বিএনএ ডেস্ক: আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মহিবুল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করেছে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা। বুধবার (২৯) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মুহিবুল্লাহকে নিজ অফিসে ৫ রাউন্ড গুলি করে বন্দুকধারীরা। সে সময় তিন রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে। এতে সে ঘটনাস্থলে পড়ে যান তিনি। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে উখিয়া থানা পুলিশের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার লংডাছড়া গ্রামের সিকদার পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন মুহিবুল্লাহ মাস্টার। তার বাবা মৌলভি ফজল আহমদ।
জানা গেছে, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন এই রোহিঙ্গা নেতা। তখন টেকনাফ এলাকায় অবস্থান করতেন তিনি। পরে ১৫ জন নিয়ে গড়ে তোলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) নামক একটি সংগঠন। ওই সময় থেকেই বাংলাদেশিসহ বিদেশি মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন মহিবুল্লাহ। একাধিকবার সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেছেন।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী মগদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার ঢল নামে। এরপর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) যুক্ত হওয়ার পর মুহিবুল্লার মূল উত্থান শুরু হয়। রোহিঙ্গাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা থেকেই কদর বেড়ে যায় তার সংগঠন এআরএসপিএইচের।
রোহিঙ্গাদের তথ্য জানার জন্য বিদেশি ও এনজিওগুলোর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন ইংরেজিতে দক্ষ মুহিবুল্লাহ। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে একবার মুহিবুল্লাহকে আটক করে র্যাব। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। জাতিসংঘ মহাসচিবসহ যত বিদেশি প্রতিনিধি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে মুহিবুল্লাহ ও তার সঙ্গীদের সাক্ষাৎ করানো হয়েছে।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও একই বছর উখিয়ার কুতুপালং এক্সটেনশন-৪ এ রোহিঙ্গদের বাংলাদেশে আসার দুই বছর পূর্তির মহাসমাবেশ করে আলোচনায় আসেন তিনি। মাত্র কয়েক ঘণ্টার প্রস্তুতিতে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে মুহিবুল্লাহ ও তার সংগঠন।
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে না পারার পেছনে বেশ কিছু বিদেশি এনজিও এবং কয়েকজন ব্যক্তির হাত রয়েছে বলে জানা যায়। তাদেরই একজন হলেন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ মাস্টার। যিনি সাধারণ মানুষ থেকে শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতা বনে গেছেন।
বিএনএনিউজ/আরকেসি