়।

দীর্ঘদিন চলার পর করোনা সংক্রমণ একটু কমে এলে গত সেপ্টেম্বর মাসে শতভাগ আসনে যাত্রী নিয়ে চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তখন থেকে মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) পর্যন্ত শতভাগ আসনেই যাত্রী নিয়ে চলছিলো গণপরিবহন।

নতুন করে গণপরিবহনে চলাচলের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এতে বলা হয়েছে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী পরিবহন করা যাবে না, বিদ্যমান ভাড়ার অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ এর বেশি ভাড়া নেওয়া যাবে না, সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে, প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে, গণপরিবহনে যাত্রী, চালক, সুপারভাইজার/কন্ডাক্টর, হেলপার এবং টিকেট বিক্রি কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মাস্ক পরিধান/ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, তাদের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান-পানি/হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাত্রার শুরু ও শেষে যানবাহন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে, বাসের ওঠার ও নামার ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, গণপরিবহনের জন্য প্রযোজ্য অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

বিএনএনিউজ/মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ