বিএনএ, চট্টগ্রাম: গত ৩০ বছর ধরে জনতা ব্যাংকের একটি শাখার ৬৭ কোটি টাকা খেলাপী ঋণ পরিশোধ না করায় চট্টগ্রামের শিল্পপতি শওকত হোসাইন চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী-পুত্রের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের রায়ে এই আদেশ দেন। বিচারক মুজাহিদুর রহমানের আদালতে এই আদেশ প্রদান করা হয়। ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার আদেশে বলা হয়, অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ৩৪ ধারা মোতাবেক ২, ৩ ও ৫ নং দায়িদের বিরুদ্ধে দেওয়ানী আটকাদেশ প্রদানের আবেদন করা হয়। আদালত সূত্রে জানা যায়, জনতা ব্যাংক পিএলসি লালদিঘি ইস্ট কর্পোরেট শাখা আলহাজ্ব অয়েল মিলস’র মালিক পক্ষের মধ্যে গত ৩০ বছর ধরে ৬৭ কোটি টাকা খেলাপী ঋণ পরিশোধ না করার মামলা চলমান ছিল।
মামলার আদেশে বলা হয়, খেলাপী ঋণ আদায়ের দাবীতে জনতা ব্যাংক লিঃ, লালদিঘি শাখার দায়েরকৃত মূল অর্থঋণ মামলা নং-৩৮/২০০৬ এর ২০০৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ডিক্রি থেকে এই মামলা জারি হয়। পরে ২০০৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামীদের বিরুদ্ধে ৪৬,৩৬,৯০,১৪৩.৮১ টাকা সহ উক্ত টাকার উপর আদায় ১২% হারে সুদের ডিক্রি হয়। ডিক্রিকৃত সমুদয় টাকা ৬০ দিনের মধ্যে ডিক্রিদার বরাবরে পরিশোধের জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ দিলেও তা পরিশোধ না করায় ২০১০ সালের ২০ মার্চ তারিখে ডিক্রিদার ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ৬৭,৮২,৬৭,৯৪২.৮১ টাকা আদায়ের দাবীতে এই জারি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে ব্যাংকের নিকট তাদের বন্ধকী সম্পত্তি ইতোপূর্বে ২ বার নিলামে বিক্রয়ের জন্য দরপত্র আহবান করা হলে কোন আগ্রহী ক্রেতা না পাওয়ায় বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রয় করা সম্ভব হয়নি বলে জানান আদালত।
ব্যাংকের আবেদনের প্রেক্ষিতে অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ৩৩(৫) ধারার বিধান মতে বন্ধককৃত সম্পত্তি ডিক্রিদার ব্যাংকের নিকট হস্তান্তর করা হয়। ডিক্রিদার ব্যাংক দায় সমন্বয়ের লক্ষ্যে উক্ত সম্পত্তি নিলাম বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। উক্ত নিলাম বিক্রয় স্থগিত রাখারজন্য দায়িকগণ মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশনং নং-১১৫৯২/২০২৪ দায়ের করায় নিলাম কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
এদিকে ডিক্রিদার ব্যাংক হলফনামা সহকারে অর্থঋণ আইনের ৩৪ ধারা মোতাবেক দায়িকগণের বিরুদ্ধে দেওয়ানী আটকাদেশ সহ গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করার আবেদন করেন। নালিশী ঋণ বিতরণের প্রায় ৩০ বছর অতিক্রান্ত হলেও দায়িকগণ ডিক্রিদারের কোন পাওনা পরিশোধ না করায় বিপুল পরিমাণ খেলাপী ঋণ আদায়ে বাধ্য করার প্রয়াস হিসেবে ডিক্রিদারের দরখাস্ত মঞ্জুরক্রমে ২,৩ ও ৫ নং দায়িকগণের প্রত্যেককে ৫ মাস দেওয়ানী আটকাদেশ প্রদান করা হলো। দেওয়ানী আটকাদেশ কার্যকর করার নিমিত্তে আইনের ৩৫ ধারার বিধান মোতাবেক ২,৩ ও ৫ নং আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এড. শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তারা দীর্ঘ ৩০ বছর এই মামলার ৬৭কোটি টাকা খেলাপী ঋণ পরিশোধ না করায় আমরা আদালতের কাছে তাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাই। বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
বিএনএনিউজ/ নাবিদ/এইচমুন্নী