27 C
আবহাওয়া
৩:১৪ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল :সংসদীয় আসন-৪৮ (নওগাঁ-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল :সংসদীয় আসন-৪৮ (নওগাঁ-৩)

নওগাঁ-৩

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে নওগাঁ-৩ আসনের হালচাল।

নওগাঁ-৩ আসন 

নওগাঁ-৩ সংসদীয় আসনটি বদলগাছি এবং মহাদেবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৪৮ নাম্বার আসন।

৫ম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির আখতার হামিদ সিদ্দিকী বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি ৫ম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নওগাঁ-৩ আসনে ভোটার  ছিলেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫ শত ৪০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ২ শত ৬৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির আখতার হামিদ সিদ্দিকী বিজয়ী হন।  ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৫ হাজার ৭ শত ৮৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল জলিল। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৪ হাজার ৯ শত ৬৬ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আখতার হামিদ সিদ্দিকী নির্বাচিত

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। বিএনপির আখতার হামিদ সিদ্দিকী বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৬ হাজার ৩ শত ৫৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ফ্রিডম পার্টির মজিবর রহমান।  কুড়াল প্রতীকে  তিনি পান মাত্র ৮ শত ৬০ ভোট !

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম  সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আখতার হামিদ সিদ্দিকী বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম  সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩২ হাজার ২৩ জন। নির্বাচনে বিএনপির আখতার হামিদ সিদ্দিকী বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫ হাজার ২ শত ২৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের দেওয়ান আমজাদ হোসেন তারা। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮০ হাজার ৫ শত ৩৬ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আখতার হামিদ সিদ্দিকী বিজয়ী

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন  ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭ শত ৩২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫০ হাজার ১৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির আখতার হামিদ সিদ্দিকী বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৫ হাজার ২ শত ৫০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন  আওয়ামী লীগের আকরাম হোসেন চৌধুরী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১০ হাজার ৯ শত ২৭ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আকরাম হোসেন চৌধুরী বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৩ হাজার ১ শত ৩৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯৭ হাজার ৬ শত ৫৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আকরাম হোসেন চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫ শত ৬২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আখতার হামিদ সিদ্দিকী । ধানের শীষ  প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৫ হাজার ৭শত ৪০ ভোট।২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬ শত ২২ জন। ভোট প্রধান করেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৩ শত ৬৭ জন। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছলিম উদ্দিন তরফদার বিজয়ী হন। কলস প্রতীকে তিনি পান ৭৪ হাজার ৪০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, আওয়ামী লীগের আকরাম হোসেন চৌধুরী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ৮ শত ৬৩ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোঃ ছলিম উদ্দিন তরফদার নির্বাচিত হন।

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫ শত  ৩৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৩ শত ৬১ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের ছলিম উদ্দিন তরফদার। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সেকেন্দার আলি। মই প্রতীকে বাসদের জয়নাল আবেদীন মুকুল, টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ এর জাবেদ আলী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোঃ ছলিম উদ্দিন তরফদার নির্বাচিত হন। নৌকা  প্রতীকে  তিনি পান ১ লাখ ৯০ হাজার ৫ শত ৮১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৩ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছি) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছলিম উদ্দীন তরফদার। এবারও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র সচিব ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী। উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সখিনা সিদ্দিক, সাবেক সচিব ও উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এনামুল কবীর, কুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ডি এম মাহবুব-উল-মান্নাফ।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বদলগাছি উপজেলা বিএনপির সভাপতি, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলে হুদা বাবুল, মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকারের ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন খান। এই নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩২১ ভোট। ১ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। জাতীয় পার্টি থেকে নওগাঁ জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক বি এস হুমায়ুন চৌধুরী এবার মনোনয়ন চাইবেন।

দলীয় মনোনয়ন চাইবেন নওগাঁ জেলা বাসদের সমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দেলোয়ার হোসন এবং বিএনএফ এর জাবেদ আলী।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নওগাঁ -৩ আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি,  নবম এবং একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ ও দশম সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও  অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নওগাঁ-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭১.৫৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.৩৮%, বিএনপি ৫০.৬৮%, জামায়াতে ইসলামী ৯.১৮ %, জাতীয় পার্টি ০.৭৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.০৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৩৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯.৬৩%, বিএনপি ৫১.৭৮%, জামায়াতে ইসলামী ৩.৮৯%, জাতীয় পার্টি ৩.৯২% স্বতন্ত্র ও  অন্যান্য ০.৭৮% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.১২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৪.৩৭%, ৪ দলীয় জোট ৫৪.১০%, জাতীয় পার্টি ১.৪৫%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.০৮% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯৪.৩০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৯.৭৯%, ৪ দলীয় জোট ৩৯.১৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ১.০২% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছি) উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি বিএনপির শক্ত ঘাটি। যদিও আওয়ামী লীগ এখন সাংগঠনিক পরিধি বৃদ্ধি করতে তৎপর রয়েছে। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক তৎপরতা সংকটাপন্ন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৪৮ নম্বর নওগাঁ-৩ আসনটিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে লড়াই হবে।

বিএনএ/শিরীন, ওজি,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ