34 C
আবহাওয়া
১০:১৮ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন- ২৬৬(ফেনী-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন- ২৬৬(ফেনী-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন- ২৬৬(ফেনী-২

বিএনএ ডেস্ক : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম।আজ  থাকছে ফেনী-২ আসনের হালচাল।

YouTube player

ফেনী- ২ আসন 

ফেনী-২ সংসদীয় আসনটি ফেনী সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৬৬ তম আসন।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ২ শত ৬৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ  ১১ হাজার ৩ শত ৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এর জয়নাল আবেদিন হাজারী  বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শহিদ উদ্দিন।  তিনি পান ৩৭ হাজার ৪৫ ভোট ।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই আসনে নির্বাচন পন্ড হওয়ায় নির্বাচন কমিশন কাওকে বিজয়ী ঘোষণা করেনি। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১২ হাজার ৪ শত ৪৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩ শত ৫৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এর জয়নাল আবেদিন হাজারী  বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৮ হাজার ৫ শত ৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী। ধানের শীষ প্রতীকে  তিনি পান ৬২ হাজার ৬ শত ৪৭ ভোট।

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫ শত ৭৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭ শত ৩৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির জয়নাল আবেদিন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে  তিনি পান ১ লাখ ১০ হাজার ৭ শত ৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের  জয়নাল আবেদিন হাজারী  ।  নৌকা প্রতীকে   তিনি পান ৬৭ হাজার ২৫ ভোট।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬০ হাজার ৯ শত ৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯ হাজার ৮ শত ৪৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির জয়নাল আবেদিন বিজয়ী হন। ধানের শীষ   প্রতীকে  তিনি পান ১ লাখ ২০ হাজার ২ শত ৯৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের   ইকবাল সোবহান নৌকা প্রতীকে   তিনি পান ৮৬ হাজার ৭শত ১৩ ভোট।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিজাম উদ্দিন  হাজারী  বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন । তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয়  জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ  করেনি।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১ শত ৬২ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৮ শত ৮৮ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা  প্রতীকে আওয়ামী লীগের  নিজাম উদ্দিন হাজারী ,ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির জয়নাল আবেদিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নুরুল করিম বেলালী,গোলাপ ফুল  প্রতীকে জাকের পার্টির নজরুল ইসলাম এবং কোদাল প্রতীকে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জসীম উদ্দীন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের  নিজাম উদ্দিন হাজারী বিজয়ী হন। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৯০ হাজার ৬ শত ৬৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির জয়নাল আবেদিন । ধানের শীষ  প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৫ হাজার ৭ শত ৮৪ ভোট।

কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অষ্টম ও নবম সংসদে বিএনপি এবং পঞ্চম,সপ্তম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর  ফেনী-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়,  ফেনী-২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪০.২৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯.৫৩%, বিএনপি ৩৩.২৮%, জাতীয় পাটি ৪.১০%, জামায়াত ইসলামী ২০.৩৭% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৭২% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭২.১৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৪.৭১%, বিএনপি ৪০.৮৫% জাতীয় পাটি ০.৯৮%, জামায়াত ইসলামী ৭.৭৮% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৬৮% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৮.১৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.৭০%, ৪ দলীয় জোট ৬১.৪০%, জাতীয় পাটি ০.৪১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৪৯% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.৪৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৪১.৩২%, ৪ দলীয় জোট ৫৭.৩৩% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৩৫% ভোট পায়।

ফেনী-২  (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিই একক প্রার্থী। তবে মনোনয়ন চাইতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও ডেইলী অবজারভার  সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও প্রয়াত জয়নাল আবেদীন হাজারীর অনুসারী ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া।

ফেনীতে বিএনপির তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা না থাকলেও দলটি নির্বাচনে অংশ নিলে এ আসন থেকে দুই ডজন প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন।  একাদশ সংসদ নির্বাচনে  মনোনয়ন চেয়েছিলেন দেড় ডজন প্রার্থী। মনোনয়ন পেয়েছিলেন  দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন। যিনি ভিপি জয়নাল হিসাবে পরিচিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করলে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু,জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য  অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন খান, ফেনী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জিয়া উদ্দিন মিস্টার, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী হাবিব উল্যাহ মানিক

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক জেলা আমির অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মজুমদার প্রকাশ ভিপি জহির।

এছাড়া  ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কাজী একরামুল হক ভূঁইয়া,  বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জসীম উদ্দীন, খেলাফত মজলিসের মাওলানা জসিম উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়,  ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ থেকে এই আসনটি দুই জয়নালের আসন হিসাবে পরিচিত ছিল। আওয়ামী লীগের প্রয়াত জয়নাল হাজারি এবং বিএনপির ভিপি জয়নালকে কেন্দ্র করে ফেনী সদর আসনের রাজনীতি পরিচালিত হতো। অআওয়ামী লীগের জয়নাল হাজারী তিনবার, বিএনপির জয়নাল আবেদীন একবার জাসদ (রব) থেকে, তিনবার বিএনপি থেকে মোট চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বিএনপির ২০০১-২০০৬ শাসন আমলে জয়নাল হাজারি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। ফলে আওয়ামী লীগ বেশ কোনঠাসা হয়ে পড়ে। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে  জয়নাল হাজারি নির্বাসনে চলে যায়। তখন থেকে ফেনীর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও ডেইলী অবজারভার  সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। রাজনীতিতে নতুন এই নেতা আওয়ামী লীগের অভ্যান্তরীন কোন্দলের শিকার হয়ে বিএনপি’র ভিপি জয়নালের কাছে হেরে যান।

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  অংশ নেয়নি বিএনপি। ফলে বিনা প্রতিদ্বদ্ধীতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নিজাম উদ্দিন হাজারী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকায় নিজাম হাজারি ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। একই সঙ্গে দলকে  করেছেন সুসংগঠিত। অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতা বলয়ের বাহিরে থাকায় সাংগঠনিক শক্তি তেমন বৃদ্ধি করতে পারেনি। যদিও দলটির তৃণমূল পর্যায়ে  প্রচুর ভোট রয়েছে। ভোট ব্যাংক রয়েছে জামায়াত ইসলামীর যা বিএনপির বাক্সে যাবে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২৬৬ তম সংসদীয় আসন (ফেনী-২) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ নিউজ/ শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ /এইচ এ মুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ