বিএনএ, কক্সবাজার: মাদক ইয়াবা-আইসের পাশাপাশি এবার চোরাই পথে নিয়ে আসছে কোটি কোটি টাকার বিদেশি সিগারেট। শুল্ক ফাঁকি দেয়া এসব বিদেশি সিগারেটে সয়লাব হয়ে গেছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। এতে করে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
দক্ষিণ সীমান্তের প্রায় পয়েন্ট দিয়ে অবৈধপথে মিয়ানমার থেকে আনা হচ্ছে সিগারেটের চালান। এতে দুইপাড়ে রোহিঙ্গাসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে। সরেজমিনে টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি টেকনাফ থানা পুলিশ বিদেশি সিগারেটসহ এক রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করেছে।
এদিকে বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অলিগলিতে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য দোকানপাট। রোহিঙ্গাদের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠা এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে দেশি-বিদেশি নিত্যপণ্য ছাড়াও বার্মিজ সিগারেট। আবার সুযোগ বুঝে দোকানিরা ইয়াবা বিক্রি করছে। এমন অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের।
কক্সবাজার শহরেও মিয়ানমার থেকে আসা ওরিস সিগারেটের প্রচুর চাহিদা বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন সিগারেটের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় অল্প দামে এসব সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে ওরিস ন্যানো, ওরিস লাইট, ইএসএস লাইট, প্রাইড, মন্ড ছাড়াও রয়েছে চিকন শলার অনেক সিগারেট।
বাংলাদেশে বিঁড়ি সিগারেটের বাজারে এখন আগুন জ্বলছে। বাজেটে মূল্যবৃদ্ধির চাপে বেড়ে যায় বিঁড়ি-সিগারেটের। এ সুবাধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক চোরাচালানিরা কম দামে এসব সিগারেট বাজারে ছেড়েছে।
গেল কয়েক মাসের ব্যবধানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৮ এপিবিএন পুলিশ গোপন সংবাদে ক্যাম্পে তল্লাশি করে প্রায় ৫০ লাখ টাকার চোরাই পথে আনা অবৈধ সিগারেট জব্দ করে। র্যাব সদস্যরাও কুতুপালং এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের সিগারেট ডিলার শাহ জালালের ভাই নাছির উদ্দিনকে ১ হাজার ৪৪৬ কার্টুন সিগারেটসহ আটক করে। এছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে অবৈধ সিগারেটের চালান ঘুমধুম কচুবনিয়া ব্রিজ এলাকায় ১৫শ’ প্যাকেট বিদেশি সিগারেটসহ ইমরান নামে এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করে। সর্বশেষ গত ১৭ নভেম্বর টেকনাফ থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে ২৭৮ কার্টুন বিদেশি সিগারেট পরিত্যক্ত উদ্ধার করেছে। যার মূল্য ৩ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা।
টেকনাফ থানার (ওসি) আব্দুল হালিম বলেন, ভোরে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউপির কাটাখালী এলাকার পূর্বপাড়া জামে মসজিদের সামনে পাকা রাস্তার উপর হতে অভিযান চালিয়ে ৯০ কার্টুন গোল্ডেন ফ্লাওয়ার সিগারেট, ৯০ কার্টুন ওরিস ব্রাউন সিগারেট ও ৯৮ কার্টুন প্যাটরন সিগারেট উদ্ধার করা হয়।মিয়ানমার থেকে অল্প খরচে চোরাইপথে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক চোরাকারবারি বেশ তৎপর। তারা বাংলাদেশের বাজারকে টার্গেট করে মিয়ানমারভিত্তিক চোরাচালানির মাধ্যমে এসব অবৈধ সিগারেটের চালান সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে আনছে।
সূত্র জানায়, এসব সিগারেট ছাড়াও মিয়ানমারের তৈরি বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ, বিয়ার, ইয়াবা, আইস, বাংলাদেশের সীমান্ত উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফের জল ও স্থলপথে নিয়ে আসছে। এরপর রোহিঙ্গা শিবিরে মজুদ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর হাতে ধরাও পড়ছে এসব অবৈধ পণ্যের চালান। এই অবৈধ পণ্যের সঙ্গে জড়িত ও হাতেনাতে আটক হয়ে রোহিঙ্গা-স্থানীয়দের অনেকে কারাবন্দিও রয়েছে।
টেকনাফের হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, মিয়ানমারের সিগারেটসহ আরো কিছু অবৈধ পণ্য নিয়ে আসছে একটি অসাধু চক্র। এটা নিয়ে তিনি উপজেলা আইন শৃঙ্খলা বৈঠকে অনেকবার আলোচনা করেছেন। তবুও বন্ধ হচ্ছে না এসব চক্রের চোরাই কাজ।
উখিয়ার পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বাংলাদেশের প্রায় দোকান-মার্কেটে এখন মিয়ানমারের অবৈধ সিগারেট। দেশীয় ও মিয়ানমারের একটি চোরাকারবারী চক্র বাংলাদেশের রাজস্ব ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের আইনের আওতায় আনা খুব জরুরি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, ঘুমধুমে বাংলাদেশি সিগারেট কম। মিয়ানমারের সিগারেট দাম কম ও ছোট দেখতে সুন্দর। ধুমপায়ীদের হাতে হাতে এসব সিগারেট দেখা যায়।
টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার জানান, সীমান্তে সবসময় টহলে থাকে বিজিবি। এরকম অবৈধ সিগারেটের চালান হাতেনাতে অনেক জব্দ করা হয়েছে। অনেকে কারাগারে রয়েছে এসব মামলায়। বিজিবি সবসময় বদ্ধপরিকর সীমান্ত দিয়ে কোনভাবে যাতে মাদক চোরাচালান আসতে না পারে।
বিএনএ/ফরিদুল, এমএফ