বিএনএ কক্সবাজার: অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) এই রায় ঘোষণা করেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত।
এতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যসহ ৭ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, এপিবিএনের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব, মো. আবদুল্লাহ, বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এই রায়ে টেকনাফ থানার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। আর ৬ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, নন্দদুলাল, সাগর, রুবেল, নিজাম, আয়াজ ও নুরল আমিন।
রায়ে মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ বলে মন্তব্য করেন বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। তিনশ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়ে শোনান তিনি। এর আগে ২টার দিকে গ্রেফতার ১৫ অভিযুক্তকে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করানো হয়।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল থেকেই আদালতে কঠোর নিরাপত্তা ছিল। হত্যাকাণ্ডের দেড় বছর পর আলোচিত এই মামলার রায় হলো। বিচারের রায় জানতে সকাল থেকে কক্সবাজার আদালত চত্বরে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের তল্লাশি চৌকিতে মেজর সিনহা পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এই ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে।
তবে এই ঘটনায় প্রথমে টেকনাফ থানায় দুইটি এবং রামু থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। সেগুলোতে নিহত মেজর সিনহার সঙ্গী সাইদুল ইসলাম এবং শিপ্রা দেবনাথকে অভিযুক্ত করা হয়।
পুলিশের এসব মামলা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। প্রতিবাদ জানায় মেজর সিনহার পরিবার। একপর্যায়ে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট ৯ জনকে আসামি করে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।
পরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ এবং বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকতসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।
একইদিনে পুলিশের মামলাগুলোরও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় র্যাব। পুলিশের তিনটি মামলার ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মেজর সিনহার সঙ্গী সাইদুল ও শিপ্রাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় আদালত।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে হত্যা মামলাযর বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। অভিযোগপত্রে সাক্ষী ছিলেন ৮৩ জন। তাদের মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সিনহা হত্যার পর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা পুলিশের প্রায় দেড় হাজার জনকে বদলি করা হয়।
বিএনএনিউজ/আরকেসি
নিউজটি শেয়ার করতে নিচের সোশ্যাল মিডিয়া বাটনে ক্লিক করুন।