26 C
আবহাওয়া
৯:১৯ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৩৯ (জামালপুর-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৩৯ (জামালপুর-২)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে জামালপুর-২ আসনের হালচাল।

YouTube player

জামালপুর -২ আসন 

জামালপুর-২ সংসদীয় আসনটি ইসলামপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৩৯ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রাশেদ মোশারফ বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৪ হাজার ২ শত ৪০ জন। ভোট প্রদান করেন ৮১ হাজার ৫ শত ১৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাশেদ মোশারফ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ৯ শত ১৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সুলতান মাহমুদ বাবু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ৩ শত ৫৮ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সুলতান মাহমুদ বাবুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির সুলতান মাহমুদ বাবুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রাশেদ মোশারফ বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪২ হাজার ১শত ৮৪ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৬ হাজার ১৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাশেদ মোশারফ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ৮ শত ১৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সুলতান মাহমুদ বাবু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ৩ শত ৪৪ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সুলতান মাহমুদ বাবু বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ১শত ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩১ হাজার ২ শত ১১ জন। নির্বাচনে বিএনপির সুলতান মাহমুদ বাবু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮০ হাজার ৩ শত ১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের রাশেদ মোশারফ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৯ হাজার ৮ শত ৬৫ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ফরিদুল হক খান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩ হাজার ৮ শত ৭২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮১ হাজার ২১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফরিদুল হক খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮ হাজার ৯ শত ৫০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সুলতান মাহমুদ বাবু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ৬ শত ৩৫ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ফরিদুল হক খান বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫ শত ৯৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৭ হাজার ১ শত ৭৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফরিদুল হক খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১২ হাজার ৮ শত ৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান। আপেল প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩ হাজার ৩শত ৮০ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফরিদুল হক খান বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২১ হাজার ১ শত ৮৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮ শত ৯৭ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের ফরিদুল হক খান, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির সুলতান মাহমুদ বাবু, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মোস্তফা আল মাহমুদ, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির মনজুরুল আহসান খান ও হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের মিনহাজ উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফরিদুল হক খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮০ হাজার ৪ শত ১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সুলতান মাহমুদ বাবু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ১৬ হাজার ৭ শত ১৪ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায় জামালপুর-২ আসনে, পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ এবং ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর জামালপুর-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, জামালপুর-২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৬.৭৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪১.৬১%, বিএনপি ৩৭.২৪%, জাতীয় পাটি ২.৪৫%, জামায়াতে ইসলামী ১৭.৭৭% ও স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৯৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৭.৫৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৩.৫৫%, বিএনপি ৩৭.৮৫%, জাতীয় পাটি ৩.৭০%, জামায়াতে ইসলামী ৭.৩৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৭.৫২% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৬.৫৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.০০%, ৪দলীয় জোট ৬১.২১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৭৯% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.৭৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬০.৮৩%, ৪দলীয় জোট ৩৫.০০% , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.১৭% ভোট পায়।
জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলাল, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ফরিদুল হক খান দুলাল ছাড়াও এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন জামালপুর-শেরপুর সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য হোসনে আরা, সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের মেয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি মাহজাবিন খালেদ বেবি, পৌর মেয়র আব্দুল কাদের শেখ, শিল্পপতি এস এম শাহীনুজ্জামান শাহীন, ইসলামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র জিয়াউল হক জিয়া, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যবসায়ী শাহাজাহান আলী মণ্ডল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য কৃষিবিদ মঞ্জুরুল মোর্শেদ হ্যাপী এবং জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সাবিনা ইয়াসমিন।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ইসলামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাবু। তিনি ছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ খান, উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ইসলামপুর উপজেলা শাখার আহবায়ক শিল্পপতি মোস্তফা আল মাহমুদ।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, জামালপুর-২ (ইসলামপুর) সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। তবে দলীয় কোন্দলে নেতা-কর্মীরা একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। একাদশ নির্বাচন পর্যন্ত ফরিদুল হক খান দুলাল এবং সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ বেবির মধ্যে গ্রুপিং সীমাবদ্ধ থাকলেও সম্প্রতি শিল্পপতি শাহীনুজ্জামান শাহীন নির্বাচনকে সামনে নিয়ে নিজেই একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন। তবে এলাকায় রাজনৈতিক অবস্থানের দিক দিয়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল।
অপরদিকে বিএনপির মধ্যেও গ্রুপিং রয়েছে। উপজেলা বিএনপিসহ দলীয় অঙ্গসংগঠনের কমিটিতে পরীক্ষিত যোগ্য নেতাদের অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ রয়েছে। প্রকাশ্যে দলে বিভক্তির রূপ না দেখা গেলেও ভেতরে-ভেতরে নেতা-কর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ ও অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে। এই অবস্থায় এই আসনটিতে কোন দলের কে বিজয়ী হবেন তা নিয়ে জল্পনা- কল্পনার অন্ত নেই।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৩৯তম সংসদীয় আসন জামালপুর -২ আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে।

বিএনএ/ শিরীন, রেহানা, ওজি , ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ