বিএনএ, ঢাকা: চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর এডভোকেট ওমর ফারুক বাপ্পি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। রোববার(৩০ জুলাই) তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-৭ জানায়, মামলার রায় ঘোষণার পর থেকেই মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামী রাশেদা বেগমসহ অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতার করতে র্যাব-৭ গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত শুরু করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, রাশেদা বেগম চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানাধীন সৈয়দ শাহ্ রোড এলাকায় আত্মগোপন করে আছেন। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে রাশেদা সহ ২ জনের ফাঁসি ও ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সে সাথে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামীদের ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ মামলায় একজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২৬ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম ৩য় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ জসিমউদদীন এ রায় দেন।
চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট দুলাল চন্দ্র দেবনাথ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী হুমায়ুন রশীদ এবং খালাসপ্রাপ্ত জাকির হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকীরা জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছেন। তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার উত্তর লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মন্ডল পাড়া গ্রামের জাকির হোসেনের মেয়ে রাশেদা বেগম (২৭) এবং চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার শোভনদন্ডী এলাকার হারুনুর রশীদের ছেলে হুমায়ুন রশীদ (২৮)।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- বরগুনা জেলার তালতলী থানার সোনাকাটা ইউনিয়নের লাউ পাড়া আকন্দ বাড়ির মনছুর আলী আকন্দের ছেলে আল আমিন (২৮), নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার চরমটুয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড ব্রক্ষপুর কবিরাজ বাড়ির মৃত হাবিবুল্লাহর ছেলে আকবর হোসেন (২৩) ওরফে রুবেল ওরফে সাদ্দাম এবং খাগড়াছড়ি সদরের শালবন এলাকার ফিরোজ সরকারের বাড়ির হাফিজুল ইসলামের ছেলে মো. পারভেজ (২৪) ওরফে আলী।
খালাসপ্রাপ্ত হলেন- বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার শরিকল ইউনিয়নের শাহজিরা এলাকার সামশুল আলমের ছেলে জাকির হোসেন (৩৫) ওরফে মোল্লা জাকির।
তদন্তকারীরা জানান, দেলোয়ার নামে এক ইয়াবা পাচারকারীর স্ত্রী ছিলেন রাশেদা বেগম। স্বামীর মামলার সূত্র ধরে আইনজীবী বাপ্পীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে তারা গোপনে বিয়ে করেন।
আসামিদের গ্রেপ্তারের পর পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঈন উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তবে তারা জানিয়েছেন, আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পীকে হত্যার কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না। রাশেদাকে দুই লাখ টাকা কাবিননামায় বিয়ে করেন বাপ্পী। এ নিয়ে তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন তিনি।
সেই টাকা দুই লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫-১০ লাখ টাকা করার পরিকল্পনা করেন রাশেদা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বন্ধু হুমায়ুনের মাধ্যমে চার যুবককে ভাড়া করেন রাশেদা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিতে গিয়ে রাশেদা ওই পাঁচ যুবকের সহযোগিতায় বাপ্পীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার থানার কে বি আমান আলী রোডের একটি তিনতলা ভবন থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পির মৃতদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। এই ঘটনায় নিহত আইনজীবীর বাবা আলী আহমদ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর তৎকালীন পরিদর্শক ও বর্তমান খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত বিচার শুরু করে। ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। এ মামলার ৩২ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আদালত দীর্ঘ শুনানি এবং সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বুধবার এ রায় দেন।
বিএনএনিউজ২৪ডটকম